নতুন ধ্যান-ধারণায় জন্ম নেওয়া এক বাজার দ্রুতই জনপ্রিয় হচ্ছে। এ বাজারে যিনি ক্রেতা, তিনিই আবার বিক্রেতাও হতে পারবেন।
সব মিলিয়ে ঝুট-ঝামেলামুক্ত আর তৃতীয় পক্ষ ছাড়া দারুণ এক বাজার। নাম (www.cellbazaar.com) সেলবাজার ডটকম। এ বাজারে নেই কোনো দর-কষাকষির ভোগান্তি। আছে শুধু সরাসরি আর তাৎক্ষণিক পণ্য বিক্রির অফুরন্ত সুযোগ।
থ্রিজি এখন দেশের সবর্ত্রই ছড়াচ্ছে। তাই ধীর গতির সীমাবদ্ধতা আর ইন্টারনেটনির্ভর স্মার্টফোন এখন সবচেয়ে আলোচিত। এ দুয়ের সমন্বয়ে দেশের অর্থনৈতিক আবহে আমূল পরিবর্তন সূচিত হবে। এসব কথাই বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন সেলবাজার ডটকম সিইও আরিল ক্লোক্কেরহৌগ।
এখন দেশজুড়ে চলছে থ্রিজি হইচই। তারুণ্য, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট এ ত্রিমুখী মিশ্রণে দেশের অর্থনীতি আর সামাজিক সংস্কৃতির আবহ দ্রুতই বদলে যাচ্ছে। ধীর গতির ইন্টারনেট আবহে বাংলাদেশে গুটি গুটি পায়ে অনলাইনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এ ছাড়াও দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইনের ই-শপিং। যানজট আর দুর্ঘটনার রাজধানীতে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় জিনিস চটজলদি পেয়ে যাওয়ার মজাটাই যেন অন্যরকম। ঘর-গৃহস্থ, ইলেকট্রনিকস, ল্যাপটপ, নোটবুক, বাড়ি, গাড়ি সব কিছুই আছে এ বিক্রির বাজারে।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে থেকে দেশের প্রথম ক্যাসিফাইড বিপণন বাজার হিসেবে সেলবাজার জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। প্রথমদিকে গাড়ি আর ভাড়া এসব দিয়ে সূচনা করলেও ধীর ধীরে এ বাজারে পণ্যের ব্যাপ্তি ছড়াতে থাকে। ক্রেতারা আগ্রহী হয়ে ওঠেন এ বাজার বিপণনে। এরপর বিক্রেতারাও ঝুঁকতে থাকেন এ অনলাইন বাজারে।
কিন্তু অনেকটা সময় একই ধাঁচের সেবা আর সাইটের অবয়বের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এবারে সেলবাজার ডট’র দায়িত্ব নিয়েছেন আরিল। ব্যবহৃত পণ্যের অবাধ আর কমদামি বাজার হিসেবে সেলবাজার এখন যেকোনো ক্রেতা-বিক্রেতার কাছেই সুপরিচিত আর নির্ভরযোগ্য গন্তব্য।
আগামী ২০২০ সালের মধ্যেই এ বাজারের নিয়ন্ত্রনে চলে যাবে ক্রেতা-বিক্রেতারা। ইন্টারনেটের দুর্বার গতি আর সব ফোনেই এ সেবার সাবলীল উপস্থিতি শুধু দেশের অর্থনীতিকেই গতিশীল করবে না, বরং নতুন এক অর্থ আবহের জন্ম দেবে। এ লক্ষ্যেই সেলবাজার ডটকম নতুন পরিকল্পনা আর উদ্যোগে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনটাই বাংলানিউজকে জানালেন আরিল।
দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যমে বাংলানিউজের জনপ্রিয়তা আর সাফল্যের প্রসঙ্গ জুড়ে দিয়ে আরিল ক্লোকারহগ বলেন, এ গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তা আর দ্রুত শীর্ষস্থান অর্জন দেশের ইন্টারনেট সংস্কৃতির ইতিবাচক দিকের কথাই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করে।
এ মুহূর্তে ৩০ হাজার গাড়ি, হাজার হাজার গৃহস্থালি পণ্য ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যেই বিক্রি হচ্ছে সেলবাজারে। এখন প্রতিদিনই সেলবাজার নিজেকে সমৃদ্ধ করছে। পসরা সাজাচ্ছে নিত্যনতুন পণ্যের। সহজ আর সাবলীল করছে অনলাইনে পণ্য বিক্রির কৌশলকে।
বাংলাদেশের সুপরিচিত শ্রেণিভুক্ত বিজ্ঞাপনী সাইট সেলবাজার নতুন ফিচারের মানোন্নয়নে কাজ করছে। এ বছরের একেবারে শুরুতেই নতুন বিনিয়োগ আর লক্ষ্য নিয়ে নতুনভাবে যাত্রা করেছে সেলবাজার। বর্তমানে এ ব্র্যান্ডের সঙ্গে গ্রামীণফোনের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বরং দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পূরক একটি আধুনিক ইন্টারনেট বাজার তৈরিতেই সেলবাজার এগোচ্ছে। এখন থেকে নিয়মিতই গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সেলবাজার ডটকম নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করবে।
