বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নীতিমালাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে’।
তবে চূড়ান্ত করার আগে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বসার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়।
অ্যাপ ভিত্তিক সেবাদাতা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জানায়, যে নীতিমালা করা হচ্ছে তা রাইড শেয়ার বান্ধব নয়। তথাকথিত একটি ট্যাক্সি সার্ভিস মনে করে নীতিমালাটির খসড়া প্রস্তুত করা।
ঢাকায় মোটরসাইকেলে এখন বেশ কয়েকটি অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাইড শেয়ারিং করছে। দিনে ঢাকায় কয়েক হাজার মোটরসাইকেল চালক রাইডারকে শেয়ার করে গন্তব্যে নিচ্ছেন। এটি এখনও ঠিকমতো আন্দাজ করতে পারেননি রাইড শেয়ারিং নীতিমালা প্রণয়ণকারীরা। রাইড শেয়ারিং বলতে বারবার মোটরকারকে বিবেচনা করেছে মন্ত্রণালয় ও খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি।
উবার রাইড শেয়ারিংও করে। তবে ঢাকায় চালু হওয়া উবারের সেবা রাইড শেয়ারিং নয়, অ্যাপসভিত্তিক অন ডিমান্ড ট্যাক্সি সার্ভিস।
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলোর ভাড়াও নির্ধারণ করতে সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন সরকারের নীতিমালা প্রস্তুতকারীরা। তারা ভাড়ার বিষয়ে কোনো ধারণাই দিতে পারেননি খসড়ায়। এক্ষেত্রে ভাড়ার বিষয়টি অমীমাংসিত রেখে নীতিমালা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের সুযোগ তৈরি হবে।
বিআরটিএ’র প্রস্তাবিত খসড়ায় দেখা গেছে, অ্যাপস্ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপক্ষে ২০০টি মোটরযান নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। সর্বোচ্চের কোনো সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এই মুহূর্তে ঢাকায় উবারেরই অ্যাপস্ ব্যবহারকারী গাড়ির সংখ্যাই তিন হাজারেরও বেশি বলে জানা গেছে।
নীতিমালা অনুসারে, অ্যাপস্ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিআরটিএতে দিতে হচ্ছে গাড়িপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা। ২০০ গাড়ির জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা দিলেই ব্যবসার অনুমতি পাবে কোম্পানিগুলো!
কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদনের পর অতিরিক্ত গাড়ি চালালে তার নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির কোনো ব্যবস্থার কথা নেই প্রস্তাবিত নীতিমালায়। এ অবস্থায় রাইড শেয়ারিং সংস্থাগুলো ২০০ গাড়ির অনুমতি নিয়ে কয়েকগুণ বেশি গাড়ি চালালেও তা ধরতে পারবে না বিআরটিএ। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। অন্যদিকে, অননুমোদিত গাড়িতে ভ্রমণে যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে উবারের গাড়ি সংখ্যা কেবল ঢাকাতেই তিন হাজারের বেশি। আর এ সংখ্যা যে ক্রমশ বাড়ছে তা নিজেই জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এক হিসেবে দেখা গেছে, যদি ৩ হাজার উবার কার দিনে ১০টি করে ট্রিপ দেয়, তাহলে ট্রিপ রাইড হয় দিনে ৩০ হাজার। প্রতি রাইডে ২০০ টাকা করে পেলে দিনে ৩০ হাজার রাইড থেকে আয় হবে ৯০ লাখ টাকা। সেখান থেকে ২০ শতাংশ কেটে নেবে উবার। ফলে শুধু একদিনেই ঢাকায় উবারের আয় হবে ১৮ লাখ টাকা।
দেখা গেছে, জন্মস্থান সানফ্রান্সিসকো সিটিতে উবার রাইডপ্রতি টাকা দেয় ওখানকার কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বাংলাদেশে উবার ২০০ গাড়ির অনুমোদন নিয়ে বেশি গাড়ি পরিচালনা করলেও তা ধরার ব্যবস্থা নেই।
নীতিমালার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন গাড়িচালক একটিমাত্র অ্যাপস্ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গাড়ি চালাবেন। অন্য অ্যাপস্ ব্যবহার করতে পারবেন না। যা বিশ্বে প্রচলিত রাইড শেয়ারিং ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
আবার নীতিমালার ৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মোটরগাড়ির চালক কোনো একটি অ্যাপস্ প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধনের ৩ মাসের মধ্যে তা ত্যাগ করে অন্য অ্যাপসে যেতে পারবেন না। এটি এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক ধারণার পরিপন্থী। আবার একটি অ্যাপস্ ছেড়ে যেতে হলে ওই অ্যাপস্ থেকে ‘ডিএনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিতে হবে। যা পৃথিবীর কোনো দেশের রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় নেই।
অনুচ্ছেদ ১ এর ১১ নম্বরে বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারের জন্য একটি গাড়ি এক বছরের পুরনো হতে হবে। অর্থাৎ একজন নতুন গাড়ির মালিককে অ্যাপস্টি ব্যবহার করতে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
এসএ/বিএস