ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

দিশেহারা নকিয়া, বিক্রিতেই নিস্পত্তি

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৩
দিশেহারা নকিয়া, বিক্রিতেই নিস্পত্তি

‘ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে নকিয়া!’ এ বছরের ৫ জানুয়ারি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে প্রকাশিত এ খবর এবারে সত্য প্রমাণ হলো। ওই সময় নকিয়াকেন্দ্রিক এ খবরটি দেশের সংবাদমাধ্যমে দারুণ আলোচনার ঝড় তুলেছিল।

গণমাধ্যমের সমালোচক মহল এ খবরকে ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেছিলেন। পাঠকের অবগতির জন্য নিচে আগেও খবরের লিঙ্ক সংযুক্ত করা হলো।

কিন্তু এ খবর প্রকাশের সাত মাসের মধ্যেই এ খবরের চূড়ান্ত সত্যতা মিলল। অবশেষে ৭২০ কোটি ডলারের বিনিময়ে নকিয়ার মোবাইল ইউনিট কিনে নিল মাইক্রোসফট। এ বিষয়ে সুবিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আবারও পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো এ খবরের ভিন্নদিক।     

অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা আর গুজবের ইতি টেনে নকিয়া যুগের অবসান হলো। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে নকিয়ার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল। চুক্তি অনুসারে নকিয়ার মোবাইল ইউনিট এখন থেকে মাইক্রোসফট বাজারে আনবে।

এক যুগেরও বেশি সময় দাপুটে আর শীর্ষ স্থানে থাকা নকিয়াকে এভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে তা কল্পনাও করেনি ব্যবসা বিশেষজ্ঞেরা। আইফোন আর অ্যানড্রইড ঘরানার স্মার্টফোনের তোড়ে একেবারেই বেসামাল হয়ে পড়ে নকিয়া।

ফিনল্যান্ডভিত্তিক এ সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান ২০০৬ সালের পর থেকেই অ্যাপল, স্যামসাং এবং সম্ভাব্য গুগলের স্মার্টফোন অপারেটিং অ্যানড্রইডের সঙ্গে বাজার প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে শুরু করে। কিন্তু এ বৈপীরিত্য বাজার প্রতিযোগিতায় আমলে না নেওয়ার কারণেই এমন আর্থিক পতনে সম্মুখীন হয় নকিয়া। বাজারে বিশ্লেষকেরা এভাবেই দেখছেন পুরো বিষয়টিকে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে নকিয়ার সিইও মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নকিয়া ভাঙনের সুর বাজতে থাকে। এবারে তাই চুক্তি অনুসারে মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন স্টিফেন ইলোপ।

আগামী ১২ মাসের মধ্যেই বর্তমান স্টিভ বলমার মাইক্রোসফটের শীর্ষ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে যাচ্ছেন। তার আগে থেকেই স্টিফেন ইলোপ মাইক্রোসফটের সিইও পদের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।

এ মুহূর্তে নকিয়ার ৩২ হাজার কর্মী আছে। এদের সবাই মাইক্রোসফটের মোবাইল ইউনিটে যোগ দেবে। এর মধ্যে ফিনল্যান্ডভিত্তিক ৪৭০০ জন কর্মীও অন্তর্ভুক্ত আছেন।

অচিরেই মাইক্রোসফট ১৫০ কোটির ইউরোর বিনিময়ে নকিয়া কর্মীদের পুর্নগঠনে আর্থিক সহায়তা দেবে। এটি মাইক্রোসফট ঋণ হিসেবে দেবে নকিয়াকে। এরপর চুক্তি পুরো অর্থ প্রাপ্তির পর তা নকিয়া আবার মাইক্রোসফটকে ফিরিয়ে দেবে।

এ প্রসঙ্গে নকিয়া পরিচালক পর্ষদের সভাপতি রিসতো সিলাসমা বলেন, নিত্যনতুন উদ্ভাবন আর আর্থিক শক্তি সঞ্চারে এ ধরনের চুক্তির পথে এগিয়েছে নকিয়া। এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখা হবে।

