কালদারি: বিশ্ব যত এগুচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগুচ্ছে প্রযুক্তিও। প্রযুক্তি আজ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের এনে দিচ্ছে নানা সুবিধা।
আগের আমলের মতো কালিতে বৃদ্ধাঙ্গুলি ডুবিয়ে তাকে দিতে হচ্ছেনা নাগরিকত্বের প্রমাণ। এখন শুধু ইলেকট্রিক যন্ত্রের ভেতর আঙ্গুলের ছাপ আর চোখ স্ক্যানের মধ্য দিয়েই আজীবনের জন্য হয়ে যাচ্ছে নাগরিকত্বের প্রমাণ। সঙ্গে সঙ্গে নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে তার নাম, জন্ম সাল এবং ঠিকানা।
আর এই স্ক্যানের বিনিময়ে তাকে দেওয়া হবে ১২ ডিজিটের একটা নম্বর। এই নম্বরই প্রমাণ করবে যে, তার পরিচয় সরকারি ভাবে নথিভুক্ত হয়েছে। দেশের যেকোনো জায়গায় তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ ব্যবহার করে নিজের পরিচয় প্রদান করতে পারবেন। এই প্রযুক্তিক সুবিধার ফলে গঙ্গার পাবেন বেশ কিছু কল্যাণমূলক সুবিধা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা অথবা মোবাইল ফোন কিনতে গেলেও এই পরিচয় সুবিধা লাগবে।
তাইতো এই সুবিধা সম্পর্কে গঙ্গার বলেন, ‘মনে হয় আমরা কিছু সুবিধা পাবো। ’
কয়েক দশকধরেই ভারত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে দেশের দরিদ্রতা দূর করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বেশির ভাগ অর্থই স্রেফ অপচয় হচ্ছে। কারণ কালদারির মতো প্রত্যন্ত গ্রামের অদিবাসীরা জীবিকার তাগিদে খুব দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে। আর যে কারণে স্থান ভিত্তিক পরিচয়পত্র অকার্যকর হয়ে যায়। আর তাই এবার পৃথক কিছু করার চিন্তা করেছে ভারত সরকার।
নতুন এই প্রযুক্তি সম্পর্কে ভারতের সফটওয়্যার মুঘল নন্দন এম নিলেকানি বলেন, ‘আমরা যা তৈরি করছি তা একটি রাস্তার মতো। এটা এমন একটা রাস্তা যে রাস্তা দিয়ে ভারতের সবগুলো রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। ’
এ যাবৎকাল নাগরিকদের সঠিক অবস্থান এবং পরিচয় সংক্রান্ত যে সকল সমস্যার সৃষ্টি হতো তার সমাধান দেবে মাত্র ১২ টি ডিজিট। ভারতের বেশির ভাগ গরীব নাগরিকেরই গ্রামভিত্তিক পরিচয়পত্র রয়েছে। যার ফলে সে অন্য কোথাও চলে গেলে দেশের অর্থনীতিতে যেমন চাপ পরে তেমনি সঠিক পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় না। জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক উন্নতির প্রধান শর্ত।
এই প্রকল্পের ফলে দুর্নীতিও অনেক কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সুবিধার ফলে আমলাদের পক্ষে খুব কঠিন হবে জনগণের সুযোগ-সুবিধা মেরে খাওয়া। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি ব্যাপক গণজাগরন সৃষ্টি হয় ভারত জুড়ে। আর এই জাগরণের মূল নায়ক হলো গান্ধীবাদী নেতা আন্না হাজারে। আন্না হাজারের দাবি মেনে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আন্নার ওই আধুনিক পরিচয়পত্র সেবা মেনে নিয়েছেন।
নতুন এই নম্বর ভিত্তিক ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘আধার’ অথবা ‘ফাউন্ডেশন’। এর আওতায় মাত্র ৮ সেকেন্ডের মধ্যে ভারতীয় কোনো নাগরিক কোথায় আছেন এবং তার পরিচয় সম্পর্কে জানা যাবে। একপ্রকার মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করবে এই সুবিধার পেছনে। এর আগে ভারতে যতগুলো পরিচয়পত্র সুবিধা প্রচলিত ছিল তা মূলত জাতি, গোত্র এবং ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি করা হতো।
তবে এক অর্থে এই প্রকল্প ভারতের ব্যার্থতার স্বীকারোক্তি। কারণ বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতে এখনও প্রচুর মানুষ বাস করে যারা দারিদ্রসীমার নিচে। সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতে ৪০ কোটি মানুষ এখনও দারিদ্রসীমার নিচে। এছাড়াও পাঁচ বছরের নিচে বয়স এমন অর্ধেক সংখ্যক শিশুই কম ওজনের।
যদিও বলা হচ্ছে, প্রাযুক্তিক এই সুবিধা দরিদ্রতা হ্রাস করতে সাহায্য করবে। কারণ এই সুবিধার আওতায় মানুষ এখন আর স্থানীয় প্রতিনিধিদের ওপর ভরসা করতে হবে না। তারা তাদের সমস্যা সরাসরি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছেই বলতে পারবে।
পরিচয়পত্র প্রকল্পের প্রধান পরিচালক রাম সেবক শর্মা বলেন, কেউ একজন মানুষের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না। কিন্তু একজন একটা ব্যবস্থা পাল্টে দিতে পারে এবং ওই ব্যবস্থা বলেই ভালো ফলাফল বয়ে আনা সম্ভব।
বিশাল এই তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করতে ভারত সরকার পর্যাপ্ত সুবিধা সম্বলিত একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। আর পুরো প্রকল্পটিই পরিচালনা করছেন অল্প কয়েকজন আমলা। আর তাদের আওতায় কাজ করছে প্রায় একশ’ জন মানুষ। তবে প্রকল্পটির প্রাথমিক কাজ শেষ হয়ে গেলেই বেসরকারি খাতে কাজ বন্টন করে দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় একজন মানুষের জন্য মাথাপিছু খরচ হবে তিন ডলার। খুব শিগরিই তিন কোটি মানুষকে এই সুবিধা দেওয়া হবে এবং ধীরে ধীরে পুরো দেশেই বিস্তৃত করা হবে এই কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় ভোক্তাদের কোনো প্রকার অর্থ প্রদান করতে হবে না।
ভারতের এই পরিচয়পত্র সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার কার্যক্রম শেষ হলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের পরিচয়ধারী বিশাল সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডার। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিশাল তথ্য ভাণ্ডার হলো ইউএস-ভিজিট প্রোগ্রাম।
বাংলাদেশ সময় ১৫২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১১