ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

করোনাকালে দুই বাংলাকে স্বস্তি দেবে না ‘আম্পান’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২০
করোনাকালে দুই বাংলাকে স্বস্তি দেবে না ‘আম্পান’ ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যেই দুই বাংলার আকাশে ঘনিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মেঘ। ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বলা হচ্ছে, গত বিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় এটি।

ঘূর্ণিঝড়টি এরইমধ্যে সুপার সাইক্লোন রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বুধবার সকাল ৬টা থেকে মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

যদি পূর্ণ শক্তি নিয়ে সাইক্লোনটি উপকূলে আঘাত হানে তবে দুই বাংলার বেশকিছু অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।  

তথ্য বলছে, ১৯৯৯ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ‘সুপার সাইক্লোন’ একরকম ধ্বংস করে দিয়েছিল ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যকে। এবারও তেমন ভয়ঙ্কর রূপের সাক্ষী হতে পারে দুই বাংলা। দুই বাংলার নিরিখে যাকে বলা হচ্ছে আইলার চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে ‘আম্পান’। ফলে চলমান করোনাকালের মধ্যেই এক অশনি সংকেত এই ঘূর্ণিঝড় আম্পান।

মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাতাসে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আর্দ্রতা এবং গুমোট গরম।

দিল্লির ‘মৌসম ভবন’ সূত্রে জানা গেছে, এদিন বিকেল থেকেই প্রবল ঝড়-বৃষ্টি শুরু হতে পারে পশ্চিমবাংলায়। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে তৈরি এই ঘূর্ণিঝড়ের বেগ রয়েছে সর্বোচ্চ ২২০ থেকে ২৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, যা স্থলভাগে এসে ১৬৫ থেকে ১৯৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানতে পারে।

মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় আম্পানের গতিবেগ থাকবে ১৬৫ কিলোমিটার। পরবর্তীতে ফের গতি বাড়িয়ে ১৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হতে পারে। ফলে রাজ্যের মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পারে এই ঝড়ের। উত্তাল হবে সমুদ্রও। প্রায় ৪-৬ ফিট, এমনকি দোতলা বাড়ির সমান হতে পারে ঢেউয়ের উচ্চতা।

কলকাতা আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর গণেশ কুমার দাশ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করবে। এ সময় হাওয়ার বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। হাওড়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার। এরপর থেকেই হাওয়ার বেগ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। যার জেরে বুধবার (২০ মে) সকাল থেকে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে এবং বৃহস্পতিবার (২১ মে) নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনার কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

ফলে দুই আবহাওয়াবিদের মতে, প্রবল শক্তি নিয়ে বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে রাজ্যের দীঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে আম্পান।

এমন অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আম্পানের মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত আছে। রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে এবং প্রতিটা জেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ঝড়ে ক্ষতি হতে পারে এমন এলাকা থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে এলাকাবাসীদের। যথা সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষজনকে রাখতে।  

এছাড়া বিশেষ করে কলকাতায় সব বিপজ্জনক গাছ, উঁচু ভবন এবং হোর্ডিংয়ে নজর রাখবে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। পর্যাপ্ত পরিমানে গ্যাস কাটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে গাছ কাটার জন্য। কারণ দেখা গেছে, কলকাতা জেলায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গাছ পড়ে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের ১৭টি ন্যাশনাল ডিজাসটার ফোর্স (এনডিআরএফ) টিম কাজ শুরু করেছে। এরমধ্যে এনডিআরএফের ৭টি দলকে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলিতে। বাকি ১০টি টিম কাজ করছে উড়িষ্যার পুরী, ভুবনেশ্বর, জাজপুর, ময়ুরভঞ্জসহ একাধিক জায়গায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২০
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।