ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অ্যাপসেই থানা-হাসপাতাল-ফায়ার সার্ভিসের সেবা

মেহেদী হাসান পিয়াস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
অ্যাপসেই থানা-হাসপাতাল-ফায়ার সার্ভিসের সেবা

ঢাকা: বিপদ-আপদ কি বলে-কয়ে আসে? এলেও, কোনো বিপদ-আপদের জন্যই আমরা প্রস্তুত থাকি না সাধারণত। থাকলেও, সমূহ সে বিপদ থেকে উদ্ধারের অবলম্বন খুঁজে পাওয়া দায়।

তাছাড়া রাস্তাঘাটে চলাফেরায় নানা ঝুট-ঝামেলা তো লেগেই থাকে। তাই বলে কি জীবন থেমে থাকে কারো? থাকে না। নিরন্তর জীবন-যাপনে বিপদ-আপদ, ঝুট-ঝামেলা সামলেই চলতে হয় সবাইকে।    
 
সেই সামলে চলার কাজটি খানিকটা সহজ করে তুলতেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে মানুষ। পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনকে নিরাপদ-নির্বিঘ্ন করে তুলতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। আসলে প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠছে দিনদিন। বিশেষ করে স্মার্টফোন প্রযুক্তিতো এখন মানুষের হাতে হাতে।
 
প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম এখন মোবাইল ফোন। শুথু মোবাইল ফোন বললে ভুল হবে ‘স্মার্টফোন। ’ যদিও বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে তরুণরা। তারপরও সব বয়সী মানুষের মধ্যেই এই স্মার্টফোন প্রযুক্তির উপযোগিতা বেড়েই চলেছে। ফলে ইন্টারনেট প্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোন এখন নিছক বিলাসজাত পণ্য নয়। যদিও সাধ্যের কিছুটা বাইরে গিয়ে হলেও পছন্দের স্মার্টফোনটিই কিনছেন কেউ কেউ।
 
মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্যই হলো সীমিত সাধ্যে সর্বোচ্চ সাধ মেটানো। ফলে সুলভ মূল্যে কিংবা বেশ দাম দিয়ে কেনা ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনটি দিয়ে কি কেবল যোগাযোগ রক্ষা করলেই চলে? একেবারেই না। যোগাযোগ ছাড়াও এর নানামুখী ব্যবহার আছে, হচ্ছেও। আর স্মার্টফোনের নানামুখী ব্যবহার বাড়িয়ে তুলছে নিত্য-নতুন প্রয়োজনীয় নানা অ্যাপ্লিকেশন।
 
সুখবর হলো, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে। ফলে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই অনিয়ম-দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রে ভরা সরকারের সেবাসংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোরও।   
 
তাই তো বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং সরকারি হাসপাতালের ফোন নম্বর, ঠিকানা, ম্যাপ নিয়ে সম্পূর্ণ স্মার্টফোনভিত্তিক একটি নতুন অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এক্সেস-টু-ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি সার্ভিস’ নামে অ্যাপ্লিকেশনটি বাস্তবায়ন করেছে ‘ই-লজিক্যাল আইটি লিমিটেড’। এর আগে ডিএমপি, বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশনের বাস্তবায়ন করেছে দেশীয় সফটওয়্যার নির্মাতা এ প্রতিষ্ঠানটি।  
 
এটুআই’র ইনোভেশন ফান্ড প্রকল্পের আওতায় ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে তরুণ প্রকৌশলী মনসুর হোসেন তন্ময়ের আবেদনে অ্যাপ্লিকেশনটি বাস্তবায়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং সার্বিক সহযোগিতা পায় প্রতিষ্ঠানটি।
 
http://goo.gl/Grd20k লিংক থেকে যে কেউ এই অ্যাপটি ডাউনলোড বা ইনস্টল করতে পারবেন। এছাড়া https://youtu.be/dMAHaQMh4zQ ইউটিউবের এই লিংকে যেয়ে ব্যবহারকারী দেখে নিতে পারবেন অ্যাপটির ব্যবহারবিধিও। অথবা https://play.google.com/store/apps/details?id=bd.com.elites.bes
গুগল প্লে-স্টোরের এই লিংক থেকে ফ্রি ইনস্টল করে নিতে পারেন যখন খুশি।
 
