কলকাতা: ‘শ্রীরামচন্দ্রের পত্নী সীতাকে রাক্ষস রাবণ যখন হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে যান, তখন পত্নীকে খুঁজে না পেয়ে ভাই লক্ষণকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন শ্রীরামচন্দ্র। আর দুঃখ করে বলতে থাকনে সীতা জ্ঞান, সীতা ধ্যান, সীতা চিন্তামনি/সীতা ছাড়া আমি যেন মণি হারা ফণী।
পশ্চিমবঙ্গে কেনাকাটার অন্যতম কেন্দ্রস্থল কলকাতার নিউমার্কেট। যা মধ্য কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় অঞ্চল। এখানে পাইকারি এবং খুচরা দুইভাবে পণ্য পরিষেবা পেয়ে থাকেন ক্রেতারা। এবং যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান বা যেকোনো সম্প্রদায়ের উৎসবে কেনাকাটার অন্যতম পীঠস্থান এই নিউমার্কেট। বলা হয়, এখানে আলপিন টু অ্যালিফ্যান্ট সবই পাওয়া যায়।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বছরে দুই ঈদে এই অঞ্চল পুরোপুরি চলে যায় প্রতিবেশী বাংলাদেশিদের দখলে। বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের আগে ও পরে সবমিলে এই মার্কেট ৮০ শতাংশ চলে যায় বাংলাদেশিদের দখলে। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাংলাদেশিদের আনাগোনা লেগেই থাকে নিউমার্কেটে। কিন্তু এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। লকডাউনে পাল্টে গেছে এই অঞ্চলের চিত্রটা। একেবারে মণি হারা ফণীর মতো!
লেডিস গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সুব্রত মন্ডলের কথায়, নিউমার্কেটে ঈদের সময় মোট ক্রেতার ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি। বাকি ২০ শতাংশ আসেন কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চল থেকে। তবে কলকাতাবাসী কেনাকাটা করেন না? করেন। তবে তাদের পছন্দ শপিং মল আর অনলাইন। ফলে রমজানের পরে এই ঈদেও আমাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে।
বাংলাদেশিদের কাছে অতি পরিচিত থ্রি-পিসের দোকানের কর্মচারী রাজেশ তিওয়ারি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দোকান সম্পূর্ণটাই বাংলাদেশি নির্ভর। এখানে ঈদ ছাড়া বিয়ের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোর কেনাকাটা করেন। যেহেতু এবারে বাংলাদেশিরা আসতে পারছেন না, ব্যবসাও হচ্ছে না। ঘরে বসে কী করব? দোকান খুলে রাখা মানে টাইম পাস বলতে পারেন।
বছরে ১২ মাস এসব অঞ্চলে ৬০ শতাংশ বাংলাদেশির আসা-যাওয়া। বাকি ৪০ শতাংশ আসেন নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে। কিন্তু এবার আসার সে সুযোগ নেই। ফলে এবারে উৎসব আছে, আমেজ নেই। আনন্দ আছে, আবেগ নেই। সব রং ফিকে করে দিয়েছে একটি শব্দ, যার নাম করোনা ভাইরাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২০
ভিএস/টিএ