সেলবাজারের সব ধরনের ফিচার এবং সেবা বাংলা ও ইংরেজি দু ভাষাতেই পাওয়া যাচ্ছে। আর একটি সহজ ট্যাব অপশনের মাধ্যমে এ দু ভাষার মধ্যে পছন্দের সুযোগ থাকছে। এ ব্যাপারে আরিল ক্লোকারহগ বাংলানিউজকে বলেন, এ নতুন সংযোগের ফলে দেশের যেকোনো স্থান থেকে সহজেই পণ্য বিকিকিনির সুবিধা উপভোগ করা যাবে। বিজ্ঞাপনও দেওয়া যাবে একেবারে বিনামূল্যে।
এ সাইটে নতুন ফেসবুক ইন্টিগ্রেশন ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে। এখন থেকে সেলবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সহায়তায় এ সাইটে অনায়াসে লগইন করতে পারবেন। তাদের পোস্ট করা অ্যাড বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুকেও শেয়ার করতে পারবেন।
ফলে দেশের লাখ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এখন সেলবাজার ডটকমে আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলা ছাড়াই এ বাজারের বিক্রেতা হতে পারবেন। তবে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার্থে ফেসবুক ছাড়াই সেলবাজার ডটকমের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা যাবে।
এ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ডিজাইনে নতুন লোগো ছাড়াও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। সাইটের হোমপেজের অবয়ব প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। যা দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তাদের পছন্দের সমীক্ষার আলোকে নির্মিত। সাইটের হোমপেজ থেকে গ্রাহকেরা তাদের পছন্দমতো অবস্থান নির্বাচন করতে পারবেন। হোমপেজেই দৃশ্যমান জনপ্রিয় ৬টি ক্যাটাগরি।
এবারে ঈদুল আজহার এমন ভরা মৌসুমে অনলাইনেই ধুমছে বিক্রি হয়েছে গরু, খাসি ছাড়াও কোরবানিযোগ্য সব ধরনের পশু। অনলাইনে কোরবানির হাট এবারে দারুণ জনপ্রিয়তা আর সুনাত কুঁড়িয়েছে। অনেকেই হাটে না গিয়েও কোরবানি কিনছেন ইন্টারনেটের সুবাদে।
এ প্রসঙ্গে সেলবাজার সিইও আরিল ক্লোক্কেরহৌগ বললেন, বাংলাদেশ এমন একটি বাজার যেখানে ভবিষ্যতে অন্য সব দেশের তুলনায় ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্রমেই বাড়ছে। এ জন্য সাত বছরের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে সতর্কতার সঙ্গে মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন করেছি।
আর সেলবাজারের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সর্বোত্তম সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে প্রস্তুত এমন বিনিয়োগকারীর সহায়তায় সেলবাজার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অনলাইন এবং মোবাইল ফোনে শ্রেণিভুক্ত বিজ্ঞাপনের সর্বপ্রথম উদ্যোক্তা সেলবাজার ডটকম। ২০০৬ সালে সেলবাজার এসএমএস সার্ভিস দিয়ে পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৭ সালে পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট হিসেবে এ বাজারের পথচলা শুরু হয়।
এ বছর গ্রামীণফোনের সঙ্গে সেলবাজার চুক্তির ইতি টানে। নব্য ঘরানার এ বাজার ব্যবহৃত পণ্যের বিকিকিনির শ্রেণিভুক্ত বিজ্ঞাপনের ধারণা পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে। পণ্য বিক্রেতারা এ সাইটে বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারবেন। পরে তা মান নিয়ন্ত্রণে যাচাই-বাছাই করা হয়।
বাংলাদেশের যেকোনো এলাকা থেকে ক্রেতারা নিজস্ব এলাকায় প্রাপ্ত পণ্য এ সাইটে সহজেই খুঁজে পাবেন। ভবিষ্যতেও এ সাইটের মানোন্নয়ন অবিচল থাকবে। এমন কথাই বাংলানিউজকে দৃঢ়কণ্ঠে জানালেন সিইও আরিল।
বাংলাদেশ সময় ২০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৩