কলকাতা: চলতি বছরের ৩ জুন পশ্চিমবঙ্গের প্রসাশনিক ভবন নবান্নে আচমকা হাজির হয়েছিলেন ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ কামরায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথন চলে।
কিন্তু গত শনিবার (২২ আগস্ট) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, ৩ জুন রাজ্যে স্কুল গড়ার জন্য শাসকদল তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দিতেই গিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী।
সূত্রে জানা গেছে, জুনের ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারই হাতে জমি ফেরতের চিঠি দিয়ে এসেছিলেন সৌরভ। তবে দু’পক্ষের কেউই সেই দিন ওই বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেননি। বলা হয়েছিল, বৈঠক নয় সৌজন্য সাক্ষাৎ।
তবে কোনো পক্ষ মুখ না খুললেও সৌরভের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জগতে তার বড় কোনো সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস কি-না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। তবে এক্ষেত্রেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
সৌরভের রাজনীতিতে আসা, বিজেপিতে যোগদান, এমনকি ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ এবং জিতলে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে পারেন ‘দাদা’, এমন গুঞ্জন কিন্তু দিল্লি টু কলকাতা কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। তবে সত্যি না মিথ্যা, তা তো সময় বলবে।
তবে এ মুহূর্তে ক্রিকেটের ময়দান ছেড়ে দাদা এখন রাজনীতির মুখরোচক ময়দানের বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন। যদিও এ নিয়ে সেভাবে কোনো মিডিয়া বা তারকারা, কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। সহসা বলবেন বলেও মনে হয় না। তবে ‘দাদা’র বিজেপিতে যোগ দেওয়া আর পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার গুঞ্জন ক্রমশ অর্থবহ হয়ে ওঠার পেছনে অবশ্যই কিছু কারণ আছে।
এরমধ্যে বিশেষ করে দু’টি কারণ ইন্ধন জুগিয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মনে। সম্প্রতি সৌরভের জন্মদিন গেছে। সেদিন দাদার স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেছিলেন, ‘সৌরভ রাজনীতিতে যোগ দিলে শীর্ষস্থানেই থাকবেন’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তথা বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অরবিন্দ মেনন। তিনি সৌরভের জন্মদিনের এক শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছিলেন, ‘সৌরভ তার টিমকে লড়াই করতে শিখিয়েছিলেন’।
ডোনা গাঙ্গুলী সৌরভের সবচেয়ে কাছের জন। তার পর্যবেক্ষণ বা বক্তব্য একেবারে ফেলনা নয়! একইভাবে বিজেপি নেতা অরবিন্দ মেনন যে কায়দায় দাদাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাও যথেষ্টই তৎপর্যপূর্ণ। এবং লক্ষণীয় বিষয়, ডোনা এবং অরবিন্দ দুই হেভিওয়েটের বক্তব্যেই সৌরভের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা এবং শীর্ষ দায়িত্বে বসার যোগ্যতা প্রশংসিত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কোথাকার পানি কোথায় গড়াবে, সেটা সময় বলবে।
তবে এটা বাস্তব সৌরভের সঙ্গে বাঙালির বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের আবেগ জড়িয়ে আছে। বঙ্গ রাজনীতিতে ‘দিদি’র রাজনৈতিক বিভাজনে বিভক্ত হলেও সৌরভকে নিয়ে তা নেই। বরং বলা চলে, বাঙালির কাছে দাদার আবেগ জাতপাত, ধর্ম-বর্ণ, রাজনীতির ঊর্ধ্বে। ফলে কেন্দ্রের শাসক দল দাদাকে রাজনীতির মুখ করতে উঠেপড়ে নামতেই পারে। কিন্তু দাদা তাতে কতটা সায় দেন, সেটাই দেখার।
তবে ময়দান ছেড়ে, দাদাগিরির মঞ্চ পার করে রাজনীতিতে দাদাগিরি দেখালে বাঙালি তা সাদরে আমন্ত্রণ করবে, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। আবার দাদা কি রাজনীতির জুতোয় পা গলাবেন? কারণ এ গুঞ্জন বাম আমলে, এমনকি ২০১১ সালে মমতা ক্ষমতায় আসতেও একই গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু কেউই এ বিষয়ে দাদার টিকিও ভেজাতে পারেনি। সবার সঙ্গেই দাদার সম্পর্ক মধুর!
যদিও এবারে বিষয়টা ভিন্ন! অক্টোবরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বে আসার সময় থেকে বিজেপির শীর্ষস্তরে, বিশেষ করে অমিত শাহ এবং তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সৌরভের যোগাযোগ এবং হৃদ্রতা অনেকটাই বেড়েছে। এই বোর্ডের সচিব অমিত শাহের ছেলে জয়। সভাপতি এবং সচিবের মধ্যেও সম্পর্ক যথেষ্ট মধুর।
এ পরিস্থিতিতে রাজ্যে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের দৌড়ে বিজেপির মুখ হিসাবে সৌরভের নাম ভেসে ওঠা একেবারে কাকতালীয়, তা বলা যায় না। কারণ কয়েকদিন আগেও দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে দলের মুখ বা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সৌরভের নাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাথায় নেই ভাবলে ভুল করা হবে। বিষয়টি পরিণতি পেলে যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে। ’ এ রকম নানা সমীকরণ সৌরভকে এগিয়ে রাখছে বিজেপির ঝুলিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২০
ভিএস/টিএ