ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় স্থান পেয়েছে সাইবার নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যু। ফেসবুকের মাধ্যমে যাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় সেজন্য বাংলাদেশে ফেসবুকের স্থানীয় একটি অ্যাডমিন অফিস প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্থানীয় অ্যাডমিন প্রতিষ্ঠা করে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানান বৈঠক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রোববার (০৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ফেসবুকের দক্ষিণ এশিয়ার পলিসি ম্যানেজার দিপালী লিবার হেন ও আইন উপদেষ্টা বিক্রম লাংয়ের বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবে মৌন সম্মতি দিয়ে জানিয়েছেন, তারা ফিরে গিয়ে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
যেকোনো জরুরি পরিস্থতিতে সরকারের অনুরোধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সাঁড়া দেয়ার জন্য বলা হয় বৈঠকে।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বৈঠকে জানান, বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এবছরও বেশ কিছু অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের মধ্যে নারী ও শিশুর প্রতি হয়রানি উল্লেখযোগ্য, এক পর্যায়ে আত্মহত্যার মত ঘটনাও ঘটেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদদের নিয়ে কটূক্তি ও আপত্তিকর ছবি পোস্ট করার বিষয়গুলো বৈঠকে উঠে আসে বলে জানায় সূত্র।
ফেসবুকে ‘বাঁশের কেল্লা’ নামের পেজটি বন্ধ করার জন্য একাধিকবার সরকার অনুরোধ করেছিলো, কিন্তু সাড়া আসেনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে পোস্ট করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উস্কানী ছড়িয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতনের বিষয়গুলো ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হয়। রামুতে ফেসবুকের মাধ্যমে উস্কানী ছড়িয়ে হামলার ঘটনা, প্যারিসে আইএস হামলা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
ফেসবুকে হাজারো সমস্যা থাকলেও অভিযোগে একটিও সমাধান করেনি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ, বৈঠকে জানান তারানা হালিম।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ফেসবুক ভূমিকা পালন করলেও অপব্যবহার হচ্ছে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে অনেক অভিযোগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু আপনারা সাড়া দেননি, আশা করি এই সভার পর সাড়া দেবেন। কত দ্রুত সময়ের মধ্যে সাড়া দেয়া হবে- তা নিয়েও আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক একএম শহিদুল হকসহ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা ফেসবুকের দুই কর্মকর্তাকে বলেন, জুররি বিষয়ে সরকার যোগাযোগ করলে আপনারা সাড়া দেবেন। প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য বিষয়ে ভুয়া তথ্য দিলে বা এধরনের কনটেন্ট দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালে জরুরি ভিত্তিতে আইডি ব্লক করা, সব ভুয়া আইডি চিহ্নিত করে ডিলিট করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভেরিফিকেশন করে আইডি খুলে অন্য ভুয়া আইডি ডিলিট করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ফেসবুকের আলোচনার সুযোগ আছে জানিয়ে বৈঠকে প্রত্যেক বিভাগের একজন করে ফোকাল পার্সন তৈরি করার সুপারিশ এসেছে।
এসময় পলক জানান, ফেসবুকে সঠিক আইডি থাকলে সহজেই ট্র্যাক করা যায়। ভুয়া আইডি দিয়ে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের আইডি ডিলিট করা উচিত, জানায় বৈঠক সূত্র।
ফেসবুকের স্থানীয় এডমিন স্থাপনের প্রস্তাব দেন তারানা হালিম। তিনি জানান, ফেসবুক বন্ধ করা হয়নি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কারণে সাময়িক বন্ধ রয়েছে। বৈঠকে নেতিবাচক বিষয়ের পাশাপাশি ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে পলক ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে জানান, স্থানীয় অ্যাডমিন প্রতিষ্ঠা হলে আপনাদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আইটি এবং ফেসবুকের জন্য আকর্ষণীয় মার্কেট বাংলাদেশ।
কর্মকর্তারা বৈঠকে জানান, ফেসবুকের পলিসি অনুযায়ী সঠিক পরিচয় দিয়ে আইডি খুলতে হবে। কেউ কাউকে হয়রানি করলে অটোমেটিক সেই পোস্ট মুছে ফেলতে হবে। এজন্য সরকারের অনুরোধের চুক্তির বিষেটি নিয়ে আলোচনা হয়।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দুই কর্মকর্তা বৈঠকে জানান, পলিসি অনুযায়ী তারা সহায়তা করবে। অ্যাডমিন এবং অন্যান্য বিষয়ে ফিরে গিয়ে তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।
বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ফেসবুক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। কনটেন্ট ফিল্টার করতে পারবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব ধরনের কথা হয়েছে, ফিল্টার করা এবং কতখানি চলবে সবকিছু কথা হয়েছে।
নিরাপত্তার কারণে গত ১৮ নভেম্বর থেকে বন্ধ আছে ফেসবুক। বিকল্প পথে ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসে আলোচনায়, জানায় বৈঠক সূত্র।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
এমআইএইচ/বিএস
** আলোচনা ফলপ্রসূ, শিগগিরই খুলবে ফেসবুক