এদিকে এই রায়ের ফলে সমুদয় অর্থ পরিশোধ করলে অনেকে ফোরজি লাইসেন্সের নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনটি হলে শুল্ক জটিলতার কারণে থমকে পড়তে পারে ফোরজি লাইসেন্সের নিলাম।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ মোবাইল ফোন অপারেটররা খুব শিগগিরই ফোরজি সেবার লাইসেন্স পাবে বললেও এখনো লাইসেন্স পাননি। এর আগে তিনি বলেন, মার্চের মধ্যেই লাইসেন্স দেওয়া হবে। তবে তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ নীতি ঘোষণা ও বেতার তরঙ্গের নিলাম পরে হবে। ২০১৬ সালের মধ্যে ফোরজি চালুর ঘোষণা থাকলেও সেটা এখনো সম্ভব হয়নি।
এদিকে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সিম পরিবর্তনের ট্যাক্সের মধ্যে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে গ্রামীণফোন ১ হাজার ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা, বাংলালিংক ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, রবি ২০০৭ সালের মার্চ থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ৪১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এয়ারটেল ৭৮ কোটি ৭৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা কর ফাঁকি দেয় যা এখন তাদের দিতে হবে।
এছাড়াও সিম পরিবর্তনের নামে চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও গ্রামীণফোন সরকারের আরও ৮৮৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।
জুলাই ২০১২ থেকে জুন ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে সিম পরিবর্তনের নামে গ্রামীণফোন ৩৭৮ কোটি ৯৫ লাখ, রবি আজিয়াটা ২৮৫ কোটি ২০ লাখ, বাংলালিংক ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ, এয়ারটেল লিমিটেড ৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এছাড়া স্থান ও স্থাপনা ভাড়াবাবদ গ্রামীণফোন,বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল ৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের রাজস্ব উদ্ধারেও এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট ২০১৬ সালের জুন মাসে মামলা করে। সে মামলাতেও আপিল ট্রাইব্যুনাল এনবিআরের পক্ষে রায় দিয়েছে।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটর্স, বাংলাদেশ (অ্যামটব)-এর মহাসচিব টিআইএম নূরুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে এনবিআর ও অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। আইনগত সমস্যার কারণেও নানা জটিলতা রয়েছে। আমরা আশা করছি, সরকার এর একটা যৌক্তিক সমাধান বের করবে। এছাড়া নিলামের জন্য বিটিআরসি এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি। সবেমাত্র গাইডলাইন করা হয়েছে। তবে সেটাও চূড়ান্ত রূপ পায়নি।
তিনি আরও বলেন, তবে দেশে যদি সরকার একটি বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ চায়, ব্যবসাকে সহজতর করতে চায় তাহলে বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। তাহলে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আরও বিদেশি সংস্থা আসবে। নয়তো এদেশে বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল অপারেটর ফোন কোম্পানিগুলো গ্রাহকের সেবা দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সরকারের প্রযোজ্য রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই নানান টালবাহানা করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়,তারা ভ্যাট ফাঁকির কোনো অর্থই আর পরিশোধ করতে চায় না। ফোরজি লাইসেন্স নিতে হলে তাদেরকে অবশ্যই প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ ১৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। লাইসেন্সের কোনো অর্থ অনাদায়ী থাকলে লাইসেন্সের ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৭
এসজে/জেএম