ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

যিশুর জন্ম, কেক ও ক্রিস্টমাস ট্রি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
যিশুর জন্ম, কেক ও ক্রিস্টমাস ট্রি

কলকাতা: ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজতেই গির্জায় গির্জায় শুরু হয় প্রার্থনা। গোটা বিশ্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা মেতে ওঠে ক্রিসমাস উদযাপনে।

দিনটিকে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে মেনেই পালন করা হয়। সেই আনন্দে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি, কেক, বিলানো হয় নানা উপহার আর শুভকামনায় মেতে ওঠেন সবাই।

বহু মহামানবের জন্ম হয়েছে মানব সভ্যতা সমৃদ্ধ করতে। কিন্তু কারোর জন্মদিনে সম্ভবত এভাবে দেশ-বিদেশ মিলেমিশে একাকার হয় না। ভারতেও অনেকের বাড়ি সেজে ওঠে আলোয়, ক্রিসমাস ট্রি, তারা, ঘণ্টায়। কেকের দোকানগুলো ভরে ওঠে রকমারি পাম কেক আর পেস্ট্রিতে।  

খ্রিস্টধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৫ ডিসেম্বর বেথেলহেম নগরের এক গো শালায় মা মেরির কোলে ঈশ্বরপুত্রের আবির্ভাব হয়। মানুষের মনে পিতার প্রতি প্রেম (ঈশ্বরপ্রীতি), পারস্পরিক সৌভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা জাগাতে হবে। বিশ্ব থেকে মুছতে হবে হিংসা। এজন্য ক্রুশবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দিতেও দ্বিধা করেননি। তাঁর অনুগামীরা পরে সমাজে খ্রিস্টান হিসেবে পরিচিত হন। ধর্ম ভাগ হয়ে যায় ক্যাথলিক আর প্রোসেস্ট্যান্টে। যিশুর বাণী সম্বলিত গ্রন্থ বিশ্বে প্রকাশ পায় বাইবেল নামে।

তবে ইতিহাস এ-ও বলছে, চতুর্থ শতাব্দীর প্রথমদিকে ক্রিসমাস উদযাপন শুরু হয়। তবে সে সময় দিনটিকে উত্‍সব আকারে পালন করা হতো না। যিশুর জন্ম এবং মৃত্যুর কয়েকশো বছর কেটে যাওয়ার পর ২৫ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করা শুরু হয়। তবে যিশু ডিসেম্বর নয়, অক্টোবরে জন্মেছিলেন- এমন অনেক তথ্য-প্রমাণও রয়েছে।

আবার রোমের ইতিহাসে এমন তথ্যও আছে যে, ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া ডিসেম্বরে সূর্যের কিরণ চেয়ে উপাসনা করতেন অন্য ধর্মের মানুষ। দিনটিকে সূর্যের জন্মদিন হিসেবে উপাসনা করতেন তারা। কয়েকশো বছর পর দুটো উৎসব একসঙ্গে মিশে যায়। এবং ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন হিসেবে উদযাপন শুরু হয়।

তবে বাইবেলে যিশুর কোনো জন্ম তারিখ দেওয়া নেই। ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ যিশুর জন্মের আগে রোমে প্রথম খ্রিস্টান সম্রাটের আমলে ২৫ ডিসেম্বর প্রথম বড়দিন উদযাপিত হয়েছিল। কয়েকবছর পরে পোপ জুলিয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে ওই তারিখকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

সে যাই হোক প্রতিটা মহামানবের জন্ম নিয়ে নানা ধরনের তথ্য ও ইতিহাস থাকে গোটা বিশ্বে। কিন্তু বড়দিন মানেই কেক এমনটাও কিন্তু প্রথম থেকে ছিল না। যিশুর জন্মদিনের অনেক পরে যুক্ত হয় কেকের ঐতিহ্য।

ইতিহাস বলছে, ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে, সাতুরা নামে এক খাদ্যের সহযোগে প্রথম বড়দিন পালন করেন রোমান সম্রাট কনস্ট্যানটাইনের আমলে। আবার ফ্রুট কেকের জনক কিন্তু রোমানরাই। সাতুরা ছিল ওই ধরনের এক বিশিষ্ট কেক। টকমিষ্টি স্বাদের এই খাবার তৈরি হতো যবের গুঁড়ো, শুকনো আঙুর অর্থাৎ কিসমিস, পাইন বীজ, মধু এবং রেড ওয়াইন বা আঙুরের রস দ্বারা নির্মিত মদ দিয়ে। যা পরে গোটা ইউরোপেই বিখ্যাত হয়।

পোপ জুলিয়াস যখন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই তারিখকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন ক্রিসমাসের আগের কয়েকটি সপ্তাহ ধরে সমাজে উপবাস বা রোজার প্রথা ছিল। আর তা ভাঙতো সন্ধ্যায় ওটমিল দিয়ে তৈরি পরিজ খেয়ে। বিশেষ ধরনের এই খাদ্য শুকনো ফল, সুগন্ধি মশলা ও মধু দিয়ে তৈরি হতো। তাতে মাংসও থাকতো।

কিন্তু ষোড়শ শতাব্দীতে ওটমিলের পরিবর্তে জায়গা নেয় ময়দা, মাখন আর ডিম। ভাপা পিঠের মতো তৈরি হয় সিদ্ধ কেক। এর কারণ ময়দার তৈরি খাদ্য রাখা যেত বেশি সময় ধরে। উপবাস ভাঙতো সেই কেক দিয়ে। কিন্তু উনিশ শতকে গোড়ায় মহারানি ভিক্টোরিয়া এই কেক দিয়ে উদযাপন নিষিদ্ধ করেন।

ফলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন বেকারি ব্যবসায়ীরা। তৈরি কেক নষ্ট হলে বড় লোকসান হবে। শরণাপন্ন হন মহারানির। শেষমেশ সবাই মিলে একযোগে সিদ্ধান্ত হলো অন্য দিন বাদে ক্রিসমাসের দিনেই সেগুলি বিক্রি হবে। সেদিন থেকে মিলেমিশে এক হয়ে গেল ক্রিসমাস ও কেক। শুরু হয়ে গেলো নতুন প্রথা, যিশুর জন্মদিবস মানেই কেক।

অনেক পরে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে এ প্রথার সঙ্গে যুক্ত হয় ক্রিস্টমাস ট্রি। ক্রিস্টমাসের দিন মূলত উত্তর ইউরোপে ফার গাছকে এভাবে সাজানো হতো। আরা যারা খুব গরিব ছিলেন তারা কাঠের টুকরো জড়ো করে ত্রিভুজ আকারে গাছের আদলে ঘর সাজাতেন। আস্তে আস্তে এই চল ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। কেক, ক্রিস্টমাস ট্রি, আলো, তারা, ঘণ্টা ধীরে ধীরে আগে পড়ে যুক্ত হয় যিশুর জন্মদিনে। যা ২৫ ডিসেম্বরে গোটা বিশ্ব একত্রিত পালন হয় ক্রিসমাস নামে।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।