ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পূর্বাভাস মিললে সিডর-আয়লাকে হার মানাবে আম্পান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২০
পূর্বাভাস মিললে সিডর-আয়লাকে হার মানাবে আম্পান

কলকাতা: প্রবল শক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলী অঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। বুধবার (২০ মে) দুপুরের পর দীঘার সমুদ্র থেকে বাংলাদেশের হাতিয়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে এ ঝড়। 

কলকাতার আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২০০৯ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া আয়লা কিংবা ২০০৭ সালের সিডর থেকেও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে আম্পান। সেসময় কলকাতায় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে বয়ে গিয়েছিল আয়লা।

দুই ঝড়েই দুই বাংলায় ব্যাপক প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি হয়।  

তবে এবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী আম্পান যখন স্থলভাগে আঘাত হানবে সে সময় কলকাতায় ঝড় বইতে পারে ১১০ থেকে ১৩০ কিমি বেগে। ফলে স্বভাবতই উদ্বিগ্ন শহরবাসী থেকে প্রশাসন। সে মুহূর্তে শহর কলকাতা কীভাবে মোকাবিলা করবে তা সময় বলবে। কারণ কলকাতার বড় সমস্যা বিশাল বিশাল গাছ, পুরনো ঐতিহাসিক উঁচু ভবন, বিশালাকার হোর্ডিং।

পুরো বিষয়ের ওপর নজর রাখছে কলকাতার করপোরেশনের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। পর্যাপ্ত গ্যাস কাটার, করাত, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি মজুদ করতে শুরু করেছে তারা। এছাড়া বুধবার সকাল থেকেই উঁচু ভবনের বাসিন্দাদের নামিয়ে আনা হতে পারে।

কলকাতা আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় কর্মকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরে আরও শক্তি বৃদ্ধি করে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। তীব্র গতিতে পশ্চিমবাংলা ও বাংলাদেশের দিকেই ধেয়ে আসছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান উড়িষ্যার পারাদ্বীপ থেকে প্রায় ৪২০ কিমি, পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে প্রায় ৫৫০ কিমি দূরে।

বুধবার যখন বিকেল বা সন্ধ্যায় সুন্দরবনের গা ঘেঁষে অতিক্রম করবে তখন আম্পানের গতি কমে ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আর সে সময় শহর কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ ১১০ থেকে ১৩০ কিমি থাকতে পারে।

আম্পানের জেরে মঙ্গলবার বিকেলের পর দুই ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে ঝড়বৃষ্টির পরিমাণ অনেকটা বাড়বে। কলকাতা ও হাওড়া, হুগলিসহ জেলাগুলির কিছু অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। জমবে পানি। হবে বন্যা।

প্রতি মুহূর্তে আম্পানের গতিবিধির ওপর নজর রেখে চলেছে আবহাওয়া দফতর। ফলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস জানান দিচ্ছে, দুই বাংলার কাছে এক ভয়ঙ্কর অশনিসংকেত এই আম্পান।  

কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুরে আম্পানের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৩০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। অন্যদিকে দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৯৫ কিমি বেগে আছড়ে পড়তে পারে আম্পান। পূর্বাভাস বলছে, বাংলাদেশের চেয়ে পশ্চিমবাংলায় বেশি ক্ষতি হবে।
 
এরই মধ্যে আম্পানের প্রভাবে দীঘার সমুদ্র উত্তাল হতে শুরু করেছে। কোমর বেঁধে নেমেছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিপর্য়য় মোকাবিলা বাহিনী। চলছে সতর্কতামূলক মাইকিং। আম্পানের সতর্কতায় রাজ্যের সুন্দরবন এলাকাসহ প্রায় ৩ লাখ মানুষকে সরিয়ে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিটা জেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রশাসন সবরকমভাবে এই সাইক্লোনের জন্য তৈরি আছে। নবান্নতেও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের ১৭টি ন্যাশনাল ডিজাস্টার ফোর্স (এনডিআরএফ) টিম কাজ শুরু করেছে। এরমধ্যে এনডিআরএফ-এর ৭টি দলকে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলিতে। বাকি ১০টি টিম কাজ করছে উড়িষ্যার পুরী, ভুবনেশ্বর, জাজপুর, ময়ুরভঞ্জসহ একাধিক জায়গায়। জায়গায় চলছে ত্রিপল, চাল-ডালের ত্রান বিলি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২০
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।