সেজন্য ইন্টারনেট বা ফেসবুক বন্ধ রাখার ইচ্ছা মন্ত্রীর। তাই পরীক্ষার দিন সকাল থেকে ৫/৬ ঘণ্টা করে ফেসবুক বন্ধ রাখার উপায় খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পরামর্শ করেছেন নাহিদ।
ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের বিস্তারের ফলে গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার আগের রাতে বা সকালে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হলেও প্রাথমিক সমাপনী থেকে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এই ফাঁসের ঘটনা ঘটে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ঘুষের কারবারির মধ্যে ইমেজ সংকটে পড়া শিক্ষামন্ত্রী এবার কোমর বেঁধেই প্রশ্ন ফাঁস রুখতে চান। সেজন্য সম্ভব সব কিছুই করতে প্রস্তুত নাহিদ।
এ বিষয়ে নাহিদ বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা খুবই এগ্রেসিভ এবং ডেসপারেট। প্রশ্ন ফাঁসের প্রশ্নে কঠোর হস্তে দমন করা হবে সব কিছু।
এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে জাতীয় মনিটরিং কমিটির সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী দুপুরে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং কয়েকজন কর্মকর্তাদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন।
বিটিআরসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস হয় তা নিয়ে মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিটিআরসি-এর চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ফেসবুক ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং নানা ইন্ডিগেটর দেখানো হয়েছে। কীভাবে এক আইডি থেকে অন্য আইডিতে ট্রান্সফার হয় (প্রশ্ন) বা ব্যবহার হয়- এ বিষয়েও কথা হয়েছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আরও আলোচনা হবে। আর সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে আমরা বাস্তবায়ন করবো।
পরীক্ষা উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জাতীয় কমিটির সভায় তুলে ধরেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জয়নুল বারী।
‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বা প্রশ্নপত্রের সদৃশ্য কোনো কাগজপত্র যাতে প্রচারিত না হয় বা গুজব ছড়ানো না হয় এ বিষয়ে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দাকে নজরদারি রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’
এর মধ্যে পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখার ইঙ্গিতও দিয়েছেন এই অতিরিক্ত সচিব। ‘
তিনি কাগজ দেখে বলছিলেন, পরীক্ষা চলাকালীন প্রতিদিন সকাল ৭টা হতে ১টা পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখার জন্য….।
এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, এ বিষয়টা আমরা পরে আলোচনা করবো।
সভার এক পর্যায়ে সচিব বলেন, নেটে (ইন্টারনেট) যেসব সামাজিক সুবিধাগুলো আছে, যার মাধ্যমে পরীক্ষার সময়, আগে বা পরে প্রশ্নপত্র ভুয়া বা আসল যে কোনো কিছু ফাঁস বা ট্রান্সফার করতে পারে সে বিষয়গুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ করা যায় কিনা- সে বিষয়ে আমরা অনুরোধ করেছি। সেটি আমরা ভিন্নভাবে দেখবো। আজকালের মধ্যে সেটি নিশ্চিত করা হবে।
সচিব বলেন, এ ব্যবস্থার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি সারা দেশের মানুষের অসুবিধার কথাও আছে। সরকার হয়তো সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে উদ্যোগ নেবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা বিধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন।
সভায় তিনি বলেন, সামনে নির্বাচনী বছরে সরকারকে বিব্রত করার জন্য ভুয়া প্রশ্ন বা কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁস করার চেষ্টা করা হতে পারে। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা এ নিয়ম বারবার ভাঙছেন। এ বিষয়টি কঠোরভাবে দেখতে হবে।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৪ দিনে ১৭ দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা এবং বিকেলে ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষা হবে।
তবে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার দিনগুলোতে ফেসবুক বন্ধ রাখা হলে সমালোচনা এড়াতে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
এমআইএইচ/এমএ