ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ডিজিটাল সরকার উল্টো পথে!

শেরিফ আল সায়ার, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৩
ডিজিটাল সরকার উল্টো পথে!

ঢাকা: ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) আপলোড স্পিড সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস-২০১৩’ পালনের মাত্র একদিন আগে গত ১৬ মে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় জানানো হয়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট আপলোড গতি ৭৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।    

কি ছিল বিটিআরসির সেই নির্দেশনায়

বিটিআরসি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ থেকে পাঠানো ওই নির্দেশনায় আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হয়, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) আপলোড স্পিড সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হবে।
তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যর প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেল এজেন্ট, দূতাবাস ও সরকারি প্রতিষ্ঠান এর আওতা মুক্ত থাকছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ৭ দিনের মধ্যে বিটিআরসিকে দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এ ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই নির্দেশনা কার্যকর করা হয়। এর ফলে ১৬ মে থেকেই বিপাকে পড়েছেন ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররা। সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ব্যবহারকারীরাও। তারা ফেসবুকে ছবি আপলোড, স্কাইপিসহ অন্যান্য ভিডিও চ্যাটেও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতারুজ্জামান মঞ্জু বিটিআরসির নির্দেশনা প্রসঙ্গে বাংলানিউজিকে বলেন, “এ নির্দেশনা আইএসপিদের দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) সংস্থাগুলোকে। আমরা আইআইজি থেকেই ব্যান্ডউইথ নিয়ে থাকি। সুতরাং এর প্রভাব পড়বে সবার উপরই। এজন্য আমরা বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে খুব শিগগিরই আলোচনা করবো। ”

অন্যদিকে ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ সুমন সাবির বাংলানিউজকে বলেন, “ব্যাংক, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান যাদের এই ঘোষণার আওতামুক্ত রাখা হবে বলা হচ্ছে, সেটি করা অনেকটা অসম্ভব। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনো আইএসপি’র কাছ থেকেই ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছে। এভাবে আইপি ধরে ধরে কখনও ব্যবহারকারী বের করা সম্ভব না। ”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ ব্যবহারকারীরা মূলত ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট, স্কাইপে কথা বলা, ইমেজ আপলোড বা ভিডিও আপলোড করতে গেলে সমস্যায় পড়বেন। প্রধানত সমস্যায় পড়বেন ফ্রিল্যান্সাররা। তাদের বড় বড় ফাইলগুলো ক্লায়েন্টকে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। সেক্ষেত্রে মূলত তারাই ভুগবে। এছাড়া বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তো আছেই। ”

ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষোভ

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ জানাচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। এক হিসাবে দেখা যায়, ২০১২ সালে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এনেছেন ফ্রিল্যান্সাররা। ফ্রিল্যান্সাররা দিনে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছে।

ফ্রিল্যান্সাররা ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি মডেলিংসহ অনেক বড় মাপের ফাইল আপলোডসহ নানা কাজ করেন। সাধারণত এডিট করা একটি ভিডিও’র সাইজ ১ গিগা বা তার চেয়েও অনেক বেশি হয়।

তারা আপলোড স্পিড কমিয়ে দেওয়াকে ইন্টারনেটের উপর খড়গ দেওয়া হিসেবেই মন্তব্য করেছেন। আগে যেখানে একজন ফ্রিল্যান্সার ১ এমবিপিএস এর ইন্টারনেট ব্যবহার করে ডাউনলোড স্পিড পেয়েছেন ১০০- ১২০ কেবিপিএস এবং আপলোড স্পিড থাকতো ২০-৩০ কেবিপিএস। এখন সেটা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করায় আপলোড স্পিড পাবে ৫-৭ কেবিপিএস। এতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হবে, অন্য দিকে কাজ করার আগ্রহ হারাবে ফ্রিল্যান্সাররা।

ঢাকাকমের কারিগরি বিভাগের প্রধান ও আইটি বিশেষজ্ঞ ফখরুল আলম পাপ্পু বাংলানিউকে জানিয়েছেন, বিটিআরসি এর আগেও বহুবার এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিল। তবে সেটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। দেখা গেছে কয়েক ঘণ্টার জন্য এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এবার একদম ঘটা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর‌্যন্ত আপলোড স্পিড কমিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে। এটি সত্যিই দুঃজনক।

তিনি আর বলেন, “বিটিআরসি থেকে বলা হচ্ছে, আপলোড স্পিড কম থাকলেও ডাউনলোড স্পিড পুরোটাই পাবে ব্যবহারকারীরা। কিন্তু আপলোড স্পিড কম থাকলে সেটার প্রভাব অবশ্যই ডাউনলোড স্পিডের উপর পড়বে। আবার সব ব্যবহারকারীদের তথ্য টেকনিকেলি বিটিআরসিকে দেওয়া অসম্ভব। ”

মোবাইল অপারেটরদের উপর ব্যবহারকারীদের ক্ষোভ

ইমেইলের মাধ্যমে বাংলানিউজের এক পাঠক ইন্টারনেট মূল্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যেখানে আমরা চড়ামূল্য ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করছি, সেখানে কেন আপলোড স্পিড কমিয়ে দেওয়া হবে।

পাঠক এক হিসেব দেখিয়ে উল্লেখ করেন, গ্রামীনফোন এবং অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা প্রতি জিবি ডাটা সরকারের কাছ থেকে ক্রয় করে মাত্র ৫ থেকে ১৫ টাকায়। কিন্তু গ্রাহকরা সেটি পায় ৩০০ টাকায়।

১৫ মেগাবাইট ইন্টারনেট এখনো কিনতে হয় ৩৫ টাকায়। বাংলালিংক ২০ মেগা ২৩ টাকা, রবিতে ১ জিবি ২৭৫ টাকা অথচ ভারতে ১ জিবি দেওয়া হয় ৭০ টাকার থেকেও কমে।

বতর্মান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায় কিন্তু তারা শুধু ব্যন্ডউথের দাম কমিয়েই পগারপার হয়ে যাচ্ছে। একটু দেখছেও না যে এদিকে অপারেটররা জনগণের উপর কিভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এগুলো দেখার মত কি কেউ নেই?

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বারবারই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রযুক্তি। ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে এবার পুরো ইন্টারনেটের উপর এমন নির্দেশনা বিতর্কিত করছে সরকারের সিদ্ধান্ত।
যেখানে আপলোড ও ডাউনলোড স্পিড বাড়ানোর এবং ইন্টারনেট সংযোগ মূল্য কমানোর কথা সরকারকে চিন্তা করতে হবে, ঠিক তখন সরকার যেন উল্টো পথেই চলছে। এভাবে কি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব?

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৩
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।