ঢাকা: ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে বৃহম্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা শুরু হচ্ছে।
মেলা উপলক্ষে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তির মহাসড়ক বিনির্মাণের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা এবং পরিবর্তিত বিশ্বে নতুন সভ্যতার রূপান্তরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, রোবটিক্স, বিগডাটা, ব্লকচেইন ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি আজ সুদৃঢ় হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই দূরদৃষ্টি প্রজ্ঞাবান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়িত হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উপযোগী মানব সম্পদ সৃষ্টি, ডিজিটাল প্রযুক্তির আধুনিক সংস্করণের সঙ্গে জনগণের সেতুবন্ধন তৈরি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরাই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’ ২০২৩ অন্যতম মূল লক্ষ্য।
তিনি জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির অগ্রগতি, অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরতে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলার স্টল খোলা থাকবে। www.digitalbangladeshmela.org.bd বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। মেলার এ ওয়েব সাইটে ক্লিক করে দর্শনার্থীরা বিনা মূল্যে নিবন্ধন করতে পারবেন।
আগামী ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তায় এ মেলার উদ্বোধন করবেন। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়াতে অবদান, ইমাজিং টেকনোলজি বিকাশে অবদান এবং টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানসহ ১২টি ক্যাটাগরিতে মনোনীত ব্যক্তি ও সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের মধ্যে প্রথমবারের মতো ডাক ও টেলিযোগাযোগ পদক বিতরণ করা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের সংযুক্তির মহাসড়ক’।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে। এ কর্মসূচি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার সোপান।
মেলায় প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। এর মধ্যে, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ট্রিপল প্লে (এক ক্যাবলে ল্যান্ডফোনের লাইন, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ), মোবাইল অ্যাপস, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রদর্শন করা হবে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে, জেডটিই এবং বিভিন্ন মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করবে, দেশি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার ও সেবা উপস্থাপন করবে। টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের ভয়েস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবা (ভ্যাস) দেখাবে। মেলায় লাইভ দেখা যাবে ফাইভ-জি। মেলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পৃথক কর্নার থাকবে। সেই কর্নারে প্রযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরা হবে।
মেলায় আটটি সেমিনারের মাধ্যমে সরকারের মন্ত্রী এবং অভিজ্ঞ বক্তারা বর্তমানের প্রযুক্তি ও আগামী দিনে প্রযুক্তির গন্তব্য নিয়ে কথা বলবেন। এর মধ্যে ২৬ জানুয়ারি মিডিয়া বাজারে বিকেল ৩টায় দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিটিআরসির কমিশনার ড. মুশফিক হাসান চৌধুরী। ২৬ জানুয়ারি উইন্ডি টাউন হলে বিকেল ৩টায় মেইড ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফেয়ার গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার মো. মেসবাহ উদ্দিন।
২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) মিডিয়া বাজারে বেলা ১১টায় পঞ্চম শিল্প বিপ্লব ও ফাইভি-জি অবকাঠামো: বাংলাদেশের প্রস্তুতি শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
২৭ জানুয়ারি উইন্ডি টাউনে বেলা ১১টায় দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ খাত: শীর্ষক পূর্ব ও পরবর্তী কৌশল করণীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ এনামুর রহমান। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিটিআরসির মহাপরিচালক (এসঅ্যান্ডএস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।
২৭ জানুয়ারি উইন্ডি টাউনে বিকেল ৩টায় ডাটা সায়েন্স রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; বাংলাদেশ প্রেক্ষিত শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।
২৭ জানুয়ারি বেলা ৩টায় ডিজিটাল রূপান্তর: ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পিডব্লিওসি বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশিদ।
মেলার শেষ দিন ২৮ জানুয়ারি মিডিয়া বাজারে বেলা ১১টায় নিরাপদ ডিজিটাল সমাজ: রাষ্ট্রের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ। ২৮ জানুয়ারি বেলা ১১টায় উইন্ডি টাউনে স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এ বি এম মইনুল হোসেন।
এছাড়া ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ।
সব শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হবে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা’ ২০২৩ উপলক্ষে অনলাইন রচনা প্রতিযোগিতা এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা (১ম থেকে ৫ম শ্রেণি) এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অনলাইন রচনা প্রতিযোগিতায় বিষয় ক-গ্রুপঃ নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) (অনধিক ১০০০ শব্দ) বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। খ-গ্রুপঃ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা (৯ম থেকে ১০ম শ্রেণি) (অনধিক ১২০০ শব্দ) বিষয় ডিজিটাল বাংলাদেশ: রূপান্তরের গল্প।
২৮ জানুয়ারি শনিবার মেলা প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস