ঢাকা: তথ্যপ্রযুক্তির যুগে গণমাধ্যমকে বাধা দিয়ে সংবাদ দমন করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গহওর রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এখন সামাজিক গণমাধ্যম অনেক শক্তিশালী।
শনিবার (০৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘সুশাসন ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর পুরস্কার দেওয়া হয়।
ড. গহওর রিজভী বলেন, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ছাড়া কোনো দেশের গণতন্ত্র ও সরকার চলতে পারে না। গণমাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে অনেক পর্যবেক্ষক আসে আমার কাছে। তারা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রশংসা করে। কিন্তু আমি জানি, এখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। এর মধ্য দিয়েও সাংবাদিকতা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন বাংলাদেশে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওপর পুরস্কার দেওয়া হয়। এটা সাংবাদিকতার জন্য একটা ভালো দিক।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. আকবর আলি খান।
‘গণমাধ্যম ও সুশাসন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একুশে টেলিভিশনের এডিটর-ইন-চিফ ও প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল।
আলোচনায় অংশ নেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, এমআরডিআই’র নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার পরও আমাদের দেশের গণমাধ্যম ঝুঁকি নিয়ে ভালো কাজ করে যাচ্ছে। এই মাধ্যম সরকারের সহযোগী ও সহযোদ্ধা হিসেবেই কাজ করে থাকে। তাই গণমাধ্যম যেমন সরকারের ইতিবাচক তথ্য প্রচার করবে, তেমনি সরকারের সমালোচনাও করবে। এই সমালোচনা সরকারকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, টিআইবি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান করায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কিছুটা হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. আকবর আলি খান বলেন, অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যে অর্জন তা গর্ব করার মতো। বিশেষ করে বিশ্বে সুশাসনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচের দিকে হলেও এদেশের গণমাধ্যমের অর্জন প্রশংসনীয়।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে টিআইবি’র সমালোচনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিআইবি সরকারের শত্রু নয়, বন্ধু। তবে সব সরকারই টিআইবিকে প্রতিপক্ষ মনে করে, এটা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, টিআইবি’র কোনো প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি থাকলে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু টিআইবি বন্ধ করে দেওয়ার মতো হুঁশিয়ারি আসাটা ঠিক নয়।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০১৫
এ বছর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতায় প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেলের সম্পাদক মিজান মালিক এবং নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ।
প্রতিবেদনে সাহসিকতার সঙ্গে ভিডিওচিত্র ধারণ করায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক কাজী মোহাম্মদ ইসমাইলকেও বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
এছাড়া, এ বছরই প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক জি এম মোস্তাফিজুল আলম পুরস্কার লাভ করেন।
প্রতিবেদনটির ভিডিও চিত্রগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম রতনকেও বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
বিচারকমণ্ডলীর বিবেচনায় মানসম্মত প্রতিবেদন না পাওয়ায় এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক বিভাগ ও ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ে প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
বিজয়ী সাংবাদিকদের সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। আর দুই ভিডিও চিত্রগ্রাহককে পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫/ আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা
এডিএ/টিআই