কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। বাকি আর মাত্র দিন ১২ দিন।
অপরদিকে, আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তাই ভোটের আগে করোনাকালেও দুর্গাপূজায় জনসংযোগে পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় কোনো পক্ষই।
শারদোৎসবের প্রথম দিনে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে হাজির করার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য বিজেপি। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ষষ্ঠীর দিন ২২ অক্টোবর বিকেলে একটি ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নরেন্দ্র মোদী। ওই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। নাচে-গানে প্রায় ঘণ্টাখানেক চলবে অনুষ্ঠান। তারপর যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বাঙালির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তিনি। নিয়ম মেনে শারদোৎসব পালনের অনুরোধ করে শুভেচ্ছা জানাবেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের।
এমনিতেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে হিন্দিভাষীদের পার্টি বলে প্রমাণে মরিয়া তৃণমূলসহ বিরোধীরা। তার ওপর এবার উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের রামরাজ্যে প্রকাশ্যে দুর্গাপূজা আয়োজনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যোগী সরকারের বিরুদ্ধেই। এই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে শারদোৎসব নিয়ে সব গুটি বিরোধীদের হাতে তুলে দিতে নারাজ বিজেপি। তাই প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মন জয় করতে চায় রাজ্য বিজেপি।
তবে শধু মোদী নন, পূজার মুখেই রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ি পৌঁছানোর কথা তার। কয়েকটি বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
অপরদিকে, বাঙালির পার্বণে থেমে নেই বাংলার দিদি তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। দেবীর আবাহনের সূচনা কার্যত সোমবার (১২ অক্টোবর) থেকেই শুরু করছেন তিনি। রোববার বিকেলে দলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র উৎসব সংখ্যা প্রকাশ করবেন নজরুল মঞ্চে।
সঙ্গে বাড়তি সংযোজন ‘সৃষ্টি’— পূজার গানের অ্যালবাম। যার সাতটি গানেরই গীতিকার-সুরকার স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্দ্রনীল সেন, রূপঙ্কর, মনোময়, লোপামুদ্রা আর দেবজ্যোতি কণ্ঠ দিয়েছেন এই অ্যালবামে। সেই অনুষ্ঠান সেরে মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে যাবেন কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিমের আয়োজনে পূজা চেতলা অগ্রগামীর দেবী অধিষ্ঠান মণ্ডপে। এবারও দশভুজার ‘চোখ’ আঁকবেন মমতা।
অবশ্য প্রতিবছর পূজার উদ্বোধন পর্বের সব তারকা, মন্ত্রী-আমলাদের ছাপিয়ে এবারও মূল আকর্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। কলকাতাসহ গোটা রাজ্য থেকে প্রতি বছরের মতো এ বছর পূজার পর্বে হাজারো বায়না নিয়ে দিদির কাছে আর্জি নিয়ে এসেছেন তার পূজা আয়োজক ভাইরা।
এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার আমন্ত্রণ এসে পৌঁছেছে প্রশাসনিক ভবন নবান্নের ১৪তলায় মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে। কেউ অনুরোধ করেছেন পূজা উদ্বোধনের, কেউ আবার শুধু শুভেচ্ছাবার্তা পেলেই খুশি। সশরীরে সবস্থানে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বেশির ভাগ ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করবেন মমতা। এমনটাই জানানো হয়েছে নবান্ন থেকে।
পাশাপাশি নবান্ন সূত্রের খবর, করোনাকালে অর্থসঙ্কটে কীভাবে হবে শারদোৎসব? তা নিয়ে পূজা উদ্যোক্তারাও চিন্তিত ছিলেন। সেই সমস্যারাও সমাধান করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ ও প্রশাসনের যাবতীয় শর্ত মেনে যারা পূজার আয়োজন করবে সেই সমস্ত পূজা কমিটিকে অনুদান বাবদ ৫০ হাজার রুপি দেবে রাজ্য সরকার। সঙ্গে বাড়তি পাওনা বিদ্যুৎ, দমকলসহ পূজা আয়োজনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতায় বিস্তর ছাড়।
চলতি বছর এপ্রিলেই ছিল করপোরেশন ভোট। করোনার জন্য বিল পাস করে পিছিয়েছে সেই ভোট। আগামী বছর হবে বিধানসভা ও করপোরেশন ভোট। তার আগেই শারদোৎসব। তাই এক চুল জমি ছাড়তে নারাজ মোদী থেকে দিদি! এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২০
ভিএস/এমজেএফ