সম্প্রতি রাজশাহীর বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে ভয়ঙ্কর এই তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে।
যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের এটি একটি প্রধান মাধ্যম। তবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই এটা শিশুদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে কিশোর-কিশোরী ও অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন করছে।
অন্যদিকে, তারা ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির প্রতি দিন দিনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। সবার অজান্তে প্রতিদিন রাত জেগে বহু মূল্যবান সময় তারা এর পেছনে ব্যয় করছে।
হাতের স্মার্টফোন থাকায় অনেক শিশু নজরদারিহীন অবস্থায় অনলাইনে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে। যা তাদের সম্ভাব্য বিপদের মাত্রাকে আরও বাড়িয়েছে। এর মধ্যে সাইবার বুলিং' হচ্ছে অনলাইনে কোনো শিশুকে হেয় প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো এবং মানসিক নির্যাতন করা।
শুরুতে কিশোর-কিশোরীরাই কেবল এ ধরনের কাজে জড়িত থাকে ভেবে বুলিং সংজ্ঞায়িত করা হলেও পরে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে স্বনামে বা ফেক আইডির আড়ালে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেও এ ধরনের হীন কাজে জড়িত রয়েছে।
এছাড়া শিশুদের আবেগ-অনুভূতিকে হেনস্থা করা, মানহানি ঘটানো বা অপবাদ দেওয়া, ভয় দেখানো বা ধমকানো এবং সমাজ থেকে বিছিন্ন করে দেওয়ার হুমকির ঘটনা বাড়ছে। অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যৌন হেনস্থা, শিশুদের যৌন পছন্দ সম্পর্কে জানতে চাওয়া, ভয় দেখিয়ে টাকা হাতানোর ঘটনা ঘটছে। যাকে অনলাইনে বাণিজ্যিক শোষণ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে এসিডির প্রোগ্রাম অফিসার হাফিজ উদ্দিন পিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে এই তিনটি ভাগের মধ্যে বর্তমানে ‘সাইবারবুলিং’ বেশি করা হয়। সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর বন্ধু বা পরিচিত লোকরাই এই ঘটনা ঘটায়, তা নয়। অন্যান্য বলপূর্বক আক্রমণের মতো সাইবারবুলিংয়ের ক্ষেত্রেও শিশুদের কূট মন্তব্য, মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়, মানহানি বা লজ্জা দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাকে সমাজচ্যুত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়। সাইবার বুলিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাপে শিশুর মধ্যে হতাশা, লেখাপড়ার প্রতি অনীহা থেকে শুরু করে আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে।
‘তাই বাবা-মাকে শিশুরা ইন্টারনেটে (কম্পিউটার এবং মোবাইলে) কী করছে তা জানা এবং শিশুদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। একবার যদি কোনও ছেলে-মেয়ে শিশু অনলাইনে নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে তার অভিভাবকরা সেই ছেলেকে বা মেয়ে শিশুকেই দোষ দেয় এবং মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করতে বলে কিংবা বন্ধ করতে বাধ্য করে। এটা ঠিক নয়। ’
হাফিজ উদ্দিন পিন্টু বলেন, এভাবে সমস্যার সমাধান করা আদৌ সম্ভব নয়। যখন অভিভাবকদের কাছে ছেলে বা মেয়েরা এই সমস্যার কথা বলবে তখন অভিভাবকদের উচিত সে কথা সময় নিয়ে মন দিয়ে শোনা। কারণ অনেক ছেলে-মেয়েরা এই ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের কাছে কিছু বলতেই চায় না। তাই যদি অভিভাবকরা তাদের শিশুদের সমস্যার সমাধান করতে চায় তাহলে দু’পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের রাস্তা খোলা রাখতে হবে। ছেলে-মেয়েকে এই বলে আশ্বস্ত করা দরকার যে অভিভাবকরা তাদের পাশে রয়েছে ও সমস্যার সমাধান করার জন্য তারা উপযুক্ত পথ খুঁজছেন। তাহলে তাদের রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এসিডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, আমাদের শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করা নয়, বরং নিরাপদ করার জন্য অর্থাৎ শিশুবান্ধব করার জন্য কিছু সতর্কতামূলক ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কী ধরনের সাইটে প্রবেশ করবে এবং কী ধরনের সাইটে প্রবেশ করবে না- সে বিষয়ে শিশুদের পরামর্শ দিতে হবে। প্রয়োজনে নজরদারিতে রাখতে হবে।
‘অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে-তাদের ছেলে-মেয়েরা অনলাইনে কি পোস্ট করছে বা কী কী বিষয় নিয়ে কাজ করছে? তারা কিভাবে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করছে? তাদের তথ্যে প্রবেশ করার ক্ষমতা বা সুযোগ কার আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর অভিভাবকদেরও জানতে হবে। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের ইন্টারনেট তত্ত্বাবধান করা, কোনওভাবেই বন্ধ করা নয়। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে ভালো-মন্দ বুঝিয়ে দিতে হবে। এছাড়া শিশুরা যে ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১৩১ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
এসএস/এএটি