ঢাকা: সারাদেশের সব মানুষকে একটি নাম্বারে নাগরিক সেবা সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের উদ্দেশে ‘ন্যাশনাল কল সেন্টার’ তৈরি করা হচ্ছে। সে সঙ্গে কোরিয়া সরকারের সহায়তায় আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সোমবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে এসে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাবলিক ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে একটি নাম্বারের মাধ্যমে নাগরিক সেবার নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি সম্পন্ন করতে পারলে নাগরিক সুবিধা পাওয়া আরো সহজ হবে।
তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে চীন ৩০ বছরের একটি তথ্যপ্রযুক্তি পরিকল্পনা তৈরি করে। সে অনুযায়ী তারা কাজ করে। একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ২০০০ সালে ১৫ বছরের জন্য একই ধরনের মাস্টারপ্ল্যান করে। দু’টি দেশই তাদের পরিকল্পনা তৈরি করে ও তা বাস্তবায়ন করে। আমরাও একইভাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে এগিয়ে যেতে চাই।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অনলাইনে সেবা প্রদানের কলেবর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ডেটা সেন্টারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষে দেশের ৫ম বৃহত্তম টায়ার-৪ সার্টিফাইড ডেটা সেন্টার গড়ে তোলা হবে এবং সেখানে ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তি সংযোজন করা হবে, জি-ক্লাউড স্থাপন করা হবে। ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি স্থাপন করা হবে। উদ্ভাবন ও উৎকর্ষতাকে অনুপ্রেরণা প্রদান ও বাস্তবায়নের জন্য একাডেমি ফর ইনোভেশন, ডিজাইন অ্যান্ড এক্সিলেন্স (আইডিএ) স্থাপন করা হবে।
কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কেটে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মোবাইল গেমস সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করে নিজেদের তৈরি করে নেওয়া হচ্ছে। চলমান মোবাইল অ্যাপস কর্মসূচির অভিজ্ঞতার আলোকে এবং মোবাইল অ্যাপস কর্মসূচির বিকাশের স্বার্থে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, একটি যুগোপযোগী সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি স্থাপন করা হবে। বর্তমান বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ তথ্যপ্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহারের ফলে প্রতিদিন আগের চেয়ে আরো অনেকগুণ বেশি তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে, ফলে বিগ ডেটা অ্যানালিটিকস একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বিগ-ডেটা অ্যানালিটিকস ল্যাব স্থাপন করা হবে এবং এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
সারাদেশে আরো ১০টি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হবে। আমাদের দেশে উৎপাদিত এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সফটওয়্যারগুলোর মান নির্ধারণের জন্য সফটওয়্যার সার্টিফিকেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার জন্য ইনকিউবেশন স্থাপন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ডেভেলপার নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যশোর হাইটেক পার্কের ১ম পর্যায়ের কাজ আগামী মার্চে শেষ হবে। হাইটেক পার্কগুলো স্থাপনের মাধ্যমে আগামী চার বছরে ৭০ হাজার দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অ্যাম্পলয়ি ইনসেনটিভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। আইটি/আইটিইএস ব্যবসা থেকে উদ্ভুত আয়কে আগামী ২০১৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমজিআই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল অ্যাপস এবং গেমসের বাজার হবে ৩.৫ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বিশাল বাজারে সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপার তৈরি করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরের জন্য ইতোমধ্যে ২৫টি মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে। আরো ৫৭৫টি মোবাইল অ্যাপস তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সারাদেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে এসে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাবলিক ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পুরাকীর্তি, ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ৪০ হাজারেরও বেশি ছবি সংযোজন করা হয়েছে। এতে রয়েছে ১৫ লাখের বেশি কন্টেন্ট। এছাড়াও শিক্ষক বাতায়ন, তথ্য বাতায়ন, সেবাকুঞ্জ ও ফর্মস পোর্টাল চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