ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

‘এলইডি চিপ তৈরি কারখানা স্থাপনে প্রধান বাধা শুল্ক বৈষম্য’

বিজনেস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৬
‘এলইডি চিপ তৈরি কারখানা স্থাপনে প্রধান বাধা শুল্ক বৈষম্য’

ঢাকা: বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি (লাইট ইমেটিং ডায়োড) বাল্ব তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে এলইডি চিপ। এ চিপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় আট ধরনের উপাদান।

বাংলাদেশে সম্পূর্ণ তৈরি এলইডি চিপ আমদানি করতে ৩০.৭৯ শতাংশ কর দিতে হয়। আর এ চিপ দেশেই উৎপাদন করতে যে আট ধরনের কাঁচামাল প্রয়োজন সেগুলো আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় ৩৬.৭৮ শতাংশ থেকে ১৩০.২৬ শতাংশ পর্যন্ত।

 

এ উৎপাদনবিমুখ শুল্ক বৈষম্যই দেশে এলইডি চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক উদ্যোক্তার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গড়ে উঠছেনা এলইডি চিপ তৈরির কারখানা। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে হাইটেক শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।  

উদ্যোক্তারা জানান, দেশে এলইডি চিপ তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে যে পরিমাণ কর দিতে হবে তার চেয়ে অনেক কম কর দিতে হয় সম্পূর্ণ তৈরি চিপ আমদানিতে। ফলে, উদ্যোক্তারা দেশে এলইডি চিপ তৈরির পরিবর্তে এটি আমদানি করেই প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। এ ধরনের হাইটেক কারখানা স্থাপনে দেশীয় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ থাকলেও কাঁচামাল আমদানিতে বৈষম্যমূলক শুল্ক কাঠামো এ খাতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, এলইডি বাল্ব বা লাইটের প্রধান উপকরণ এলইডি চিপ তৈরিতে প্রয়োজন লিড ফ্রিম, ফসপর, ক্যারিয়ার টেপ, প্লাস্টিক রিল, কভার টেপ, গোল্ড ওয়্যার, ডাই অ্যাটাচ ম্যাটেরিয়াল বা অ্যাডহেসিভ এবং অ্যানক্যাপসুলেশন বা রেসিন।

এর মধ্যে লিড ফ্রিম, ফসপর, ক্যারিয়ার টেপ এবং কভার টেপ আমদানিতে ১০ শতাংশ করে কাস্টমস ডিউটিসহ প্রতিটিতে সর্বমোট কর দিতে হয় ৩৬.৭৮ শতাংশ। গোল্ড ওয়্যার, ডাই অ্যাটাচ ম্যাটেরিয়াল বা অ্যাডহেসিভ, অ্যানক্যাপসুলেশন বা রেসিনের আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কসহ কর দিতে হয় ৬০.০২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কর দিতে হয় প্লাস্টিক রিল আমদানিতে। এতে আরোপ করা হয়েছে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কসহ সর্বমোট ১৩০.২৬ শতাংশ কর।

অন্যদিকে বাইরে থেকে সম্পূর্ণ তৈরিকৃত এলইডি চিপ আমদানিতে সব মিলিয়ে কর দিতে হয় ৩০.৭৯ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এলইডি প্রযুক্তির পণ্য যেমন টিভি, ফ্রিজের লাইট, মোবাইল, ট্যাব এবং কম্পিউটার মনিটরের প্রধান কাঁচামাল হলো এলইডি চিপ। এ শুল্ক বৈষম্যের কারণে আমদানিকৃত এলইডি চিপ দিয়ে তৈরি পণ্যের তুলনায় দেশে তৈরি চিপ দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি পণ্য উৎপাদনে খরচ পড়বে অনেক বেশি। এতে করে, মূল্য প্রতিযোগী সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়বেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। ঝুঁকিতে পড়বে এ খাতের বিনিয়োগ। তাই এলইডি চিপ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।

সানটেক্স ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামসুল আরেফীন সোহেল বলেন, দেশের স্বার্থে এ ধরনের শুল্ক বৈষম্য দূর করা দরকার। সরকার একদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য উৎপাদনের আহ্বান জানাচ্ছে, অন্যদিকে এলইডি চিপ তৈরির কাঁচামালের ওপর অত্যধিক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বর্তমানে আমদানিকৃত চিপ দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে এলইডি বাল্ব, টিভিসহ অনেক ধরনের পণ্য। আবার অনেকে সরাসরি সম্পূর্ণ প্রস্তুত বিভিন্ন এলইডি পণ্য আমদানি করছে। যেহেতু দেশে এলইডি চিপের পূর্ণাঙ্গ কোনো কারখানা এখনো গড়ে উঠেনি, তাই একচেটিয়া ব্যবসা করছেন আমদানিকারকরা। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় নিম্নমানের এলইডি চিপ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য আমদানি করছেন। এতে করে অল্প কয়েকদিন ব্যবহারের পরই নষ্ট হয়ে যায় পণ্য। প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা।

সোহেল আরো বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের এলইডি চিপ থেকে লিড বা সীসা নির্গত হয় অনেক বেশি। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলইডি চিপ বুয়েটে টেস্ট করার জন্য সরকারকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু, তা আর কার্যকর হয়নি।

শামসুল আরেফীন সোহেল আরো বলেন, যদি দেশেই উচ্চপ্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন এলইডি চিপ উৎপাদন কারখানা গড়ে উঠতো, তাহলে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। এতে করে পরিবেশের ক্ষতি যেমন এড়ানো যেতো তেমনি গ্রাহকরাও উচ্চ গুণগতমানের এলইডি পণ্য কিনতে পারতেন।
 
এবিষয়ে এডিবি (এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক) এর বাংলাদেশ পার্টের সাবেক প্রধান অর্থনীতি মুহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ফিনিশড প্রোডাক্টের উপর কর হার বেশি হবে এবং কাঁচামালের উপর কম হবে এটাই স্বাভাবিক। এর ব্যতয় হলে উৎপাদন খাত টেকসই হবে না এবং স্থানীয় উৎপাদন নিরুৎসাহিত হবে।

গত বুধবার সচিবদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, আগামী বাজেটে দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষায় জোর দেওয়া হবে। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, যেসব খাতে সরকার নীতি সহায়তা দিয়েছে সেসব খাত দ্রুত উঠে এসেছে। বিপুল কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অজর্নও সম্ভব হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতে এলইডি চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সহযোগিতা দিয়েছিল সরকার। ফলে, উচ্চ প্রযুক্তির এলইডি পণ্য উৎপাদনে ভারত এখন অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশেও হাইটেক শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় শুল্ক ও নীতি সহায়তা প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে অন্যান্য দেশের তুলনায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।