উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। যদিও বাংলাদেশে ই-কমার্সের সূচনা নব্বই দশকের শেষের দিকে।
তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় এদেশে ই-কমার্সের অগ্রগতি সেভাবে হয় নি। সূচনাকাল থেকে আজ অবধি এখানে সত্যিকার অর্থে এ খাতের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে আর কতটুকুইবা ব্যবসার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে এ নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন।
বাংলাদেশে ই-কমার্সের বর্তমান প্রেক্ষাপট জানতে বাংলানিউজ কথা বলেছে ই-কমার্সের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সহ ভোক্তাদের সঙ্গে।
এ বিষয়ে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলছেন, বর্তমানে বেশ কিছু দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসায় করছে ঠিক, তবে তার পরিসর কম।
এই অনগ্রসরতার কারণ হিসেবে তাদের অভিমত, মানুষের মাঝে ই-কমার্স সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না পৌছানো। আর ধারণা পেলেও অনেকের এখনও বিশ্বাস ও আস্থার অভাব রয়েছে পাশাপাশি ইন্টারনেট সমস্যা।
এসব ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের গুনাগুণ ঠিক থাকেনা এমনকি প্রতারিত হওয়ার আশংকা থাকে। নেই সঠিক নীতিমালা, ফলে যে যার ইচ্ছে মত এখানে এসে প্রতারণা করছে ক্রেতাদের সাথে।
তারা মনে করছেন, এসব প্রতারণা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন সরকারি-ব্যসারকারি উদ্যোগ।
আজকের ডিল’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, দিন দিন অগ্রগতি হচ্ছে এই খাতের। এর পেছনে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ফেসবুকের। কারণ এ মাধ্যমেই প্রায় ৭০ শতাংশ অর্ডার আসে আমাদের।
তিনি বলেন, প্রতিদিন ৫০ শতাংশ অর্ডারই ঢাকার বাহির থেকে আসে। কিন্তু ডেলিভেরি সমস্যার জন্য সঠিক সময়ে পণ্য পৌছানো সম্ভব হয়না। সরকারি পোস্ট অফিসগুলো ই-কমার্সের পণ্য সরবরাহে কাজ করলে এর সমাধান হত। তাই এদিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত।
তাছাড়া এখন সবাই স্মার্ট, তাই অবশ্যয় সচেতনতার সহিত পণ্য কিনতে হবে।
ক্রেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ক্রেতারা কিছু সময় সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেন। আমরা তার সমাধান দিই। চেষ্টা করছি আরো ভালো সেবা দেবার।
ফাহিম মাশরুরের মতে, দেশের সম্ভাবনাময় এ খাতটির প্রসার ও জনপ্রিয় করতে ব্যবসায়ীদের ভালো সেবা দিয়ে ক্রেতাদের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে হবে।
ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশর (ই-ক্যাব ) সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, গত এক বছরের তুলনায় ই-কমার্স ব্যবসার অবস্থা ভালো। নতুন ক্রেতা তৈরি হয়েছে, বেচাকেনাও তুলনামূলক ভালো হচ্ছে।
তবে বড় সমস্যা কুরিয়ার সার্ভিস। কেননা কুরিয়ার সার্ভিসের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের ব্যবসার মূলধনের একটা অংশ একটা সময় ধরে সেখানে রয়ে যাচ্ছে। ফলে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ব্যহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এটা সত্য যে ক্রেতাদের মধ্যে এখনো বিশ্বাস, আস্থার অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি, ব্যাসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা প্রয়োজন। তাহলে সকল মানুষ ই-কমার্স সম্পর্কে জানতে পারবে এবং সুষ্ঠ ধারণা পাবে তারা।
ক্রেতাদের বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরলে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ক্রেতাদের সচেতন হতে হবে।
তার পরামর্শ প্রফেশনাল নয় এমন সাইট থেকে পণ্য না কেনা। ইক্যাবে প্রায় ৫০০ মেম্বার কোম্পানি আছে তাদের থেকে পণ্য কিনবেন এতে করে যেকোন আভিযোগ থাকলে সমধান করার চেষ্টা করতে পারবো। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যয় কঞ্জুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা এগিয়ে আসলে ভোক্তারা তাদের অধিকার আদায়ে সফল হবেন।
এ ব্যাপারে হেলাল শিকদার নামে এক ক্রেতা বলেন, একবার একটা ই-কমার্স সাইটে ট্যাবের অর্ডার দেয়। কিন্তু ওরা যে ট্যাবটা পাঠালো তার সাথে সাইটে দেয়া ট্যাবের ছবি, বৈশিষ্ট্যের কোনো মিল নেই।
যদিও পরে তিনি কোনো অভিযোগ করেন নি। কিন্তু এই ক্রেতা মনে করছেন, এমনটা করলে মানুষ পণ্য কিনতে আগ্রহ হারাবে।
হাসিবুর রহমান নামের একজন বলেন, পণ্য কেনার পর কোনো অভিযোগ জানাতে তাদের হট লাইন নম্বরে ফোন দিলে সঠিক সমাধান দিতে পারে না। শুধু পারে পণ্যের অর্ডার দিলে তা কনফার্ম করার জন্য তোরজোড় করতে। এছাড়া অভিযোগ করলে সিগন্যাল সমস্যা বলে ফোনটা কেটে দেয়।
সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে এখন এটাই বলা যেতে পারে যে, ই-কমার্স নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা এখোনি সচেতন না হলে ক্রেতাদের আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে এই সেক্টর থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৬
এমআইটি/এসজেডএম