বাস্তবেও বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন অনেকদিন হলো। নানা ধাপ পেরিয়ে অনেক দূর এগিয়েও গেছেন তারা।
সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই মানব মস্তিষ্ক বা মানুষের বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটারের মধ্যে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। সংবাদমাধ্যম ডেইলি সানের এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের পার্টিকেল ফিজিক্সের প্রফেসর ব্রায়ান কক্স।
কক্স বলেন, টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি সম্ভব করে তুলতে আর বেশি সময় লাগবে না। তবে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা উল্লেখ করেননি এ ব্রিটিশ পদার্থবিদ।
প্রথমেই প্রশ্ন জাগতে পারে, মানুষের বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটারে স্থানান্তর করা কি আদৌ সম্ভব? কোয়ান্টাম ফিজিক্সের তত্ত্ব অনুযায়ী সত্যিকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা আসলেই সম্ভব। আজকাল মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে সক্ষম। এবং মানুষ তা করছেও। তবে সত্যিকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝানো হয় আরও উন্নত এক বুদ্ধিমত্তা, যা পুরোপুরি মানব মস্তিষ্কের অনুরূপ কাজ করবে।
আর সত্যিকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা সম্ভব হবে টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটির মাধ্যমে। এ পদ্ধতিতে মানব মস্তিষ্কের সব তথ্য ডিজিটাল ডাটায় রূপান্তর করা হবে। তারপর অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটারের মধ্যে তা আপলোড করা হবে, ঠিক যেভাবে আমরা কম্পিউটারের এক ড্রাইভ থেকে অন্য ড্রাইভে ফাইল কপি করি। এভাবে কম্পিউটারের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মানুষ অনন্তকাল বিচরণ করার সুযোগ পাবে। অর্জন করবে অমরত্ব।
প্রফেসর কক্স একা এবিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেননি। গত বছর গুগলের ডিরেক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং রে কার্জওয়েল ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে মানব মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ রূপে কম্পিউটারে স্থানান্তর করে ডিজিটাল অমরত্ব অর্জন সম্ভব হবে।
তিনি আরও দাবি করেন, ২১০০ সালের মধ্যে মানবদেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিস্থাপন করা যাবে।
কিছুদিন আগে টেকনোলজিকাল সিঙ্গুলারিটি নিয়ে মন্তব্য করেন টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও এলন মাস্ক। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম এ উদ্ভাবককে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আমরা কি আসলে কম্পিউটারের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বসবাস করছি কিনা?
জবাবে মাস্ক বলেন, হতেও পারে। মাস্কের এমন অনিশ্চিত জবাবের কারণটিও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, কম্পিউটার গেমস প্রযুক্তি আসলে একপ্রকার ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। আর এ প্রযুক্তি বর্তমানে এতোটাই উন্নত যে, বাস্তব দুনিয়া আর ভার্চুয়াল দুনিয়ার মধ্যে তেমন কোনো ফারাক খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবে বিজ্ঞানীদের সবাই কিন্তু এ প্রযুক্তি নিয়ে এতো বেশি আশাবাদী নন। তেমনই একজন ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক রিচার্ড জোন্স। সম্প্রতি ‘দ্য কনভারসেশন’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি কথিত টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা চিহ্নিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা হয়তো কম্পিউটারের মধ্যে মানব মস্তিষ্কের সব তথ্য স্থানান্তর করতে সক্ষম হতেও পারি; কিন্তু আমরা এটা জানি না এরপর কিভাবে এর কার্যকলাপ পরিচালিত হবে। যন্ত্রের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যপদ্ধতি অপরিবর্তিত রাখতে হলে যন্ত্রের গঠন ও ক্ষমতা পুরোপুরি মানব মস্তিষ্কের অনুরূপ হতে হবে। বাস্তবে যা করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
এছাড়াও, মানব মস্তিষ্ককে বা মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে পুরোপুরিভাবে কম্পিউটারের মধ্যে স্থানান্তর করাকে প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেক পদার্থবিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৭
এনএইচটি/জেএম