বকেয়া মজুরি প্রায় দেড় কোটি টাকার সঙ্গে ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণসহ সোমবার (০৭ আগস্ট) শ্রম আদালতে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
তিনি বলেন, বেতন, বোনাস, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি, ট্যাক্স চালানসহ বিভিন্ন পাওনার দাবিতে এসব মামলা দায়ের হয়েছে।
সিটিসেলের ডিরেক্টর মোর্শেদ খান, তার স্ত্রী ও অপারেটরটির ডিরেক্টর নাসরিন খান, ডিরেক্টর আসগর করিম, চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার ও প্রভিডেন্ড ফান্ড ট্রাস্টির সদস্য তারিকুল হাসান, সিটিও এবং প্রভিডেন্ড ফান্ড ট্রাস্টির সদস্য মাহফুজুর রহমান, প্রভিডেন্ট ফান্ড সদস্য নিশাত আলী খান এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড সদস্য এ.বি. সরকারকে বিবাদী করা হয়েছ।
মামলার বাদীরা হলেন- ডেপুটি ম্যানেজার, মার্কেটিং-রেভিনিউ অ্যান্ড সেগমেন্ট মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ আলী; ম্যানেজার, মার্কেট কমিউনিকেশন মোসাদ্দেক মিলন; ম্যানেজার-মার্কেটিং-রেভিনিউ অ্যান্ড সেগমেন্ট কাজী রুহুল কুদ্দুস; হেড অব মার্কেট কমিনিউকেশন, মার্কেটিং এবং ডেপুটি ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং) আবুল কালাম এহসানুল আজাদ।
বকেয়ার দাবিতে সিটিসেল কর্মচারীরা গত ৩ মে আইনি নোটিশ এবং ৯ মে সংবাদ সম্মেলন করেও সিটিসেল কর্তৃপক্ষের কেনো সাড়া পায়নি বলে জানান দু’জন কর্মী।
বকেয়ার দাবিতে আরও মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান কর্মীরা।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পর বিটিআরসি থেকে গত ২৫ জুলাই তরঙ্গ ফিরে পেয়েছে দেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল। আগের দিন ২৪ জুলাই তরঙ্গ বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। তবে আগে থেকেই অকার্যকর ছিল সিটিসেল।
সিটিসেলের কাছে পৌনে পাঁচশ কোটি টাকা পাওনা না পাওয়ায় গত বছরের ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল বিটিআরসি।
এরপর ২৪ অক্টোবর তরঙ্গ বরাদ্দ খুলে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন জানায় সিটিসেল। মোবাইল ফোন অপারেটরটির আইনজীবীরা সেদিন দাবি করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে বিটিআরসি ও এনবিআরের ১৪৪ কোটি টাকা শোধ করা হয়েছে। এরপরও তরঙ্গ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্ত সাপেক্ষে মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের তরঙ্গ বরাদ্দ অবিলম্বে খুলে দেওয়ার আদেশ দেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। ওইদিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করা হলে বিটিআরসিকে ফের তরঙ্গ বরাদ্দ বন্ধ করতেও বলেন সর্বোচ্চ আদালত।
এরপর অর্থ পরিশোধ সত্ত্বেও এ আদেশ না পালনের অভিযোগে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানের আদালত অবমাননার আবেদন জানায় সিটিসেল।
গত বছরের ৩১ জুলাই পৌনে ৫শ’ কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া থাকা সিটিসেল গ্রাহকদের ১৬ আগস্টের মধ্যে বিকল্প সেবা গ্রহণের পরামর্শ দেয় বিটিআরসি, যা পরে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এরপর গত বছরের ১৭ আগস্ট একমাসের শো’কজ নোটিশ দিয়ে সিটিসেলকে চিঠি দেয় বিটিআরসি। তবে ২৩ আগস্ট সিটিসেলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিলো। এর মধ্যে সিটিসেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ আগস্ট বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে সিটিসেলকে দেওয়া শো’কজ নোটিশের সময় পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিটিআরসি।
গত বছরের ২৯ আগস্ট আপিল বিভাগ বিটিআরসি’র ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা পাওনা পরিশোধে সিটিসেলকে দু’মাস সময় দেন। এর মধ্যে প্রথম মাসে তিন ভাগের দুই ভাগ ও দ্বিতীয় মাসে বাকি টাকা দেওয়ার আদেশ দেন।
বিটিআরসি’র একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, আদালতের এসব আদেশেও সম্পূর্ণ পাওনা না দেওয়ায় সরকারের অনুমোদনের পর ২৪ জুলাই কমিশন বৈঠকে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরআগে অপারেটরটির লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের ফাইল বিটিআরসিতে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭/আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা
এমআইএইএইচ/জেডএস