ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বিতর্কের মধ্যেই নেতাজীর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২২
বিতর্কের মধ্যেই নেতাজীর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী

কলকাতা: ভারতজুড়ে রোববার (২৩ জানুয়ারি) পালিত হচ্ছে দেশটির স্বাধীনতা দিবসের ৭৫তম বর্ষ এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী। এই দিনেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র উড়িষ্যার কটকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

তবে তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছিল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। তাঁর কর্মকাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী শহর কলকাতা।

দিনটি উপলক্ষে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে সুভাষচন্দ্রের পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, নেতাজীর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে ইন্ডিয়া গেটে গ্রানাইট দিয়ে তৈরি নেতাজীর বিশাল মূর্তি স্থাপন করা হবে। যতদিন না ওই মূর্তি তৈরি হচ্ছে, ততদিন হলোগ্রাম বা থ্রি ডায়মেনশন দ্বারা নেতাজীর মূর্তির প্রতিচ্ছবি থাকবে। এদিন সন্ধ্যায় লেজার রশ্মি দ্বারা সুভাষ বসুর হলোগ্রাম মূর্তির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

অপরদিকে, কলকাতার গড়ের মাঠে দিনটি উপলক্ষে নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয় সময় বেলা ১২.১৫ মিনিটে নেতাজির জন্মক্ষণের মুহূর্তে বেজে ওঠে সাইরেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীকে শঙ্খ বাজাতে দেখা যায়। তারপর নেতাজী মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করেন তিনি। এরপর একে একে নেতাজী মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন নেতাজী পরিবারের সদস্য-সহ বিশিষ্টজনেরা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইচ্ছে ছিল নেতাজীর জন্মদিবসে পদযাত্রা করার, কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। এরপরই মোদী সরকারের নাম না নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যারা ধর্মের নামে দেশ ভাগ করতে চাইছেন, তাদেরকে বলব দয়া করে নেতাজী, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ পড়ে দেখুন। ভাগাভাগি করে, দেশভাগ করে জাতীয়তাবাদ দেখানো যায় না। একটা অমর জ্যোতি নিভিয়ে দিয়ে, নেতাজির মূর্তি বসিয়ে সুভাষকে শ্রদ্ধা জানানো যায় না। কেন এতদিন নেতাজীর মূর্তি তৈরী হয়নি। ওখানে মূর্তি বসেছে আমাদের চাপেই।

গত শুক্রবার(২১ জানুয়ারি) দিল্লির ইন্ডিয়া গেট থেকে সদা প্রজ্বলন ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ সরানো নিয়ে বিরোধিতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হঠাৎ ইন্ডিয়া গেটে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি বসানোর ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, এখানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে শহিদ ভারতীয় সেনাদের স্মরণে ১৯৭২ সালে অমর জ্যোতি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সেই প্রথা চালু করেন। পাশাপাশি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ভারতীয় সেনাদের স্মরণেই এখানে প্রজ্বলিত ছিল অমর জওয়ান জ্যোতি।

তাতে গোড়ায় কংগ্রেসসহ বিরোধীরা থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন। কারণ ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ সরানো নিয়ে আপত্তি তুললেও সুভাষ চন্দ বোসের মূর্তি বসানো নিয়ে আপত্তি করা সম্ভব ছিল না কারুর পক্ষে।

মোদী সরকারের যুক্তি ছিল, ইন্ডিয়া গেট ঔপনিবেশিক ইতিহাসের প্রতীক। ব্রিটিশ সরকারের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ভারতীয় সেনাদের জন্য তা তৈরী করা হয়েছিল। সেখানে ৭১ এর যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্মৃতিতে অমর জওয়ান জ্যোতি থাকতে পারে না। স্বাধীনতার পরে, স্বাধীন ভারতের হয়ে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের জন্য তৈরী ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’এই অমর জওয়ান জ্যোতি থাকা উচিত।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেতা, বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, সুভাষচন্দ্র বসু যদি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতেন, তা হলে আজকে ভারতে এই দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, বেকারত্ব, দেশের ভিতরে থেকে দেশবিরোধী কাজ  -সব বন্ধ হয়ে যেত। মোদীজি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে ভারতবর্ষের রাজধানী দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা বাঙালি হিসাবে গর্বিত। নেতাজীকে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে মর্যাদা দেওয়ায় মোদীজির জন্য সমান ভাবে গর্ব অনুভব করি।

এদিকে কলকাতা করপোরেশও নেতাজীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে মেয়র ফিরবাদ হাকিম। এই করপোরেশনের মেয়র ছিলেন সুভাষ চন্দ্র বোস। ১৯৩০ সালের ২২ আগস্ট থেকে ১৯৩১ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত, মোট ২৩৬ দিন, পরাধীন ভারতে কলকাতার মেয়র ছিলেন সুভাষ বোস। তবে তখন মেয়রদের মতো পদ সামলানো সহজ ছিল না। কলকাতাবাসীর দাবী মেটাতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হত নেতাজীকে। তবে এত কম সময় কলকাতা করপোরেশনের মেয়র থাকলেও, তাঁর কর্মকাণ্ডের ছাপ রয়ে গিয়েছে করপোরেশনের ইতিহাসে। তার অলিন্দে, আসবাবে।

মেয়র থাকাকালীন নেতাজী যে চেয়ারে বসতেন, করপোরেশনে সেই চেয়ারটি এখনও রয়েছে। সারা বছর সুভাষের সেই চেয়ার রাখা থাকে মেয়রের অফিসে ওঠার সিঁড়ির পাশে। ওঠানামা করার সময় কখনো চোখে পড়ে, কখনও আবার চোখে পড়ে না চেয়ারটি। কালের সঙ্গে এতটুকুও গরিমা হারায়নি সুভাষের স্মৃতিবিজড়িত চেয়ারটি। বরং পরের পর প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেয় এই চেয়ারটি। সেই চেয়ারে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করেছেন মেয়র ফিরাদ হাকিম।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২১
ভিএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।