রোববার (১০ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যৌথভাবে এ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), আইএসপিএবি এবং ই-ক্যাব।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- বেসিস সভাপতি আলমাস কবীর, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার, আইএসপিএবি সভাপতি এমএ হাকিম, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, বেসিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারহানা রহমান।
বেসিসের বক্তব্য তুলে ধরে সংগঠনের সভাপতি আলমাস কবীর বলেন, অপারেটিং সিস্টেমস, ডাটাবেইজ, ডেভেলপেমেন্ট টুলস এবং সাইবার সিকিউরিটি আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর জন্য বেসিস থেকে প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু ঢালাওভাবে এগুলোর পাশাপাশি কম্পিউটার সফটওয়্যার আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং মূসক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এতে দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যারও বিদেশ থেকে আমদানি উৎসাহিত হবে। ফলে দেশীয় শিল্প মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। সুতরাং সফটওয়্যার আমদানির ওপর শুল্ক ও মূসক যথারীতি ২৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর মূসক সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ করায় ক্ষোভপ্রকাশ করেন আলমাস কবির। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর থেকে সম্পূর্ণরূপে মূসক প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রস্তাব করছি।
ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব প্রকার নাগরিক সেবা সহজলভ্য করতে ইন্টারনেটের ওপর থেকে সম্পূর্ণরূপে ভ্যাট প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট আরোপ ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের পরিপন্থী।
আলমাস কবীর বলেন, ইন্টারনেট সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতি যেমন- মডেম, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার ব্যাটারির ওপর বর্তমানে ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক আরোপিত রয়েছে। যেটা এ শিল্পের প্রসারে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ হার কমিয়ে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়।
ভার্চুয়াল বিজনেস ও অনলাইনে পণ্য বিক্রয় নিয়ে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করতে এ দুটি বিষয়ের সংজ্ঞা স্পষ্টীকরণের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার সংজ্ঞার পরিসর বাড়ানোর দাবি জানান আলমাস কবীর।
অনলাইনে পণ্য বিক্রয় তথা ই-কমার্সের ওপর কোনো ভ্যাট আরোপ না করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও বাজেটে সরকারের প্রস্তাবিত ‘ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আলমাস কবীর এ কার্যক্রমে ইন্ডাস্ট্রিকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান।
আলমাস কবীর বলেন, গতবছরে আইসিটিখাতে রফতানি ৮০০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, এবছরের শেষভাগে তা এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। দেশিয় শিল্পকে রক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, প্রতি বছর এ খাতে দেশে ১০ হাজার কোটি থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হওয়ার ফলে এ খাত থেকে কমবেশি ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগৃহীত হচ্ছে। বাংলাদেশের এ খাতের কর্মকাণ্ডে ছয় লক্ষাধিক জনবল নিয়োজিত।
ব্যবসায়ী পর্যায়ে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের মূসক অব্যাহতি বহাল রাখান দাবি জানিয়ে বলেন, ব্যবসায়ী পর্যায়ে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে মূসক অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির ফলে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের মূল্য প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অন্তরায়।
কম্পিউটারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ইউপিএস/আইপিএস এবং ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য উল্লেখ করে বলেন, শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলে ডিজিটাল ক্লাসরুমে শিক্ষা দেয়া-সহ নিরবচ্ছিন্নভাবে কম্পিউটার চালনায় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। এই শুল্কহার পূর্বের অবস্থায় রাখার অনুরোধ করেন।
আইএসপিএবি সভাপতি হাকিম বলেন, ইন্টারনেটের দাম কমলেও ৬০ শতাংশ মেইনটেন্যান্স খরচ হয়। ফাইবার অপটিক্যাল এর জন্য যে মডেম ব্যভহার করা হয় ভ্যাট অব্যাহত আছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার সংজ্ঞার মধ্যে আইএসপি শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৮
এমআইএইচ/ওএইচ/