ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

মেধা পাচার ঠেকাতে ‘হাই প্রোফাইল’ ফেলোশিপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
মেধা পাচার ঠেকাতে ‘হাই প্রোফাইল’ ফেলোশিপ

ঢাকা: তথ্য প্রযুক্তিগত মেধা পাচার ঠেকাতে সরকার হাই প্রোফাইল ফেলোশিপ চালু করবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
 
পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে গবেষণার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী।


 
রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে একথা বলেন পলক।
 
ব্রেন ড্রেইন বা মেধা পাচার ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে পলক বলেন, প্রতি বছর হাই প্রোফাইল আইসিটি ফেলোশিপ প্রদান করবো। গ্রাজুয়েশন করার পর মাসে দুই লাখ টাকা পাওয়া যাবে। আমাদের মেধাবী ছেলেরা বড় বড় চাকরির অফার পেয়ে গুগল, ফেসবুক বা মাইক্রোসফটে চলে যাচ্ছেন। এ প্রবণতা যেন অন্ততপক্ষে ঠেকাতে পারি। এ ফেলোশিপ নিয়ে তারা বাংলাদেশে থাকবেন এবং দেশের জন্য কাজ করবেন।

এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ অনুরোধ করেছিলেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
 
পলক বলেন, ইনোভেশন ডিজাইন এন্টারপ্রেনার একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান করা হবে যেখানে শিশু, কিশোর, তরুণ তাদের যেকোনো উদ্ভাবনী চিন্তা জমা দিতে পারবেন এবং গবেষণা করবেন। অল্পদিনের মধ্যে এটা তৈরি করবো।
 
যে সব স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব নেই সেখানে ল্যাব স্থাপন করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা ভবিষ্যত ডিজিটাল বাংলাদেশের মহাকাব্য রচনা করবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প যারা পূর্ণ করবে সেই ডিজিটাল সৈনিকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটিও কম্পিউটার ল্যাববিহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা স্কুলে শেখ রাসেল কম্পিউটার কাম ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব করে দেবো।
 
কম্পিউটার ল্যাবের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রত্যেক জেলায় মেনটর তৈরি করা হবে বলে জানান পলক।
 
পলক বলেন, উনিশ বছর বয়সী জুকারবার্গ ফেসবুক তৈরি করে বিশ্বজয় করেছেন, তোমরাও পারবেন। তোমাদের মেধাবী প্রজন্মের ওপর নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। সাহসী, মেধাবী প্রজন্ম আমাদের প্রয়োজন।
 
দ্বিতীয়বারের মতো এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার প্রোগ্রামিংয়ে জুনিয়র ক্যাটাগরি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রিজেন্ট এডুকেয়ারের নবম শ্রেণির ছাত্র রুহান হাবিব। সিনিয়র ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের আসিফ জাওয়াদ।
 
এছাড়া জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় কুইজ পর্বে জুনিয়র ক্যাটাগরিতে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ফাহিম আবরার, সেকেন্ডারিতে পাবনা জিলা স্কুলের শাহরিয়ার রিজভী এবং হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সেজান আহমেদ।
 
প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় জুনিয়ার ক্যাটাগরিতে ১৬ জন এবং সিনিয়র ক্যাটাগরিতে ২২ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। কুইজের তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন মোট ২০ জন করে মোট ৬০ জন।

আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো দেশব্যাপী ১৬টি অঞ্চলে আয়োজিত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নিয়ে চূড়ান্ত কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ী ৯৬৮ জন এবং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিজয়ী ৩১৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ১৬টি জেলায় প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
 
এর আগে ৬৪ জেলায় ৭০০ হাই স্কুলে প্রচারণামূলক অ্যাক্টিভেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যেখানে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
 
ড. জাফর ইকবালের তিন পরামর্শ
মাত্র ৬০ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হলেও যারা পায়নি তাদের উদ্দেশ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, পুরস্কার না পেলে একটু মন খারাপ হতে পারে। পুরস্কার বড় কথা না, সারাদেশ থেকে অংশগ্রহণটাই বড় কথা।
 
কিশোর-তরুণদের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় তোমরা সবাই মিলে চিন্তা-ভাবনা করেছ, এতে বাংলাদেশ একটু সম্পদশালী হয়েছে। নতুন মিলেনিয়ামে সারা পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক সায়েনটিস্ট সবাই মিলে বলেছেন- এখানে নলেজই সম্পদ। একটা দেশের সম্পদ দেশের নলেজ।

‘যদি বই পড় বাংলাদেশের সম্পদ বেড়ে যায়, প্রোগ্রামিং কর তাহলে সম্পদ বেড়ে যায়। চার কোটি বাচ্চা ঠিকমতো লেখাপড়া করলে বাংলাদেশ এমনই সম্পদশালী হয়ে যাবে যে তাদের আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না। ’
 
তিন নম্বর পরামর্শ দিয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, পৃথিবীর সব থেকে ক্ষমতাশালী হলো মানুষের ব্রেইন। এটাকে ব্যবহার করে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবে যাতে তোমার ধারের কাছে কেউ আসতে না পারে।
 
নিজের ইউনিভার্সিটিতে রোবট বা ড্রেন নিয়ে লেখাপড়া না করালেও এখন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে রোবট তৈরি হচ্ছে, সে রোবট হেঁটে বেড়াচ্ছে, হাসছে। ওরা যে ড্রেন বানায় সেটা আকাশে উড়ে উড়ে লাইভ ছবি পাঠায়। তারা পেরেছে, তোমরাও পারবে।
 
আইসিটি বিভাগের আয়োজনে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’র প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন করা হয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা।
 
রবি’র চিফ করপোরেট অ্যান্ড পিপল অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদ বলেন, সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে জড়িত থাকাটা আনন্দের। এ ধরনের কাজে জড়িত থাকলে প্রতিভা বিকশিত হয়।
 
তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিভা বের করে আনার জন্য এটি একটি ভালো পদক্ষেপ। এ আয়োজন তরুণদের মাঝে তথ্য-প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দেবে। বরি এ আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পরে আনন্দিত।
 
রবি ক্রিকেট ও এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে আমরা গোটা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।
 
বুয়েটের অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ বলেন, তরুণদের শক্তি হলো অপরিসীম। তরুণদের মাঝে প্রযুক্তি ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রোগ্রামিংয়ের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
 
আইসিটি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে আইসিটি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হারুণ অর রশিদ প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৫
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।