গত ১২ মে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরাল থেকে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়।
দশম দিনে ২১ মে স্যাটেলাইটটি নিজ কক্ষপথে পৌঁছে যায় বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু-১ প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২২ মে) বিটিআরসি জানায়, নিজস্ব কক্ষপথে মূল/অভিষ্ট অবস্থানের খুব সন্নিকটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। আশা করছি সোমবারের মধ্যে পুরোপুরি নিজের অবস্থানে থাকবে স্যাটেলাইটটি।
বিটিআরসি আরো জানায়, এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ম মাফিক, সময় অনুযায়ী ও সঠিকভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।
স্যাটেলাইট ট্রাকিং একটি ওয়েবসাইটের ইমেজে দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্রাজিল এবং ভেনিজুয়েলার আকাশের কক্ষপথ ধরে এগোচ্ছে। আগের দিন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝ দিয়ে ইকুয়েডরের রাজধানী কিটো শহরের উপর দিয়ে কক্ষপথ বরাবর এগোচ্ছিলো।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্ধারিত ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট (কক্ষপথ)-এ অবস্থান করবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি করে এই কক্ষপথ ক্রয় করেছিল বাংলাদেশ।
কক্ষপথে পৌঁছানোর পর তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
সরকার বলছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। সরকার আশা করছে, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে।
এছাড়া এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) সেবা, স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার এবং ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪০টি সেবা পাওয়া যাবে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় হবে না, সেইসঙ্গে অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটানের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর আয় হবে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বর্তমানে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজের জন্য বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে এক কোটি ৪০ লাখ ডলার (১১৮ কোটি টাকা) গুণতে হয়। স্যাটেলাইট কাজ শুরু করলে বিদেশি স্যাটেলাইট নির্ভরতা কাটিয়ে উঠে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বিদেশি চুক্তি এবং বাকি এক হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে অর্থায়নের জন্য এইচএসবিসি ব্যাংকের সঙ্গে গতবছর প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে বিটিআরসি।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে ফ্রান্সের থ্যালেস এলিনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।
থ্যালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ শেষে পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তরের পর বিশেষ কার্গো বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের কেপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়। ১২ মে রাতে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায়।
থ্যালেসের বিজ্ঞানিরা গ্রাউন্ড স্টেশনে দেশের ১৮ জন তরুণকে নিয়ে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস