ঢাকা: প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ অংশগ্রহণ নেট জিরো স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির চাবিকাঠি বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত নেট জিরো বাংলাদেশ তৈরির বিষয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এই মতামত দেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে নেট জিরো বাংলাদেশ গঠনে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) জ্বালানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ শফিকুল আলম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। শফিকুল আলম নেট জিরো বাস্তবায়নে বিশ্ব ও দেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে বাস্তব পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন।
নেট জিরো হচ্ছে রবির মূল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ কর্তৃক ঘোষিত একটি কার্বন হ্রাস নিঃসরণ কর্মসূচি।
রবির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস অনামিকা ভক্ত স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে গোলটেবিল বৈঠকের সূচনা করেন।
সিএসআর ও সাসটেইনেবিলিটি বিশেষজ্ঞ মহিউদ্দিন বাবরের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানাসহ টেকসই উন্নয়ন খাতে কর্মরত করপোরেট; ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথিরা রবির ২০২২ সালের সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট উন্মোচন করেন। এ সময় রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি শরীফ শাহ্ জামাল রাজ জানান, রবি বর্তমানে ২০৫০ সালের মধ্যে একটি নেট জিরো ভিশন নিয়ে কাজ করছে। সেই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে রবি তার কার্বন নির্গমন ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেবে।
নেট জিরো ভিশনের দিকে অগ্রগতি তুলে ধরে রাজ বলেন, এখন পর্যন্ত রবি তার ১৩ শতাংশ নেটওয়ার্ক সাইটগুলোয় সৌর শক্তি ব্যবহার করছে। মোট দুই হাজার ১২৭টি সৌর শক্তি চালিত নেটওয়ার্ক সাইটসহ ২০২০ এবং ২০২২ এর মধ্যে মোট ইনস্টল করা ক্ষমতা প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সৌর শক্তি-ভিত্তিক শক্তি উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌর বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করার পাশাপাশি রবি তার কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করতে বৃক্ষরোপণও চালিয়ে যাচ্ছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, জাতিসংঘের নির্ধারিত ২০৫০ সালের জন্য আমাদের অপেক্ষা করা উচিত নয়, বরং আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ২০৪১ সালের মধ্যে নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। আমি রবিকে এ ধরনের ঘোষণার জন্য প্রশংসা করি। রবির দুই হাজারের বেশি নেটওয়ার্ক টাওয়ারে সৌর শক্তি ব্যবহার করে। এটি জেনে এবং এই বিষয়ে তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমি খুবই উৎসাহিত হয়েছি। নেট জিরোভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
উপযোগী গোলটেবিল আয়োজনের জন্য রবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা বলেন, আমাদের ধাপে ধাপে নেট জিরো ভিশনের কাছে যেতে হবে। জেনে খুশি হবেন যে, আমরা সহজ পদ্ধতি নেওয়ার মাধ্যমে স্রেডাতে বিদ্যুতের ব্যবহার ৪০ শতাংশের বেশি কমিয়েছি। এমনকি একজন সাধারণ ব্যক্তিও নেট মিটারিং নীতি ব্যবহার করে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। নেট জিরো ভিশনের দিকে যাত্রার পথ বিস্তৃত করার জন্য আমাদের এই নীতিকে জনপ্রিয় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন) মাহমুদ হোসেন, পরিবেশবিদ এবং গ্রিন সেভারসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান রনি, ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. শামীম জাহাঙ্গীর, টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) সভাপতি রাশেদ মেহেদী, ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন প্রোগ্রাম প্রধান মনিরুজ্জামান খান, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান ও কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের ডেপুটি ডিরেক্টর জাকির হোসেন আলোচনায় অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
এমআইএইচ/এসআইএ