ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

চীনকে বাণিজ্যিক ধাক্কা দেয়ার প্ল্যান মোদী সরকারের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩২ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২০
চীনকে বাণিজ্যিক ধাক্কা দেয়ার প্ল্যান মোদী সরকারের

কলকাতা: ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাত আপাতত থামলেও তার রেশ রয়েছে ভারতের অভ্যন্তীরণ বাজারে। দেশজুড়ে চীনাপণ্য বয়কটের হিড়িক উঠেছে। এই সুযোগেই বেজিংকে প্যাঁচে ফেলতে ভারতীয় পণ্যের ই-কমার্স ব্যবসা খোলার নীল নকশা তৈরি হচ্ছে। আপাতত দেশজুড়ে এক কোটি ভারতীয় পণ্য ব্যবসাকে এই পরিকল্পনার আওতায় আনছে কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স।

মূল লক্ষ্য, আগামী বছরের মধ্যে এক লাখ কোটি রুপি চীনা পণ্য আমদানি রুখে দেওয়া। পাশাপাশি চীনা সংস্থার হয়ে প্রচার না করার আর্জি নিয়ে বলিউডের তারকাদেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওই সংগঠন।

মুলত, দেশটিতে যে কয়টি ই-কমার্স সংস্থা আছে, তারা ভারতীয় সামগ্রীর পাশাপাশি চীনা পণ্য বিক্রি করে। এই পরিস্থিতিতে দেশীয় ব্যবসায়ীদের অন্যতম বড় সংগঠন কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারতীয় পণ্যের জন্য আলাদা ই-কমার্স ব্যবসা খোলা হবে। সেখানে ঠাঁই পাবে ছোট-বড় সব ব্যবসাদার। এমনকি ঠাঁই পাবে পাড়ার দোকানগুলোও।

সংগঠনের মহাসচিব প্রবীণ খান্ডেলওয়াল জানিয়েছেন, আগামী ১৫ জুলাই ওই ই-কমার্স ব্যবসা চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারত ই-কমার্স’।

পাশাপাশি সংগঠনের মহাসচিব জানান, এই সংগঠনের আওতায় আছে সাতকোটি ট্রেডিং সংস্থা। যার মধ্যে আছে ৪০ হাজার ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য। ফলে ভারত ই-কমার্স নামে যে ব্যবসার নকশা তৈরি হচ্ছে, তাতে বিপুল সাড়া পড়বে বলে আশা করছেন সংগঠনের তরফে। ফলে প্রস্তুতিও পুরোদমে শুরু করে দিয়েছে তারা। সংগঠনের আশা, ২০২১ সালের মধ্যে এক কোটি ভারতীয় ব্যবসায়ীকে এই ছাতার তলায় আনা হবে। যার জেরে দেশীয় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই উপকৃত হবেন।

পাশাপাশি চীনা সংস্থার প্রচার বন্ধের জন্য একাধিক বলিউড তারকাদের কাছে আর্জি জানিয়েছে কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স। তাদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেতা আমির খান, রণবীর কাপুর, রণবীর সিং, সালমন খান, আয়ুষ্মান খুরান। আছেন অভিনেত্রী সারা আলি খান, দীপিকা পাড়ুকোন, ক্যাটরিনা কাইফ, শ্রদ্ধা কাপুরের মত তারকারা। অনুরোধ করা হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলির কাছেও। ইতোমধ্যে হরভজন সিংয়ের মতো ক্রিকেটার চীনা পণ্যের প্রচার না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন।

অপরদিকে, ভারত সরকার স্থির করেছে যেসব চীনা পণ্য ভারতে আসে সে সব পণ্য তালিকাভুক্ত করে চড়া আমদানি শুল্ক বলবৎ করা। এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই কার্যকর করা শুরু হয়ে গেছে।

ভারত সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অব রেভিনিউ’ চীন থেকে আসা ফ্ল্যাট রোলড স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং জিঙ্কের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। পাশাপাশি স্থির হয়েছে, চীন থেকে ভারতে আসা সোলার প্যানেলের উপকরণের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। এছাড়া তালিকায় চীনা পণ্যকে দুটি ভাগে ভাগ করে অন্তত ৩০০টি চীনা পণ্যকে নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। যে পণ্যগুলোর ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের প্ল্যান করা হবে সেগুলোর মধ্যে থাকবে ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স এবং মেডিক্যাল উপকরণ। ইতোমধ্যেই চীনা ফার্নিচার, খেলনা এবং ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের ওপর নতুন কর বসেছে।

এরমধ্যে অর্ধেক পণ্যের ওপর আরোপ করা হবে আমদানি শুল্ক। আর বাকিগুলোর ওপর সরাসরি ট্যাক্সের বোঝা চাপানো না হলেও চালু হতে পারে লাইসেন্স প্রথা। অর্থাৎ যে পণ্যকে ভারতে পাঠাতে এতদিন কোনো বিশেষ লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ত না, এবার তার ওপরও শর্ত চাপতে চলেছে দেশটির সরকার।

এছাড়া আগামীদিনে শুল্ক চাপানোর কথা ভাবা হচ্ছে চীনা বস্ত্রশিল্পেও। মঙ্গলবার (২৩ জুন) ভারত সরকার ঘোষণা করেছে, সরকারি কেনাবেচার ক্ষেত্রে সব প্রোডাক্টের প্যাকেটে লিখে দিতে হবে নির্মাতা দেশের নাম। ফলে একদিকে ভারত ই-কমার্স নামে নতুন প্ল্যান কষেছে অপরদিকে চীনাপণ্য ওপর অতিরিক্ত শুল্ক লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চীনকে প্রবল ধাক্কা দেওয়ার প্ল্যান করেছে মোদী সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২০
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।