গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও অংশুমান রায়ের সুর করা জনপ্রিয় এ গানটি যার পরিকল্পনায় প্রথম কলকাতার আকাশবাণীতে প্রচারিত হয়, সেই উপেন তরফদার আর নেই।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের এ বেতার সৈনিক।
১৯৩৬ সালে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে জন্ম উপেন তরফদারের। পরে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং ১৯৫৪ সালে আকাশবাণীতে যোগ দেন।
২০১৪ সালে বাংলানিউজের সঙ্গে সাক্ষাতকারে উপেন তরফদার স্মৃতিচারণ করেন আকাশবাণীতে গানটির প্রচারের। তিনি বলেন, ‘... তখন আকাশবাণীর সংবাদপাঠক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে জানিয়েছিলেন তার বাড়িতে এসেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত চারুশিল্পী কামরুল হাসান। খবরটি পেয়েই টেপ রেকর্ডার নিয়ে ছুটেছিলাম দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ’
‘গিয়ে দেখি সেখানে আছেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, লোকসঙ্গীত শিল্পী দীনেন্দ্র চৌধুরী এবং অংশুমান রায়সহ অনেকে। কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনার পর এবং কামরুল সাহেবের সাক্ষাৎকার নেবার পর উঠে আসবো বলে ঠিক করেছি। তখন অংশুমান রায়, কামরুল সাহেবকে ‘আমার বাংলাদেশ’ নিয়ে গৌরীদার লেখা একটা গানটা শোনাতে চাইলো। ’
স্মৃতি হাতড়ে উপেন তরফদার বললেন, ‘গান হবে কিন্তু হারমোনিয়াম তবলা কোথায়? ওই বাড়ির নিচেই থাকতেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঘর থেকে হারমোনিয়াম আনা হলো। কিন্তু তবলা? একটা বাঁধানো মোটা খাতার উপর আঙুল ঠুকে দিব্যি সেটাকে তবলা বানিয়ে ফেললো দীনেন্দ্র চৌধুরী। এক উপস্থিত বুদ্ধি এলো মাথায়। আমিও চট করে গানটি রেকর্ড করে নিলাম। ৭ই মার্চ রমনা ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ভাষণের কিছু অংশের সঙ্গে গানটি বাজান হল আকাশবাণীতে। মানুষের উৎসাহ, আবেগে তৈরি হলো ইতিহাস। ’
শুধু আকাশবাণীতে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচারই নয়, মুক্তিযুদ্ধের খবর সংগ্রহের জন্য পথে পথে টেপ রেকর্ডার নিয়েও ঘুরেছেন উপেন তরফদার।
মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এছাড়া যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনও উপস্থিত থেকে খবর সংগ্রহ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০
ভিএস/এবি