এরই মধ্যে নকিয়া-সিমেন্স নেটওয়ার্ক (এনএসএন) মোবাইল সংযোগের প্ল্যাটফর্ম কাজ শুরু করেছে। এ নেটওয়ার্কের ম্যাপিং ব্যবসা থেকে ৫০ ভাগ রাজস্ব মুনাফা এসেছে নকিয়ার।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে নকিয়া দারুণ আর্থিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়। এক সময়ের ৭২০ কোটি ডলার আয়ের প্রতিষ্ঠান পরিণত হয় ২৭২ কোটি ডলার আয়ের প্রতিষ্ঠানে। ফলে আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সবগুলো দরজা একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।

এ মুহূর্তে আইফোন আর গুগল অ্যানড্রইডভিত্তিক ফোনগুলো বিশ্ব স্মার্টফোনের বাজারের ৯৫ ভাগই দখলে নিয়েছে। এ পরিসংখ্যান নেওয়া হয়েছে স্মার্টফোন বিশ্বের শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের গ্রাহকদের কাছে।

এ মুহূর্তে উইন্ডোজ ফোনের নিয়ন্ত্রণে আছে মাত্র ১০ ভাগ বাজার। তাও আবার মেক্সিকো এবং ফ্রান্সের বাজারেই শুধু এ চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে। আপাতত মাইক্রোসফট ‘লুমিয়া’ এবং ‘আশা’ ব্র্যান্ডনেম কিনে নিয়েছে। এ চুক্তি অনুসারে মাইক্রোসফট আগামী ১০ বছর নকিয়া ব্র্যান্ডনেম ব্যবহার করতে পারবে।

তবে চুক্তি অনুসারে নকিয়া ব্র্যান্ডনেম এখনও কোম্পানির আয়ত্বে থাকবে। এর অর্থ আগামী এক যুগ নকিয়া নিজস্ব ব্র্যান্ডনেমে কোনো হ্যান্ডসেট বাজারে আনতে পারবে না। ফলে ৩০ বছরের সফল মোবাইল ফোন ব্যবসার আপাতত ইতি টানতে হলো নকিয়াকে।

প্রসঙ্গত, ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা পায় ফিনিশ প্রতিষ্ঠান নকিয়া। এরপর ২০ শতকে এসে নকিয়া নতুনভাবে পরিচিত পেতে থাকে। ১৯৭০ সালে প্রথম টেলিফোন এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে নকিয়া। ১৯৮১ সালে নকিয়া বিশ্বে প্রথম মোবাইল ফোন নিয়ে বিশ্ববাজারে আত্মপ্রকাশ করে।

মাইক্রোসফট অবশেষে নকিয়া কেনার গুজবকে সত্য করল। এ গুজব ইলোপ মাইক্রোসফটে যোগদানের পর থেকেই ছড়াতে থাকে। নকিয়া হাউজে নিজস্ব ঘরানার অপারেটিং ‘সিম্বিয়ান’ এবং ‘মিগো’র স্মার্টফোন সফটওয়্যারের উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়। ২০১১ সালে ফেব্রুয়ারিতে উইন্ডোজ ঘরানার ফোন নিয়ে আসে মাইক্রোসফট।

মাইক্রোসফটের শীর্ষ মুখপাত্র বলমার বলেন, ভবিষ্যতের পথে এটি একটি অপ্রতিরোধ্য উদ্যোগ। এটি উইন-উইন প্রকল্পে পরিচালিত হবে। এ উদ্যোগের ফলে চাকরিজীবী, শেয়ার মালিক, ক্রেতা এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবসাবান্ধব হবে।

নকিয়ার পর কানাডার বিখ্যাত প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা ব্ল্যাকবেরি কেনার বিষয়েও আলোচনা এগোচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ মুহূর্তে মাইক্রোসফট স্মার্টফোন বিশ্বে নিজেকে অ্যাপল, গুগল এবং স্যামসাংয়ের শক্ত প্রতিপক্ষ করে তুলতে যে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে আগ্রহী।

(ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে নকিয়া)

বাংলাদেশ সময় ২১৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।