মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে নিলামের মাধ্যমে গ্রামীণফোন এবং বাংলালিংককে দুই ব্যান্ডে তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়ার পরে সেবার মান বাড়ানোর তাগাদা দেন মন্ত্রী।
এ সময় বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি, বাংলালিংকের সিইও এরিক অস এবং বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই যে আমরা হ্যান্ডসেটটি নিয়ে ঘুরে বেড়াই, কখন কথা বলতে পারবো তার কোনো নিশ্চয়তা পাই না। কখন কোথায় কল ড্রপ হবে তার গ্যারান্টি নাই। এমনকি আমার মতো একজন মন্ত্রী নিজের অফিসে বসে কথা বলতে পারে না, নিজের বাসায় বসে কথা বলতে পারে না, বাসা থেকে অফিস যেতে আটবার কল ড্রপ হয়। এই অবস্থার কারণ চেয়ারম্যান বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমরা গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াচ্ছি কিন্তু তরঙ্গের পরিমাণ বাড়াচ্ছি না।
তরঙ্গ বরাদ্দের পর মন্ত্রী আরও বলেন, আজকে একটি নতুন যাত্রা হয়েছে। এতদিন শুনে এসেছি কোয়ালিটি দেওয়া যায় না কারণ প্রযুক্তি নিরেক্ষতা নেই। সে কারণে পারি না। কেন পারি না? কারণ, তরঙ্গ নেই। আমরা কিন্তু তরঙ্গের দরজা খুলেছি, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা দিয়েছি। এখন আমাকে যদি ১৬ বছরের যুবক এসে জিজ্ঞেস করে, আমি ফোনে কথা বলতে পারি না কেন? তার জবাব এখন আমার দেওয়া কঠিন। কারণ, আমি কিন্তু আমার দরজা খুলে দিয়েছি। দয়া করে আপনারা যারা অপারেটর তারা যদি আপনাদের বিষয়টা উপলব্ধি করেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।
কড়া ভাষায় মন্ত্রী বলেন, কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যে, মালয়েশিয়ার মতো দেশের চাইতে ১৫ গুণ গ্রাহক থাকবে এবং আপনি তরঙ্গ কিনবেন না, কোয়ালিটি দেবেন না। যেকোন অবস্থাতেই কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা, এ দেশের মানুষ অর্থ দিয়ে আপনাদের সেবা নিতে কার্পণ্য করি না, কিন্তু সেবার ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকবে, এটি গ্রহণযোগ্য না।
আমি একদম স্পস্টভাবে এ বিষয়ের ওপর অপারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই- আমাদের গুণগত মান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সেই অগ্রাধিকার ফুলফিল করতে হবে। যদি ফুলফিল করা না যায় তাহলে আমরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে পারবো না। এমন না যে, আপনারা এ দেশে খয়রাতি সহায়তা দিচ্ছেন। এমন নয়, দেশের জনগণ সেবার বিনিময়ে প্রাপ্য পরিশোধ করছে না। আমার অধিকার আছে আমি যে অর্থ দেব তার বিনিময়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাব, যোগ করেন মোস্তাফা জব্বার।
এক সময় মোবাইলে শুধু কোনরকম কথা বলাই লক্ষ্য ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা টুজি পর্যন্ত আসতে খুব একটা চিন্তাভাবনা করে দেখিনি আদৌ ডাটা ব্যবহার করবো কি করবো না। আমি আশা করি অপারেটররা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করেছেন, ভবিষতে সম্ভবত ভয়েস কলের চাইতে ডাটার ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যাবে। এই জায়গাটির ক্ষেত্রে যে সমস্যা সর্বত্র দেখি সেটি হচ্ছে টাকা দেই কিন্তু গতি পাই না।
তিনি বলেন, আমি বহু ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন শুনে এসেছি ইন্টারনেটের দাম কমান। ধরে নিলাম যে ঠিক আছে আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হার ব্যবহার করি। কিন্তু গতিটা কী পরিমাণ ব্যবহার করি, গতিটা কী পরিমাণ পাই। আমার কাছে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশজুড়ে মানুষের কাছে যদি আমি ইন্টারনেটের গতি পৌঁছাতে পারি তাহলেই কেবলমাত্র ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, তা না হলে হবে না।
ইন্টারনেটের গতির দুটি রাস্তা আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তার যুক্ত করা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা। বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর শতকার ৯৫ ভাগ মানুষ মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন। সে রকম অবস্থায় যদি আমরা মোবাইলে ডাটার গতি না পাই তাহলে বড় ধরনের সংকট।
অপারেটরদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মোবাইল সেবা এমনভাবে পৌঁছাতে চাই যাতে কোনো অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ না পায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমআইএইচ/এমজেএফ