আপাতত এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। তবে অচিরেই বাকি সব অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোন ব্যবহারকরীরা অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলানিউজকে তেমনটাই জানিয়েছেন অতি প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনটির দুই তরুণ প্রকৌশলী নির্মাতা মো. তারিক মাহমুদ ও মনসুর হোসেন তন্ময়।   
 
অ্যাপটি ব্যবহার করে যে কেউ খুব সহজে বাংলাদেশের যে কোনো পুলিশ স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কিংবা হাসপাতাল খুঁজে বের করতে পারবেন। সহজেই ফোন করতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত যে কোনো স্টেশনে। ম্যাপ থেকে সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন আপনার সবচেয়ে কাছের থানা, ফায়ার স্টেশন কিংবা হাসপাতাল। প্রয়োজনে দেখে নিতে পারবেন কাছের বা দূরের পুলিশ স্টেশন, ফায়ার স্টেশন বা হাসপাতালের যাবার সহজ পথটিও।
 
সহজেই যে কোনো বন্ধু কিংবা প্রিয়জনকে এসএমএস-এর মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন এসব স্টেশন বা হাসপাতালের ফোন নম্বর বা ঠিকানা।
 
অ্যাপটিতে আরও থাকছে আপনার পরামর্শ, মতামত কিংবা অভিযোগ সরাসরি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানানোর ব্যবস্থা। জরুরি মুহূর্তে মাত্র এক ক্লিকে পুলিশ কিংবা ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগের জন্য রয়েছে দু’টি হট-বাটন। এছাড়া এই অ্যাপটি ব্যবহার করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কিংবা হাসপাতালের ফেসবুক পেজের সাথেও সরাসরি তথ্য ও বার্তা আদান-প্রদান করা যাবে।
 
অ্যাপ্লিকেশনটির আরেকটি সুবিধাজনক বিষয় হলো ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। তবে ম্যাপ খুঁজে নিতে হলে ব্যবহারকারীর অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।    
 
অ্যাপটি সম্পর্কে জানতে চাইলে এর প্রধান নির্মাতা মো. তারিক মাহমুদ বলেন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটছে। ক’দিন আগেওতো রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসে প্রতি মুহূর্ত তটস্থ থাকতে হতো। কিন্তু আমরা নিরাপদে থাকতে চাই, স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে চাই, ভালো থাকতে চাই। জনসাধারণের সেই নিরাপদ এবং ভালো থাকার উপায়গুলোতে এই অ্যাপটি নতুন মাত্রা যোগ করবে আশা করি। আর এ ধরনের একটি কাজে সরাসরি সহযোগিতা করার জন্য বর্তমান সরকারকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
 
অ্যাপটি সফলভাবে বাস্তবায়নে সার্বিক দায়িত্ব পালনকারী মনসুর হোসেন তন্ময় বলেন, সবাইকে অ্যাপটি ডাউনলোড বা ইনস্টল করে করে স্মার্টফোনে রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। নিজ উদ্যোগেই যেন সবাই তথ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করেন। সবার অংশগ্রহণে আমরা গড়ে তুলতে চাই একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
 
জানতে চাইলে প্রকল্পের সহযোগী কর্মকর্তা নাহিদ আলম জানান, সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের ‘জরুরি সেবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’ প্রকল্পটি চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫-তে উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পটির শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী।
 
তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য সারা দেশের সকল থানা, হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিসের যোগাযোগের তথ্য নিশ্চিত করতে জাভা এবং অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফরমে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করছে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
এমএইচপি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।