ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

ফেনীতে পোল্ট্রি ফার্ম থেকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৬
ফেনীতে পোল্ট্রি ফার্ম থেকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ১৮ বছর আগে ১৯৯৮ সালে এলাকার শিক্ষিত যুবক আবুল বাশার লিটন তার কয়েকজন উদ্যমী বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন বন্ধন নামে একটি পোল্ট্রি (মুরগির খামার) ফার্ম।

কিছুদিন পরে এ পোল্ট্রি ফার্ম থেকে গড়ে তোলা হয় বায়োগ্যাস প্লান্ট।

এখন এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে মুরগির খামার চারটি, একটি দুগ্ধ খামার ও তিনটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।

পাঁচ বন্ধু মিলে বেশ কয়েকটি প্লটও কিনেছেন। আগে ভাড়া করা জমিতে খামার পরিচালনা করলেও এখন তারা নিজেদের কেনা জমিতেই খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ কর্মযজ্ঞে শুরু থেকে তার সঙ্গে ছিলেন লিটন ও রফিক আহমদ। পরে যোগ হয়েছেন আব্দুল ওয়াদুদ নাসির, আবুল খায়ের মিলন ও শরীফুল ইসলাম আরিফ। এখন তারা বেশ ভালো আছেন- প্রত্যেকেরই মাসে আয় লাখ টাকার উপরে।

তাদের দেখে উৎসাহিত হয়ে এ গ্রামের অনেকেই গড়ে তুলেছেন মুরগির খামার। বর্তমানে প্রায় দেড়শ’ খামার আছে এ পোল্ট্রি অঞ্চলে। এখান থেকে মাসে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় দুই লাখ ডিম। মাংস পাওয়া যাচ্ছে মাসে কয়েক টন। এতে ফেনী জেলার চাহিদা মিটছে ও আশপাশের উপজেলাগুলোতেও পাঠানো হচ্ছে ডিম-মাংস।

ফেনী সদরের ধলিয়া ইউনিয়নের মজুপুর, লেমুয়া ইউনিয়নের মীরগঞ্জ, সোনাগাজীর নববাপুর, দৌলতপুর, নেয়াজপুরসহ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে এ পোল্ট্রি অঞ্চল।

এখানকার দেড় শতাধিক খামারে কাজ করছেন দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক। খামারগুলো থেকে প্রাপ্ত বিষ্ঠায় গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এলাকায় একটি মুরগির খাদ্যের কারখানাও গড়ে তোলা হয়েছে।

এলাকার প্রথম উদ্যোক্তা আবুল বাশার লিটন বাংলানিউজকে জানান, তারা ১৮ বছর ধরে ব্যবসায়ীক ঐক্য ধরে রেখেছেন। চার বছর আগে গড়ে তুলেছেন মৈত্রী ডেইরি খামার। সেখানে ফিজিয়ান হলিস্টিয়ান জাতের গরু আছে ১৬টি। প্রতিদিন দুধ পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ লিটার। এলাকার সুপ্রীম পোল্ট্রির মালিকদের উদ্যোগে একটি পোল্ট্রি খাদ্যের খামারও গড়ে উঠেছে। ফলে এখানকার খামারগুলো এখান থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে।

আরেক উদ্যাক্তা শরীফুল ইসলাম আরিফ জানান, ফেনী বাজার, মহিপাল বাজার ও সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট ছাড়াও এখানকার ডিম যাচ্ছে সোনাগাজী, বারইয়ারহাট, মীরসরাই ও সীতাকুন্ডে।

তিনি জানান, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বার্ড ফ্লুতে এখানকার খামারগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেকেই সেই ক্ষতি এখনো পুষিয়ে নিতে পারেন নি।

আবুল খায়ের মিলন নামের এক উদ্যোক্ত জানান, এলাকায় বেশ কয়েকটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে। গ্রামীন শক্তি এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। প্রতিটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হচ্ছে। বন্ধন পোল্ট্রির দু’টি প্ল্যান্টের অধীনে আটজন গ্রাহক রয়েছেন। সহজ শর্তে ব্যাংক লোন পেলে অনেকেই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট গড়ে তুলতে এগিয়ে আসবেন বলেও জানান কয়েকজন খামারি। তারা বলেন, শতাধিক খামারে এ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট গড়ে তোলার মতো বাস্তবতা রয়েছে।

এতো সম্ভাবনার পরও অনেক সমস্যা পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যাটাই মুখ্য। এ পোল্ট্রি জোনের ২১ জন খামারি আবেদনের কয়েক মাস পরও বিদ্যুতের মিটার পাননি।

আবুল বাশার লিটন বাংলানিউজকে জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে পোল্ট্রি শিল্পে এ এলাকার ব্যবসায়ীরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। জেলা এবং এর আশপাশের এলাকার পুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে এ শিল্প।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৬ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।