কলকাতা: দক্ষিণ ভারতের ব্যঙ্গালোরে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন পশ্চিমবঙ্গের আরামবাগ জেলার খানাকুল এলাকার বিমল সাঁতরা। লকডাউনের পর বাড়ি ফিরে আসেন।
এবার বৃষ্টি ভালো হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন বিমল। তবে শুধু বিমল নয়, একইভাবে চাষের কাজে শামিল হয়েছেন ওই জেলার বহু পরিযায়ী শ্রমিক। আরামবাগের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ, নদীয়ার মতো জেলাগুলোয় ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা চাষ-আবাদকেই ফের জীবনজীবিকার জন্য বেছে নিচ্ছেন। কৃষিকাজের মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
ফলে চলমান মৌসুমে রাজ্যে অনেকটাই বেড়েছে আমন ধানের চাষ। এভাবেই গ্রামীণ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী রাজ্যের কৃষিদপ্তর। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শেষবার আরামবাগ জেলায় প্রায় সাড়ে ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। এ বছর তা হচ্ছে ৬৫ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে। একইভাবে বেড়েছে বাকি জেলাগুলোতেও।
চাষীদের মতে পরপর দু’বছর চাষের কাজ ক্ষতির মুখে পড়েছিল। প্রথমে বুলবুল ও পরে আমপান চাষের অতিমাত্রায় ক্ষতি করে। তাছাড়া অন্যান্য বছর বর্ষা সময়মতো না আসায় বীজতলা তৈরির কাজেও সমস্যা হতো। এবার যথাসময়ে বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বহু বছর পর এবার এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। রয়েছে কৃষিকাজ করার উপযোগী আবহাওয়াও। তাই এবার ভালো ফসলের আশায় বুক বাঁধছেন চাষীরা।
রাজ্য কৃষিকর্তা সজল কুমার ঘোষ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দীর্ঘ কয়েক মাস টানা লকডাউন চলেছে। ভিন রাজ্য থেকেও পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামে ফিরে অধিকাংশ শ্রমিকের নতুন করে কর্মসংস্থান হয়নি। তাই তারা এবার চাষের কাজে অংশ নিয়েছেন। আবহাওয়াও উপযোগী। আশা করি, ভালোই ফলন হবে। ঘরে অন্তত ধান থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে না।
পাশাপাশি কৃষিদপ্তরের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকরা বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কৃষিতে অংশ নিয়েছেন। যে কারণে এবার অব্যবহৃত কৃষিজমিতেও ধান চাষ হয়েছে। মূলত জুন মাস থেকে আমন চাষ শুরু হয় এবং অক্টোবর মাস থেকে ফসল কাটা শুরু হয়।
রাজ্যের কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা আবহে বাণিজ্য ও শিল্প অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু, গ্রামীণ এলাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিযায়ী শ্রমিকরা চাষের কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। তাই কৃষির মাধ্যমেই গ্রাম বাংলার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২০
ভিএস/এমকেআর