ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

ফিরে দেখা-২০১৫

মানবকল্যাণকর যুগান্তকারী ১৫ আবিষ্কার (পর্ব ১)

জনি সাহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
মানবকল্যাণকর যুগান্তকারী ১৫ আবিষ্কার (পর্ব ১)

এগিয়ে চলেছে সময়, এগিয়ে চলেছে প্রযুক্তি। সময় এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে মনুষ্য-সভ্যতাও।

ঝাপসা হয়ে আসছে ২০১৫ সালের ক্যালেন্ডার। এবার ঝাপসা হতে থাকা ক্যালেন্ডারটি থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানোয় ব্যস্ত সময়, প্রযুক্তি এবং মনুষ্যসভ্যতা।

হিসাবের খাতা বলছে, বরাবরের মতো এবারও ‘কল্যাণকর’ কিছু রেখে যাচ্ছে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যেতে থাকা বছরটি। আশীর্বাদ হিসেবে দিয়ে যাচ্ছে ‘ময়লা থেকে সুপেয় পানি তৈরির যন্ত্র’, ‘গৃহহীন তরুণদের এইচআইভি প্রতিরোধে এলগরিদম’, ‘ডিজঅ্যাবল ব্যক্তিদের জন্য ‘স্নিকার’ টেকনোলজি’, ‘সংক্রামক রোগ নির্ণয়ে বিশেষ স্ট্রিপ’, ‘পরিবেশবান্ধব ইট’, ‘শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্যকারী যন্ত্র’, ‘শরণার্থীদের জন্য ‘টেকসই’ বাড়ি’, ‘তেল শোষণকারী ‘ন্যানোশিট’, ‘আয়োডিনের যোগানদাতা টিপ’, ‘ব্লাড সুগার পরীক্ষার ট্যাটু’, ‘অন্ধদের ‘দেখাতে’ সাহায্য করার অ্যাপ’, ‘ময়লা পানি ফের ব্যবহার উপযোগী করার ফিল্টার’ ইত্যাদি।

বছর শেষের হিসাব মিলিয়ে বাংলানিউজও পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মানবকল্যাণকর ১৫টি যুগান্তকারী ‘আশীর্বাদের’ কথা। এ ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব পড়ুন আজ।
 

ময়লা থেকে সুপেয় পানি তৈরির যন্ত্র
পৃথিবীর প্রায় আড়াই বিলিয়ন (২৫০ কোটি) মানুষ নিরাপদ খাবার পানি পায় না, তাদের কাছে মেশিনটি নিঃসন্দেহে মানবতার জন্য আশীর্বাদ।

২০১৫ সালের শুরুতে মানবতার কল্যাণে এ যন্ত্র আবিষ্কারের কথা জানান মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস’র সংস্থা ‘গেটস ফাউন্ডেশন’র বিজ্ঞানীরা।

জানিকি অমনিপ্রসেসর (Janicki Omniprocessor) নামের মেশিনটি মাত্র পাঁচ মিনিটেই ময়লা-আবর্জনা থেকে একইসঙ্গে তৈরি করবে নিরাপদ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও সার।

মেশিনের উৎপাদিত পানি খেয়ে সে সময় বিল গেটস নিজেই বলেছিলেন, অন্যসব বোতলজাত পানির মতো এটিও নিরাপদ ও সুপেয়।


গৃহহীন তরুণদের এইচআইভি প্রতিরোধে এলগরিদম
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বিশ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়, যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এরমধ্যে গড়ে ১১ শতাংশেরই এইচআইভি পজেটিভ। আর এ ভাইরাসটি যেন অন্যদের মাঝে না ছড়ায়, তা প্রতিরোধে একটি এলগরিদম তৈরি করেছেন গবেষকরা।

পিএসআইএনইটি নামে এই এলগরিদম তৈরি করেছেন ইউনির্ভাসিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’স স্কুলস অব সোশ্যাল ওয়ার্ক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষকরা।

