ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা সিম তুলতে অভিযান, পেতে হবে শাস্তি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা সিম তুলতে অভিযান, পেতে হবে শাস্তি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম -ছবি- দীপু মালাকার

ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের বুথ বসিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যোগাযোগ সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।  তবে রোহিঙ্গাদের হাত থেকে নিবন্ধিত সিম তুলতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিবন্ধিত সিম তুলে দেওয়ার জন্য অপারেটর এবং রিটেইলারদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিটিআরসি ভবনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে মোবাইল সিম বিক্রি ও মনিটরিং সংক্রান্ত সভা শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম একথা জানান।
 
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত মানবিক উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, এই মানবিক দিকটি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেন তারা যোগাযোগের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত না হন।


 
তারানা হালিম বলেন, পত্রিকার মাধ্যমে এবং সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন শরণার্থী হ্যান্ডসেট ও সিম ব্যবহার করছেন। আমরা সবাই জানি বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন ছাড়া কোনো সিম অ্যাকটিভ হওয়ার কথা নয়।  আমরা জেনেছি কিছু ব্যক্তি বাড়তি অর্থের লোভে তাদের নিজের বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড সিম অধিক অর্থে শরণার্থীদের কাছে বিক্রি করেছেন; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
 
তিনি বলেন, এ অপতৎপরতা ঠেকাতে যেসব মোবাইল টাওয়ার আছে তার মাধ্যমে ১ জুলাই থেকে কোন কোন মোবাইলের সিম অ্যাকটিভ হয়েছে, কোন কোন রিটেইলার, অপারেটর সেখানে আছে- তাদের তালিকা আমাদের কাছে আছে।  আমরা সেই তালিকা ধরে অগ্রসর হলে বুঝতে পারবো কোন কোন সিম, কতো সংখ্যা আমাদের সামনে পরিষ্কার হবে।  আমরা সেখানে মোবাইল কোর্ট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো।
 
তারানা হালিম বলেন, যারা শরণার্থী হয়ে এসেছেন তাদের এদেশের আইন সঙ্গত পর্যাপ্ত ধারণা না থাকাটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে যারা রিটেইলার এবং যেসব অসাধু মানুষ নিজের সিম তাদের (রোহিঙ্গা) হাতে তুলে দিয়েছেন এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  
 
তিনি বলেন, নিরাপত্তার ইস্যুটিকে কোনোভাবে ছোট করে দেখছি না। এক্ষেত্রে কোনোরকম ব্যত্যয় যদি ঘটে অথবা কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কিংবা কোনো রিটেইলার ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবো। অপারেটরদের বলেছি বিষয়টি যেন মাথায় রাখেন।
 
‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, অনুগ্রহ করে আমাদের বিশাল কর্মযজ্ঞ বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করেছি।  নিয়মতান্ত্রিক একটা পরিবেশে প্রবেশ করেছি। এখানে কোনো রকম ব্যত্যয় আমরা করবো না। যেসব অপারেটরের সিম পাওয়া যাবে তাদের সিমগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করে যে ফাইন আছে তাদেরকে চিঠি দিয়ে আদায় করার ব্যবস্থা করা হবে।
 
সিম তুলতে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং শেষ পর্যায় পর্যন্ত সিমটি কোথা থেকে গেছে সেটি আমরা বের করতে পারবো বলে জানান তারানা হালিম।
 
সভায় জানানো হয়, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ৩০টি সিম জব্দ করা হয়েছে এবং চারজনকে ছয় মাস করে সাজা দেওয়া হয়েছে।
 
সিমের ব্যাপারে রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রচারণা চালানা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
 
রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করে তার ভিত্তিতে পরবর্তীতে সিম দেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
 
যোগাযোগে টেলিটকের বুথ
প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মানবিক জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, তারা কোনোরকম অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, এজন্য এতো বৃহৎ কর্মযজ্ঞ করছে সেখানে টেলিকম সেক্টর ছোট একটি সহযোগিতা অবশ্যই করতে পারবে।
 
‘আমরা আপাতত প্রত্যেকটি শরণার্থী ক্যাম্পে একটি করে বুথ স্থাপন করবো। সেখানে মেবাইল ফোন থাকবে, টেলিটকের সিম থাকবে, সেই মোবাইল ফোন থেকে যার যখন ইচ্ছা কথা বলতে পারবেন, যোগাযোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে হ্যান্ডসেট ও সিমটি বুথে রেখে চলে যাবেন। ’
 
যতোগুলো ক্যাম্প থাকবে ততোগুলো বুথ থাকবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনদিনের মধ্যে শুরু করতে পারবো।  আর আপাতত শুধু লোকাল কলের জন্য এ সুবিধা থাকবে।
 
কথা বলার জন্য ন্যূনতম একটি ট্যারিফ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, খুবই স্বল্প এবং যেটি এখন প্রচলিত আছে তা থেকে অবশ্যই কম হবে।  নিরাপত্তার স্বার্থে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
 
আগামী তিনদিনের মধ্যে অন্তত ক্যাম্পগুলোতে টুজি নেটওয়ার্ক সুনিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, একটি টিম পাঠিয়ে দিয়েছি।  তিনদিন পর সেটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা আমি পরিদর্শন করবো।
 
সভায় বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহুরুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনটিএমসি, র‌্যাব, এনআইডি, মোবাইল অপারেটর এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের ক্যাম্পে টেলিটকের বুথ

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।