ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

চীনা রেস্তোরাঁ বর্জনের ডাকে বিপাকে কলকাতার চীন বংশোদ্ভূতরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
চীনা রেস্তোরাঁ বর্জনের ডাকে বিপাকে কলকাতার চীন বংশোদ্ভূতরা

কলকাতা: ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনায় সম্প্রতি চীনা খাবার বয়কটের ডাক দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠওয়ালে। এ প্রসঙ্গে টুইটারে আঠওয়ালে লেখেন, চীন এমন একটি দেশ, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। চীনের সমস্ত পণ্য বয়কট করা উচিত ভারতের। চীনা খাবারও বয়কট করা হোক। যেসব রেস্তোরাঁয় চীনা খাবার বিক্রি করা হয়, তা বন্ধ করা দেওয়া হোক। শুধু এ মন্ত্রীই নন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে অনেক রাজ্যেই রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষরা চীনা পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে চলেছেন। 

সীমান্ত উত্তেজনা ও করোনা পরিস্থিতিতে চীনা পণ্য, খাবার, রেস্তোরাঁ বর্জনের এসব ডাকে ভারতের অনুগত হলেও বিপাকে পড়েছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কলকাতায় বাস করে চলা চীনা বংশোদ্ভূতরা। যদিও বর্তমানে তারা ভারতীয় নাগরিক।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনার ঘটনায় তারা চীন সরকারের বিরুদ্ধেও সরব হন।  

কলকাতার সায়েন্স সিটির বিপরীতে চায়না টাউনে এই চীনা সম্প্রদায়ের বাস। চায়না টাউনের প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই আছে রেস্তোরাঁ। চীনাদের খাবারের স্বাদ নিতে সারা বছরই কম-বেশি ভিড় লেগে থাকে চায়না টাউনে। কিন্তু সীমান্ত উত্তেজনা, করোনা পরিস্থিতি সব মিলিয়ে বর্তমানে তারা ভালো নেই।  

বাংলা নিউজের পক্ষ থেকে কথা হয়য় চায়না টাউনের কয়েক চীনা পরিবারের সঙ্গে।  

ভারতের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে তারা জানান, চীনা সম্প্রদায় হলেও তারা ভারতবাসী। চীনা সংস্কৃতির প্রতি তাদের ভালোবাসা থাকেলও ভারতীয় স্বার্থের প্রশ্নে তারা চীনের যে কোনো অন্যায় আচরণে অন্য আট-দশজন ভারতবাসীর মতই অবস্থান বোধ করেন। কিন্তু সম্প্রতি চীনা পণ্য, খাবার, রেস্তোরাঁ বর্জনের ডাকে তারা বিপন্ন বোধ করছেন, কেননা এতে করে তাদের রেস্তোরাঁগুলোর ব্যাপারে মানুষের অনীহা তৈরি হবে। এমনিতেই করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা না হওয়ায় তারা আগের চেয়ে বিপন্ন। এর মাঝে চীনা রেস্তোরাঁ বর্জনের ডাক যেন মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা।

কলকাতার চায়না টাউনে কালী মন্দির।  ছবি- বাংলানিউজ

এসব প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতেই উদ্বেগ-আতঙ্কে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল লি পরিবারের। তারা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে বর্তমানে তাদের চাইনিজ খাবারও বর্জন করছেন কলকাতার একাংশের মানুষ। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে? এই রেস্তোরাঁ চালানোই তো আমাদের পেশা। এমনিতেই লকডাউনে আড়াই মাস রোজগার বন্ধ ছিল। এরপরই ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনা।  

লি পরিবারের মতো চায়না টাউনে অনেক চীনা পরিবার আছে, যাদের পূর্বপুরুষরা গত ১শ’ বছর ধরেই ভারতে, বিশেষ করে কলকাতায়। চীনা পদবি থাকলেও, মনেপ্রাণে তারা এখন ভারতীয়।  

চায়না টাউনের কিম লিং রেস্তোরাঁর সত্ত্বাধিকারী পউ হিন জানান, আমরা কোনও বিভেদ চাই না। সাম্প্রতিক সময়ে প্রচুর সাংবাদিক আমাদের এখানে এসে অহেতুক উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করছে। আমরা চিন্তিত এই নিয়ে যে, তারাই না অন্যান্য ভারতবাসীর সঙ্গে আমাদের বিভেদ তৈরি করে দেয়।  

গোল্ডেন জয় রেস্তোরাঁর ম্যানেজার রকি। তিনি বলেন, আমরা কলকাতায় ভালো আছি, ভালোই থাকতে চাই। গোটা ভারতের মধ্যে এখানেই ‘চাইনিজ কালীমন্দির’ রয়েছে। সেখানে অন্যান্য অনেক ভারতীয়র মতোই আমরাও কালী মায়ের পুজো করি। লাদাখের ঘটনায় আমাদের কেউ চীনা ভেবে যেন ভুল না করে। ভারতই আমার দেশ।

চায়না টাউনের রেস্তোরাঁ মালিকরা চান, কোনো বিভেদ বোধ না করে মানুষ আগের মতই তাদের রেস্তোরাঁয় খাবারের স্বাদ নিতে আসুক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
ভিএস/এইচজে  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।