এই এলগরিদম একটি কমিউনিটির গৃহহীন মানুষের মধ্য থেকে ‘একজন’ বেছে নিয়ে এইচআইভি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। আর লস অ্যাঞ্জেলসে স্থানীয় কম্পিউটারের মাধ্যমে গবেষকরা ওই কমিউনিটির সবাইকে ‘একীভূত’ করে এ বিষয়ে ক্যাম্পেইন চালাবেন।

গবেষকদের মতে, মৌখিক প্রচারণার তুলনায় ৬০ শতাংশ দ্রুত তথ্য ছড়ানো সম্ভব পিএসআইএনইটি’র মাধ্যমে।


ডিজঅ্যাবল ব্যক্তিদের জন্য ‘স্নিকার’ টেকনোলজি
সেরিব্রাল পালসিতে (স্থায়ীভাবে শারীরিক অক্ষমতা, যা ছোটবেলায় দেখা দেয়) আক্রান্ত ম্যাথিউ ওয়ালজার, ২০১২ সালে ক্রীড়াবিদদের সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘নাইকি’কে এক চিঠিতে লেখেন, ডিজঅ্যাবল ব্যক্তিরা সহজে পড়তে ও খুলতে পারেন এমন স্নিকার তৈরি করুন, যা ব্যবহারে ‍অন্য কারও সাহায্যের প্রয়োজন হবে না।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর ‘ফ্লাইইজ’ নামে একটি ‘স্নিকার’ আনার ঘোষণা দেয় নাইকি, যার পেছনে রয়েছে একটি জিপার (চেইন)।

বাধা ও খোলার ঝামেলার কারণে ‘ফ্লাইইজ’-এ লেইসের পরিবর্তে জিপার ব্যবহারের বিষয়ে নাইকি জানায়, এর ফলে ডিজঅ্যাবল‍রা এক হাতে জুতাটি খুলতে পারবেন ও ইচ্ছেমতো পা নাড়াচাড়া করতে পারবেন।

তবে ‍স্নিকারটির আধুনিকায়ন ও ‘অক্ষম বান্ধব’ করতে ওয়ালজারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান নাইকির সিনিয়র ডিরেক্টর তোবি হ্যাটফিল্ড।


ইন্টারনেট অন এ মাইক্রোচিফ
এ বছর বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেন ‘ই-গ্রেনারি পকেট লাইব্রেরি’ নামে একটি মাইক্রোচিফ। এটি স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটে স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই শিক্ষাসহ যাবতীয় তথ্য-উপকরণ পেতে পারে লাখ লাখ মানুষ।

বিশাল তথ্য সমৃদ্ধ ‘ওয়াইডারনেট’ নামে একটি প্রজেক্টের আওতায় এ মাইক্রোচিফ তৈরি করেছে ইউনির্ভাসিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা। তারা বলছে, বিভিন্ন দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্কুল অব ইনফরমেশন সায়েন্সেস বিভাগে এ মাইক্রোচিফ ‘লাইব্রেরি অন এ চিফ’ হিসেবে কাজ করছে।


গাছ থেকে জ্বলবে বাতি
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর প্রত্যন্ত অঞ্চলের শতকরা ৪২ শতাংশ মানুষের বিদ্যুৎ সুবিধা নেই। এক জরিপের এ তথ্য তুলে ধরে দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন।

তাদের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকের জীবন ‘আলোকিত’ করতে ‘দ্য ল্যাম্পস পাওয়ার্ড বাই প্ল্যান্টস’ নামে এক ধরনের প্রযুক্তি এনেছেন ইউনির্ভাসিটি দ্য ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির (ইউটিইসি) বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রযুক্তিতে গাছপালার ময়লা মাটিতে পচে অক্সিডেশনের সময় ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রন তৈরি করবে। পরবর্তী সময়ে ইউটিইসি দল ইলেকট্রনগুলো ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করবে। এর মাধ্যমে একটি এলইডি বাল্ব দুই ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বলবে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
জেডএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।