ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আগামী ১০ মে বিকাল ৪টায় (যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইস্টার্ন টাইম জোন) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত অর্থাৎ ১১ মে ভোর ২টা ১২ মিনিট থেকে ৪টা ২২ মিনিটব্যাপী উৎক্ষেপণ হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার উপসচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৮ মে) এ নির্দেশনা সব জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সরাসরি সম্প্রচারের জন্য উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে মাঠ প্রশাসন। চিঠি পেয়ে ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ১০ মে রাত ১০টা হতে তারা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে। সবাইকে এ অনুষ্ঠান উপভোগ করারও অনুরোধ জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ দেশটির ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ করবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ব্যবহার হবে একটি ফ্যালকন-৯ ব্লক ফাইভ রকেট।
গত ৪ মে ফ্লোরিডার কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টারে নতুন এই রকেটের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছে।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও ফ্লোরিডায় ‘ইরমা’ ঝড় এবং প্রতিকূল আবহাওয়া জনিত কারণে পিছিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ মে।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য এইচএসবিসি ব্যাংকের সঙ্গে গতবছর প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার।
ফ্রান্সের থ্যালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়।
সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটবে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে। এই লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকেই ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১-তে করে তিন নভোচারী।
বিটিআরসি জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন লাগবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায়।
বিটিআরসি আরো জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। সরকার আশা করছে, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।
স্পেসএক্স’র ওয়েবসাইটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পুরো উৎক্ষেপণ দেখানো হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ উপলক্ষে সরকারের মন্ত্রী এবং আমলারা ইতোমধ্যে ফ্লোরিডায় পৌঁছেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
এমআইএইচ/এমজেএফ