কলকাতা: করোনাকালে কলকাতায় ছন্দ কেটেছে সবকিছুর। ঈদ-পুজা কোনো কিছুই স্বাভাবিকভাবে শহরে হয়নি।
এর মধ্যে অন্যমত আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। শহরে নতুন বছরের সূচনা হয় কলকাতা বইমেলা মধ্যদিয়ে। এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। মেলার মাঠে ঢুকলে খাঁ খাঁ করছে চারিদিক। সবুজ ঘাসের মধ্য দিয়ে নদীর মতো বেঁকে যাওয়া বাঁধানো টাইলসের রাস্তাগুলো যেন ঝিম মেরে আছে। সেন্ট্রাল পার্কের বাতাসে এ মৌসুমে শুধুই পাক খাচ্ছে বিষণ্নতা।
সাধারণত, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলার স্টলের কাজ শুরু হয়ে যায়। এসময়টা বইমেলার কর্মকর্তারা থেকে প্রকাশক-লেখক ভুলে যায় নাওয়া-খাওয়া। কিন্তু ৪৫তম বছরে এসে করোনা থাবায় থমকে গিয়েছে সব।
রাজ্যের অন্য জেলাগুলো বইমেলার অনুমতি পেলেও কলকাতার ভাগ্যে কী আছে, কি নিদানি দেবে মমতার সরকার, এখনও কেউ জানে না।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ও বলেই ফেললেন, ‘কী যে হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। যদি আর একটু পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে হয়, হোক। অথবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে জুলাই-আগস্টেও যদি করা যায়, তাই হোক,অন্তত হোক। অনেক প্রকাশকের সারাবছরের উপার্জন হয় শুধু এ মেলা থেকে। পাঠক চেনেন উদীয়মান লেখকে। এবার কী যে হবে বোঝা যাচ্ছে না!’
এরপর কলকাতায় বইমেলা হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা থাকে বাংলাদেশ বইমেলা। ২০১১ সালে বাংলাদেশ বইমেলার পথচলা শুরু। সূচনালগ্নে বইমেলাটি অনুষ্ঠিত হতো গগনেন্দ্র প্রদর্শশালার ঘরে। শুরু হলেও নির্দিষ্টস্থানে মেলাটিকে রাখা যায়নি। বারংবার পরিবর্তন হয়েছে স্থান ও সময়। পরে নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বর ঘুরে রবীন্দ্রসদনের পশ্চিম পাশে মোহরকুঞ্জ প্রাঙ্গণে গতবার শেষ হয়েছে বাংলাদেশ বইমেলা। তবে করোনার কারণে এ বছর হয়নি বাংলাদেশ বইমেলা। বাংলাদেশ বইমেলার মূল আয়োজক থাকে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। সহযোগিতায় থাকে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস।
আন্তর্জাতিক কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পর আকর্ষণীয় বিষয় থাকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। সম্পূর্ণ বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব কলকাতাবাসীর কাছে নিসন্দেহে এক ভিন্নমাত্রা এনে দেয়। করোনা কবলে তাও হয়নি এ বছর। তবে তৃতীয়বারের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব হতে পারে আগামী বছর। তবে এখনও ঠিক হয়নি আদৌ হবে কি-না!
জনপ্রিয়তার সিরিয়ালে এরপরই থাকে কলকাতার গড়িয়া সংলগ্ন পাটুলি অঞ্চলের অন্যতম বড় উৎসব ‘পাটুলি মেলা’। বিনোদন শিল্প জগতের নামীদামিদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেদার খাওয়া দাওয়া মিলিয়ে এক কথায় দারুণ মনোরঞ্জন। সেইসঙ্গে প্রতিবছর বড়দিন উৎসবে ১০ হাজার বাচ্চাকে উপহার দেওয়া হয় কেক। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এবার আপাতত কোনও উৎসব হচ্ছে না। করোনার কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া কলকাতার কসবা অঞ্চলে শীতকালীন রসনার স্বাদ মেলে ‘পিঠেপুলি উৎসব’ এ। সেটাও এবার হচ্ছে না বলেই খবর। উদ্যোক্তা তথা তৃনমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর সুশান্তকুমার ঘোষ করোনায় ভুগেছেন।
এরপর থাকে মুখ্যমন্ত্রীর এক ভাইয়ের উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিবস উপলক্ষে বিবেক মেলা। টলি-বলি সমাহার কটাদিন উপচেপড়ে ভবানীপুরের হরিশ পার্কে। করোনার কারণে তাও এখনও প্রায় বাতিলের দিকে।
এছাড়া উত্তর কলকাতার অন্যতম দু’টি বড় পাখির মেলার সঙ্গে যুক্ত আয়োজক তরুণ সাহা জানিয়েছেন, মূলত বয়স্ক এবং বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে এ বছর পাখি মেলা আয়োজন করা হচ্ছে না। পাখির মেলায় যে ভিড় হয় তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়।
এছাড়া কলকাতার আরও কয়েকটি অতিপরিচিত উৎসব এবং মেলা এবার করোনার জন্য হচ্ছে না। যদিও রাজ্য সরকার বিধিনিষেধ মেনে মেলা এবং উৎসব পালন করার নির্দেশ দিয়েছে। সে কারণে রাজ্যে সরকারি মেলাগুলো হবে। কিন্তু অন্যান্য উৎসব উদ্যোক্তারা এ অবস্থায় ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
ভিএস/ওএইচ/