বিড়ি শিল্পে জড়িত মালিক-শ্রমিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে প্রতিহাজার বিড়িতে শুল্কের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
আর নিম্নস্তরের সিগারেটে প্যাকেট প্রতি শুল্কের পরিমাণ হয়েছে ৬৭ শতাংশ। ফলে প্রতি অর্থবছরে বিড়িতে ট্যাক্সের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন বলছে, রংপুর বিভাগে প্রায় ৩৫০টি, রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৫০টি, ঢাকা বিভাগে প্রায় ৩০টি, খুলনা বিভাগে প্রায় ৪০টি, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রায় ২৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় ১৫টি ও কুমিল্লা বিভাগে প্রায় ৩০টির মতো বিড়ির কারখানা আছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৫৪০ বিড়ি কারখানা সচল রয়েছে।
এরমধ্যে রংপুর বিভাগে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ১১ লাখ, রাজশাহী বিভাগে ২ লাখ, ঢাকা বিভাগে ৮০ হাজার, খুলনা বিভাগে ৭৫ হাজার, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫০ হাজার, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ হাজার, কুমিল্লা বিভাগে ৩৫ হাজার ও বরিশাল বিভাগে ৬০ হাজার বিড়ি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে তামাক চাষিরাও এ শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
জানা যায়, রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে বাণিজ্যিকভিত্তিতে তামাক চাষ হয়। আর এসব জেলায় ১০ লাখের বেশি মানুষ তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত।
এছাড়া এখাতে ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় ২ লাখ। সবমিলিয়ে বর্তমানে বিড়ি শ্রমিক, তামাক চাষি ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা ২৮ লাখ ১০ হাজারের বেশি।
রংপুরের তামাক ব্যবসায়ী মামুন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিড়ি শিল্পের সঙ্গে তামাক ব্যবসায়ীরাও জড়িত। এই ব্যবসা করতে গিয়ে বিগত ১০ বছরে ৩০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এখন যদি তামাক ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে এই ক্ষতির অর্থ কে দেবে?
‘তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা ঠিক। কিন্তু এর চেয়েও ক্ষতিকর দ্রব্য বাংলাদেশে আছে। আগে ওইসব নেশা জাতীয় দ্রব্য বন্ধ করে তারপর তামাক বন্ধ করে দেওয়া হোক। ’
বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সারাদেশে বিড়ি ফ্যাক্টরির সংখ্যা ছিলো প্রায় ৪ হাজার। আর সেই বিড়ি কারখানা এখন কমতে কমতে সাড়ে ৫শ’র মতো এসে ঠেকেছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যাবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) বিড়ি শিল্প ধ্বংসে ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে সরকারি কিছু আমলাও যুক্ত হয়েছেন। যারা কিনা বিএটিবি’র গোলাম হয়ে কাজ করছেন। আমরা এ খাত রক্ষায় ও শ্রমিকদের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
‘এ শিল্পের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ জড়িত। এটি বন্ধ হয়ে গেলে বিড়ি শ্রমিক, চাষি ও ব্যবসায়ীদের রাস্তায় ভিক্ষা করতে হবে। কেননা বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্য কোনো কাজেও লাগানো যাবে না, কারণ অন্য কোনো কাজ তারা পারেন না। ’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, বিড়ি শ্রমিকদের কথা বিবেচনা না করে সরকার যদি এ শিল্প ধ্বংস করতে চায় তাহলে সেটা সুফল বয়ে আনবে না। কাজেই তামাকজাত দ্রব্য থাকলে বিড়িও থাকবে।
‘সকল বিড়ি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান না করে বিড়ি শিল্প বন্ধ করা যাবে না। বিড়ি শিল্প যদি বন্ধ করতে হয় তাহলে দেশে কোনো প্রকার তামাকজাত দ্রব্য থাকতে পারে না,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
এসজে/এমএ