ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প

ভরাডুবির শঙ্কায় চামড়া ব্যবসায়ীরা

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
ভরাডুবির শঙ্কায় চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আর মাত্র চারদিন বাকি ঈদুল আজহার। সবাই অনন্দের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। চলছে কোরবানির পশু কেনা-বিক্রির ধুমও। কিন্তু চরম দুশ্চিন্তায় আছেন দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা।

সূত্র জানায়, এই ঈদের সময় পাওয়া যায় পর্যাপ্ত সংখ্যক উৎকৃষ্ট মানের চামড়া। তাই কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোঁটার কথা।

কিন্তু না তারা এই ব্যবসায় চূড়ান্ত মাত্রার ভরাডুবির শঙ্কা দেখতে পাচ্ছেন এখন। কেননা গত বছরের ঈদের সময় ট্যানারি মালিকরা যে চামড়া কিনেছিলেন তার দামই এখনও পায়নি রাজধানীর লালবাগের পোস্তা এলাকার ব্যবসায়ীসহ মৌসুমি চামড়া কারবারিরা।
 
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা সর্বমোট প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছেন ট্যানারি মালিকদের কাছে। যে কারণে অনেক কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী পুরান ঢাকার এই পৈত্রিক ব্যবসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। তবে এতোদিনের ব্যবসা ছেড়ে ও খালি হাতে ফিরে তারা কিভাবে বেঁচে থাকবেন বা আয়-উপার্জন করবেন সে শঙ্কাটাও তাদের পীড়া দিচ্ছে অনেক।
 
পোস্তা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বছর চামড়া দিছিলাম। ট্যানারি মালিকরা কইছিল (বলেছিল) দুই বা তিন মাসের মধ্যে টাকা দিয়ে দেবে। এখনও দেয় নাই। তারা এখনও আশ্বাস দিতেছে। কিন্তু ঈদের আগে ব্যাংক খোলা মাত্র দুই দিন। এর মধ্যে না দিলে আমাদের মাথায় হাত। ব্যবসা গুটিয়ে ফিরে যেতে হবে। কারণ আমরাও তো মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীসহ যাদের কাছ থেকে চামড়া কিনছি তাদের ফেরত দিতে পারতেছি না। আবার ব্যবসা করবো কিভাবে?’
 
ব্যবসায় পাওনা টাকা না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধরেন আমার চামড়া নিছিলো ক্রিসেন্ট ট্যানারি। তারা কোটি কোটি টাকা লোন কইরা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় সরকারের পক্ষ থেকে মামলার স্বীকার হইছে। এখন তাদেরই আসে যায় অবস্থা। ব্যবসা করে তারাও লাভ করতে পারতেছে না বরং লোকসানে আছে। ’
 
এদিকে, সমাধানের উপায় কি এমন প্রশ্ন করলে আরেক চামড়া ব্যবসায়ী সবুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথমত আমাদের যে সংগঠন (বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন) আছে তারাও কিছু বলতে পারতেছে না। কারণ এখনও সব ট্যানারি কার্যক্রম হাজারীবাগ থেকে সাভারে যায়নি। কিছু বলতে গেলে সরকার এই চাপ দেবে। আর অন্যদিকে এই ট্যানারি মালিকদের ছাড়া আমাদের ব্যবসা টিকবে না। সেখানে তাদের অবস্থা ভালো না নিজেদের দোষে। তারা লোন নিয়ে অন্য কাজে খাটায়। ধরা তো খাবেই। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারেরও কঠোর হতে হবে। এই বিভাগের অসৎ লোকদের বিদায় করতে হবে। কারণ সরকারের লোকজনের প্রশ্রয় না পেলে এ ধরনের কাজের সাহস পায় কিভাবে? সেটাও আবার দীর্ঘ পরিক্রমার বিষয়। এখন আমাদের কি হবে কাল-পরশুর মধ্যে পাওনা টাকা না পেলে?
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেখেন চামড়া প্রসেসিং-এর কাজ এখন আর হাজারীবাগে একটাও নেই। সব সাভারে। এখানে কয়েকটা গোডাউন থাকতে পারে শুধু। ট্যানারি মালিকরা সরকারের কাছ থেকে লোন নিয়ে আটকে আছে। তারা এখন লাভও করতে পারছে না। ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশের এ বিরাট শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
 
অন্যদিকে, এ বছর কোরবানির গরুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক চড়া। আবার সরকার চামড়ার দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে চামড়ার দাম আর বাড়বে কি-না বা নির্ধারিত দামে থাকবে কি-না জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর বলেন, আমাদের সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ওটা থাকে মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু কোরবানিতে তাও নেই। এখন চামড়া অনেক হাত বদলের পর আমাদের হাতে আসে। এ কারণে হয়তো নির্ধারিত দামে থাকবে না। তাতে আমাদের কি করার আছে। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা ৩০০-৪০০ টাকায় চামড়া কিনে আমাদের কাছে চড়া দামে বেঁচে। মনে রাখবেন কোরবানির চামড়া উন্নতমানের হয়। এটা ট্যানারি মালিকসহ অনেক বিদেশি কোম্পানি বেশি দাম হলেও কিনে নেয়।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব এখানে আছে উল্লেখ করে বাংলানিউজকে দেলোয়ার বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময় নেতারা অনেক পশু কোরবানি দেবেন। আর সেই চামড়া যদি আমরা নিতে না পারি তাহলে এ শিল্প ধ্বংস হতেই পারে। তাই আমাদের পাওনা টাকা ঈদের আগেই পাওয়া জরুরি। আর এ বিষয়ে আইন জোরদার ও কার্যকর করা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
এমএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।