কক্সবাজারের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের (এসএমডব্লিউ-৪) একিট রিপিটার পরিবর্তনের জন্য ২৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টা থেকে বিচ্ছিন্ন আছে। এই সময়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল এবং আমদানি-নির্ভর ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, ২৪ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল বিচ্ছিন্ন রাখার হলেও এই সময় আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সেবা বন্ধ করে দেওয়ার প্রথম দিন মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) খুব বেশি সমস্যায় পড়েননি ব্যবহারকারীরা। তবে বুধবার (২৫ অক্টোবর) ৩৭তম বিসিএসের ফল প্রকাশের পর অনেকেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতেই পারেননি।
প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের কক্সবাজারের কলাতলী ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ১০৫ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে দ্বিতীয় রিপিটারটিতে ফল্ট দেখা দেওয়ায় সেটি পরিবর্তনের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
কক্সবাজারের কলাতলী ল্যান্ডিং স্টেশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাখাওয়াত হোসেন বুধবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, আজ রিপিটার পরিবর্তনের কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, বালির নিচে রিপিটারটি পড়ে আছে। আজকেই জাহাজে তুলে রিপিটার পরিবর্তনের কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। আজকের মধ্যে রিপিটার তুলতে না পারলে সময় আরো বাড়তে পারে।
তবে ইন্টারনেট সেবায় দ্বিতীয় দিন খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন ডিজিএম সাখাওয়াত।
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে রাত-দিন। রাত পর্যন্ত রিপিটার তোলার সময়। সাগরে পানির নিচে এক মিটার বালির নিচে রয়েছে রিপিটার। সেখান থেকে উপরে তুলে কাজ করা হবে। সময় বাড়তে পারে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এর আগে মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছিলেন, রাতের মধ্যে রিপিটার যুক্ত করে বুধবার সংযোগ দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার ভোরের মধ্যেই সংযোগ চালু হবে বলে আশা করছি।
এসএমডব্লিউ-৪ থেকে ২৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের সময় পুরো লাইন বন্ধ থাকায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিকল্প সেবা দেওয়া হচ্ছে।
দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলটি ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দীর্ঘ সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকছে।
দেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবল ‘এসএমডব্লিউ-৪’ এ যুক্ত হয় ২০০৫ সালে, যার মাধ্যমে ২৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যায়। এছাড়াও বাংলাদেশ ছয়টি বিকল্প সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চালু হয়েছে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গোড়া আমখোলাপাড়ার এ ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫) আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সাবমেরিন ক্যাবল থেকে সেকেন্ডে ১৫০০ গিগাবাইট (জিবি) গতির ইন্টারনেট পাবে বাংলাদেশ।
দেশে ইন্টারনেটের চাহিদা ৪০০ জিবিপিএসের বেশি। এর মধ্যে ১২০ জিবিপিএস এতোদিন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিএসসিসিএলের মাধ্যমে আসছিল। বাকি ২৮০ জিবিপিএস আইটিসির ব্যান্ডউইডথ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
এসএমডব্লিউ-৪ থেকে সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় এসএমডব্লিউ-৫ থেকে ২০০ ক্যাপাসিটির মধ্যে ১৫০ জিবিপিএস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের প্রকল্প পরিচালক পারভেজ এম আশরাফ।
এছাড়া আপদকালীন হিসেবে ৪০ জিবিপিএস ফ্রান্স থেকে আমদানি করে সেবা দিচ্ছে বিএসসিসিএল।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, এসএমডব্লিউ-৫ সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সার্ভিস চালু হওয়ায় এবং ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) অপারেটরগুলোর মাধ্যমে সার্ভিস চালু থাকায় দেশের ব্যান্ডউইডথ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
এছাড়া বিএসসিসিএলের নিজস্ব আইআইজি থেকে আইপি ট্রানজিট সার্ভিস দিতে বিকল্প পথে এসএমডব্লিউ-৫ ক্যাবলের মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ সংগ্রহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক পারভেজ এম আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, আপদকালীন খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। এই সময়ে সক্ষমতা কতুটুকু সেটাও পরীক্ষা হলো এই সমেয়র মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এমআইএইচ/জেএম