ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

এসবিসি’র পাওনা ৪৯৮ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪২ বিমা কোম্পানি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এসবিসি’র পাওনা ৪৯৮ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪২ বিমা কোম্পানি

ঢাকা: সাধারণ বিমা করপোরেশনের (এসবিসি) পাওনা প্রায় ৪৯৮ কোটি টাকা দিতে গড়িমসি করছে ৪২টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। প্রিমিয়াম ও পুন:বিমার এ পাওনা পেতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে অভিযোগ করেছে এসবিসি। কিন্তু তাতেও কোনো ফল পায়নি সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

ঝুঁকি কমাতে বিমা কোম্পানিগুলোর বিমার ওপর শতভাগ পুন:বিমা করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ সাধারণ বিমা করপোরেশনে করা বাধ্যতামূলক।

বাকি ৫০ শতাংশ পুন:বিমা কোম্পানি ইচ্ছা করলে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে করতে পারে।

পুন:বিমার এ আইন অনুসারে ৪২টি বিমা কোম্পানির কাছে ৪৯৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৫ টাকা পাবে এসবিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে টাকা পরিশোধ করছে না। এতে এসবিসি'র পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমাখাতও। বিমা কোম্পানির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন গ্রাহকরা।

বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদিচ্ছা না থাকার পাশাপাশি নগদ অর্থ সংকটের কারণে এসবিসি'র টাকা পরিশোধ করতে পারেনি বেশিরভাগ কোম্পানি। কারণ, নিয়ম অনুসারে বিমা কোম্পানিগুলো এজেন্টদের ১৫ শতাংশ কমিশন দিতে পারে। কিন্তু তারা সে নিয়ম ভঙ্গ করেএজেন্টদের ৬০-৭০ শতাংশ হারে কমিশন দিচ্ছে।

ফলে কমিশনের টাকা দেওয়ার পর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়, অফিস খরচ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এবং বাসা ভাড়া দিয়ে তাদের হাতে কেনো টাকা থাকে না। এ অনৈতিক প্রতিযোগিতায় কোম্পানিগুলো নগদ অর্থ সংকটে পড়েছে।

সাধারণ বিমা করপোরেশনের সাবেক এমডিসহ একটি চক্রের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারণে সরকার দীর্ঘদিন ধরে এ টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এসবিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বাংলানিউজকে বলেন, এসবিসিতে পুন:বিমা করানো লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। ফলে বিমা খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাষ্ট্র সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, ‘এসবিসি’র পাওনা টাকা দ্রুত আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। চলতি বছর পুন:বিমা নবায়ন চুক্তির সময় তাদের প্রতিজ্ঞা করানো হয়েছে। তারা বলেছেন, এখন থেকে তারা কোনো বকেয়া রাখবেন না। পুরনো টাকাগুলো প্রতি কোয়ার্টারে পরিশোধ করবেন। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো ক্লেইম বাবদ যে টাকা পাবে, সে টাকা সঠিক কাগজপত্র পেলে দিয়ে দেওয়া হবে।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য অনুসারে, এসবিসি’র সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫৬ কোটি ২৮ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৯ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৪৭ কোটি ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ৩১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪১০ টাকা, চতুর্থ স্থানে থাকা পিপলস ইন্স্যুরেন্সের ২৯ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ২৮৩ টাকা এবং পঞ্চম স্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ২৬ কোটি ২০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
 
এছাড়া কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ২৫ কোটি ৯১ হাজার ৬৫ হাজার টাকা, জনতার কাছে ১৯ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ টাকা, ইস্টল্যান্ডের কাছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ ৩৩ হাজার ৩০০ টাকা, ফেডারেলের কাছে ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩০০ টাকা, এশিয়া প্যাসিফিকের কাছে ১৫ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার ৫৯২ টাকা, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ১৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩ টাকা, এশিয়ার কাছে ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৬ টাকা, স্ট্যান্ডার্ডের কাছে ১১ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ৯৭১ টাকা ও রিপাবলিকের কাছে ১০ কোটি ৯০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৫৬ টাকা পাবে এসবিসি।

১০ কোটি টাকার নিচে পাওনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্রনী ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৯ টাকা, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৫ টাকা, বিডি ন্যাশনালের কাছে ৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯২ হাজার ১২৬ টাকা,সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার ১৭৪ টাকা, সিটি’র কাছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮১২ টাকা, ক্রিস্টালের কাছে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ২৭ টাকা, দেশ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৩২২ টাকা, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৮ হাজার টাকা, ইস্টার্নের কাছে ৩ কোটি টাকা এক্সপ্রেসের কাছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৪ টাকা, গ্লোবালের কাছে ৮ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার ৬৬৭ টাকা, ইসলামী কমার্শিয়ালের কাছে ৬কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ৪৪৭ টাকা, কর্ণফুলীর কাছে ১ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা, মেঘনার কাছে ১৯ কোটি ২৬ লাখ ২৬ হাজার ২২৩ টাকা, মার্কেন্টাইলের কাছে ৭ কোটি ৬১ লাখ ৯৪ হাজার ৯০০ টাকা, নিটলের কাছে ৩ কোটি ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা, নর্দানের কাছে ৩ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার ২০০ টাকা, প্যারামাউন্টের কাছে ৬৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯০ টাকা, ফনিক্সের কাছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৪০০ টাকা,  প্রাইমের কাছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা, প্রভাতীর কাছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা, রিলায়েন্সের কাছে ৯ কোটি ২৩ লাখ ১৮ হাজার ২০০ টাকা, সোনার বাংলার কাছে ৭ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৮১ টাকা, তাকাফুলের কাছে ৩ কোটি ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৪টাকা, ইউনাইটেডর কাছে ৫ কোটি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৮৬ টাকা,ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬১ টাকা এবং সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯০০ টাকা পাওনা রয়েছে এসবিসি'র।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।