ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে পঙ্গপাল হানার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সরকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
পশ্চিমবঙ্গে পঙ্গপাল হানার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সরকার

কলকাতা: ভারতে ইতোমধ্যে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের ১৫টি জেলায় হানা দিয়েছে ফসলখোকো পোকা পঙ্গপাল। তাদের গতিপ্রকৃতি দেখে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন,  কয়েকদিনের মধ্যে রাজধানী দিল্লিতেও ঢুকে পড়তে পারে। যার জেরে কেবল খাদ্যশস্য নয়, অনেক কিছু ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। তাই পঙ্গপাল তাড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যের ৫০টি জেলায় হাই অ্যালার্ট জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওইসব রাজ্যগুলির কৃষি দপ্তেরর সঙ্গে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের চলছে দফায় দফায় বৈঠক।

তবে পশ্চিমবাংলায় পঙ্গপালের হামলার এখনও কোনো সতর্কবার্তা জারি করেনি ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়।  পশ্চিমবাংলার কৃষি দপ্তরের কর্মর্তারা বলছেন, রাজ্যে হামলার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত পঙ্গপালের গতিবিধির উপর বিশেষ নজর রাখছে রাজ্যের কৃষি দপ্তর।

বিগত কয়েক দশকের মধ্যে পশ্চিমবাংলায় পঙ্গপালের আক্রমণের কোনো নজির নেই। তবে ইতোমধ্যে ভারতের রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্যে ফসলের উপর হামলা করেছে মরুভূমিতে জন্ম নেওয়া এই পঙ্গপালের দল।

পশ্চিমবাংলার কৃষি দপ্তরের মতে, ভারতের ওইসব রাজ্যগুলির তুলনায়, পঙ্গপালের হামলার আশঙ্কার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ একটু সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারণ, পঙ্গপালের আক্রমণের মূল লক্ষ্য সবুজ ফসলে ভরা জমি। ওটাই তাদের খাদ্য। মূলত এই সময়ে রাজ্যের জমিতে ফসলের পরিমাণ খুবই কম। বোরো ও রবি ফসলের বেশিরভাগটাই তুলে নেওয়া হয়েছে। বাকি যা ছিল তা আম্পানের কারনে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার বর্ষা এলে আমন ধানের চাষ শুরু হবে। ফলে রাজ্যের জমিতে এখন সবুজ ফসল নেই।

তাছাড়া পঙ্গপালের দলকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে হলে উত্তরপ্রদেশ পেরিয়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যের জেলাগুলি পার করে তবেই ঢুকতে হবে। আবার ওইসব রাজ্যের নিরিখে জেলাগুলোর মাঠে ফসলের পরিমাণ অনেক কম। এই পরিস্থিতি দেখে পঙ্গপালের ঝাঁক পশ্চিমবাংলায় না এসে অন্য কোনো দিকেও বাঁক নিতে পারে। এছাড়া দীর্ঘপথে আসার সময় প্রচুর সংখ্যায় পঙ্গপাল পথেই মরেও যায়।

তবুও রাজ্যকে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিশেষজ্ঞরা। কারণ যদি পঙ্গপাল চলে আসে, তাহলে যেটুকু ফসল মাঠে আছে তার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

তবে পঙ্গপাল প্রতিরোধের পথও আছে। মাঠে থাকা ফসলে বিশেষ রাসায়নিক প্রয়োগ করতে হবে। এই জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে পারে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। তাই পঙ্গপাল সামলাতে লন্ডন থেকে আনা হচ্ছে ৬০টি অত্যাধুনিক কীটনাশক স্প্রে যন্ত্র। নিয়োগ করা হয়েছে ২০০ জন পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রক বিশেষজ্ঞ।

মূলত পূর্ব আফ্রিকা থেকে আসা পঙ্গপাল পাকিস্তান হয়ে সাধারণত প্রতিবছর রাজস্থানে ফসলের ক্ষতি করে। তবে ওখান থেকেই বিদায় নেয় তারা। কিন্তু এবার লকডাউনের জেরে আবহাওয়া বদল হওয়ায় তা রাজস্থানের জয়পুর জেলা হয়ে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি পর্যন্ত চলে এসেছে। এমনকি মহারাষ্ট্রের বিদর্ভতেও দেখা গেছে পঙ্গপালের দল। তাদের গতিপ্রকৃতি বলছে দিল্লি দখলের দিকে এগোচ্ছে তারা। তাই নড়েচড়ে বসেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসবে না এমন আশঙ্কা কোনোভাবেই উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজ্যের কৃষি দপ্তর। তাই প্রতিমুহূর্তে মমতার সরকার নজর রেখেছে পঙ্গপালের গতিপ্রকৃতির দিকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২০
ভিএস/এএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।