বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্টের ইংরেজি শিক্ষা উদ্যোগ বিবিসি জানালা এ বছর ‘ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশন’ পুরস্কার পেয়েছে। বিবিসি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদপত্র, মোবাইল, টেলিভিশন, ওয়েবসাইট ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে নতুন ধারায় শিক্ষাপদ্ধতি প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব তৈরির করায় বিবিসি জানালাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
কার্যকর পদ্ধতির বিস্তার ও শিক্ষার ভবিষ্যত নির্মাণে সহায়ক প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নিতে এ পুরস্কার দেওয়া বিবিসি জানালাকে এ বছর ওয়াইজ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী মোট ছয়টির মধ্যে অন্যতম।
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ডিএফআইডি) আওতাভুক্ত ইউকেএইডয়ের অর্থায়নে ‘ইংলিশ ইন অ্যাকশন’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে ইংরেজিতে দক্ষ করার উদ্দেশ্যে বিবিসি জানালা পরিচালিত হচ্ছে।
ওয়াইজ অ্যাওয়ার্ড কাতার ফাউন্ডেশনের একটি প্রয়াস। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সমাজ উন্নয়নে ২০০৯ সাল থেকে কাতারের রাণী ও কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ মোযা বিনতে নাসের এর সহায়তায় এ পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়।
এ মাধ্যমে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় যুগান্তকারী শিক্ষা প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করে এগুলোকে এগিয়ে নিতে এ ফাউন্ডেশন সহায়তা দিয়ে থাকে। তারা বিশ্বাস করে, এভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা এ সব চমৎকার প্রকল্প ও শিক্ষাচর্চাগুলো সম্পর্কে অবগত হবেন। এভাবে সারাবিশ্বেই শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
ওয়াইজ অ্যাওয়ার্ডে র জন্য প্রতি বছর ৬টি প্রকল্প নির্বাচিত হয়। এগুলো সত্যিকার অর্থেই শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকরী প্রভাব ফেলতে সক্ষম। প্রথম থেকে এ পর্যন্ত পুরস্কারের জন্য ১১৬টি দেশের ৯৮টি প্রকল্প অংশ নিয়েছে।
এর মধ্য থেকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পায় ১৮টি। এ তালিকা থেকে চূড়ান্ত পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয় বিবিসি জানালা। তৃতীয় বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট ফর এডুকেশনের চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লাহ বিন আলী আল থানি জানান, ওয়াইজের লক্ষ্য শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা। এগুলো এগিয়ে নিতে নতুন ধরনের সমাধানের পথ তৈরি করা।
এরই মধ্যে নির্বাচিত পদ্ধতিগুলো তাদের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। এ প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করা ও এগুলোর মাধ্যমে পরিবর্তনের গতিকে তরান্বিত করতে ওয়াইজের মতো উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সঠিক সময়।
এগুলো শুনতে প্রতি মিনিটে মাত্র ৫০ পয়সা খরচ হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিবিসি জানালার প্রশিক্ষণপাঠ শুনতে এক কোটি ৫০ লাখের বেশি মোবাইল কল এসেছে। আর ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি অডিও প্রশিক্ষণ মোবাইল ইন্টারনেট সাইট থেকে ডাউনলোড হয়।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বিবিসি জানালা ওয়েবসাইট থেকে অডিও এবং প্রশিক্ষণপাঠ ডাউনলোড করতে পারবেন বিনামূল্যে। বিবিসি জানালা কয়েকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানও প্রচার করেছে। এখানে ইংরেজি শেখার বিভিন্ন আয়োজন ছিল তরুণদের জন্য ‘বিবিসি বাজ’, ধারাবাহিক নাটক ‘বিশ্বাস’, ইংরেজি শেখার গেইম শো ‘মজায় মজায় শেখা’।
এ ছাড়াও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিবিসি জানালার ‘প্রয়োজনীয় ইংরেজি’ প্রশিক্ষণের দুটি সিডি। গবেষণা সূত্র মতে, ২ কোটি ৬০ লাখের বেশি লোক অন্তত একবার বিবিসি জানালার প্রশিক্ষণে অংশ নেন। সাত লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোক নিয়মিত বিবিসি জানালা ব্যবহার করেন। আর এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর শার্লট ইমবার্ট জানান, বিশ্বায়নের এ যুগে ভাষাগত দক্ষতাই হচ্ছে চাকরির বাজারে নিজেকে প্রমাণ করার অন্যতম মাধ্যম। ভাষা দক্ষতা জীবন মানোন্নয়নেরও চাবিকাঠি।
বিবিসি জানালা মানসম্পন্ন ও সহজসাধ্য শিক্ষার সুযোগ এনে দিচ্ছে লাখ লাখ মানুষের কাছে। আমরা আশা করি ওয়াইজ্ অ্যাওয়ার্ডের মতো এমন সম্মানজনক পুরস্কার বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আরও বেশি বেশি কাজের সুযোগ এনে দিবে।
বিবিসি জানালার মাধ্যমে এ দেশের দরিদ্র মানুষ খুব সহজেই মানসম্পন্ন ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। তাদের জীবনমানের উন্নতি হবে। এ ছাড়াও চাকরির বাজারে নিজেকে প্রমাণ করে বিশ্বঅর্থনীতিতে ভূমিকা রাখারও সুযোগ পাবেন।
৬টি সহায়ক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় ওয়াইজ অ্যাওয়ার্ড উদ্যোগটি পরিচালিত হয়। এজেন্সি ইউনিভার্সিটিয়েরি ডি লা ফ্রাঙ্কোফোনি (এইউএফ), দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি (এসিইউ), দ্য ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন (আইআইই), দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস (আইএইউপি), রেন্ড করপোরেশন ও ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল এবং সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো)।
বাংলাদেশ সময় ১৪১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১১