ঢাকা: রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে ৫ দিনব্যাপী বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড । মেলায় বিভিন্ন প্রযুক্তির পণ্যের বর্ণিল পসরা নিয়ে বিশ্বের ও দেশের নামকরা ব্রান্ডগুলো তাদের স্টল সাজিয়েছে।
তবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ল্যাপটপ আর নোটবুকের প্রতিই দর্শকদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। ল্যাপটপ নিয়ে মেলায় আগত তরুণদের আগ্রহটা সবচেয়ে বেশি। তবে আগ্রহের ঘাটতি নেই বড়দের মধ্যেও।
অনেকের মতে, ল্যাপটপ এখন তারুণ্যের ক্রেজ। সহজে বহনযোগ্যতা, দরকারি সব কাজ করার সুবিধা এবং ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে ল্যাপটপ সব শ্রেণীর মানুষকেই আকৃষ্ট করছে। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন মডেলের নেটবুক, নোটবুক ও ল্যাপটপ এনেছে কোম্পানিগুলো।
এখানে সহজে এবং সুলভে সর্বশেষ সংস্করণের ল্যাপটপ, ট্যাবলেট পিসি ও সমজাতীয় পণ্যসহ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার এবং বিশেষায়িত তথপ্রযুক্তি কেনাকাটার সুযোগ থাকছে।
মেলায় গেলে অনুভব করা যায়, দিন যতো যাচ্ছে মানুষ ততোই তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আর তথ্যপ্রযুক্তির এই মেলায় তাই তরুণদেরই উপস্থিতি বেশি।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী হৃদি ল্যাপটপ কেনার জন্য মিরপুর থেকে এসেছে। ল্যাপটপের প্রতি আগ্রহ কেন এই প্রশ্নের উত্তরে হৃদি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ যুগে ল্যাপটপ বা নেটবুক ছাড়া চলা যেন কল্পনাই করা যায় না। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনও জায়গার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হলে নেটওয়ার্কিং ছাড়া সম্ভব নয়। আর এ নেটওয়ার্কিং এর কাজটি সহজ করে তোলে ইন্টারনেট মডেম এবং ল্যাপটপ বা নেটবুক। ’
ল্যাপটপ কিনতে আসা ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা তাবিউর আলম বলেন, ‘ল্যাপটপের প্রতি টান বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রত্যেককেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। এখন তথ্যপ্রযুক্তির সময়। মানুষের কর্মকাণ্ড এবং জীবনযাত্রার প্রায় অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট। তাই ভাবছি, ৫০ হাজার টাকার মধ্যেই একটি ল্যাপটপ কিনবো। ’
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইনের ছাত্র রাফেল বলেন, ‘পত্রিকায় এই আইসিটি মেলার কথা জানতে পেরে বন্ধুদের নিয়ে হাজির হয়েছি। মেলায় ল্যাপটপের বিশেষ মূল্যছাড়সহ আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রীর ব্যবস্থা থাকায় আমার দুই বন্ধুও ল্যাপটপ কিনেছে। কারণ, আমরা ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবে ল্যাপটপ বেছে নিয়েছি। ’
বিজয়ের স্টলে দেখা গেলো, ১৮ হাজার টাকায় এস-৩০ লাল ও কালো রংয়ের ল্যাপটপ দেখতে ও কিনতেই তরুণদের বেশি ভিড় জমেছে।
বিজয় ল্যাপটপের পর্দার আকার ১০.২ ইঞ্চি, এতে আছে এটম ৬৪ বিট প্রসেসর, যার গতি ১.৮৩ গিগাহার্টজ। ৬ সেলের ব্যাটারিতে প্রায় ৫ ঘণ্টার ব্যাকআপসহ এতে আছে ১ জিবি র্যাম, ১৬০ জিবি হার্ডডিস্ক, ১.৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ইউএসবি ও ভিজিএ পোর্ট, ওয়াইফাই, হেডফোন-মাইক্রোফোন পোর্ট ও ল্যান পোর্ট।
বিজয় বাংলা কিবোর্ড লেআউট মুদ্রিত বিজয় ল্যাপটপের ওয়ারেন্টি এক বছর। মেলায় এ ল্যাপটপের সঙ্গে ক্যারিব্যাগ ও বিজয় বায়ান্নো সফটওয়্যার ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।
আর ২০ হাজার টাকায় এল-৭০ (কালো রং) বিজয় ল্যাপটপের পর্দার আকার ১৩.২ ইঞ্চি। এতে আছে এটম ৬৪ বিট প্রসেসর, যার গতি ১.৬৬ গিগাহার্টজ। অন্যান্য সুবিধা একই।
আসুস ইই পিসি নেটবুক ২৭ হাজার টাকায় নেটবুক দিচ্ছে। বিক্রয়োত্তর সেবাসহ থাকছে বিভিন্ন মডেলের ন্যূনতম ২৭ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার মধ্যে আসুসের ইপিসি, নেটবুক এবং ল্যাপটপ।
এবারের মেলা উপলক্ষে আসুস ৩২ হাজার ৫০০ টাকায় নতুন মডেলের ল্যাপটপ এনেছে। ২ জিবি র্যাম, ৫০০ জিবি হার্ডডিস্ক, ডিভিডি রোমসহ সব ধরনের মাল্টিমিডিয়া সুবিধা আছে এ নতুন পণ্যে।
সব পণ্যের সাথে একটি টি শার্ট ও পান্ডা ইন্টারনেট সিকিউরিটি ২০১২ ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও আসুস প্যাভিলিয়নে আরও থাকছে গেমিং মাদারবোর্ড, গ্রাফিক কার্ড, এলইডি মনিটর, ব্লুরে ডিভিডি রাইটার এবং এক্সটারনাল ডিভিডি রাইটার।
ডেলের স্টলে আছে ন্যূনতম ৪৬ থেকে সর্বোচ্চ ৯৪ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ। এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবাতো থাকছেই।
স্যামসাং ব্রান্ড সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ সুবিধাযুক্ত এন-২১০ মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি করছে । এ মেলায় স্যামসাং এন-১৪৮, আর-৪২৮, আর-৪৩৯ মডেলের আকর্ষণীয় ল্যাপটপ বিক্রি করছে।
স্যামসাং ব্রান্ডের প্রতিটি ল্যাপটপ ক্রয়ে থাকছে এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা।
বিজয় স্টলের এক্সিকিউটিভ কাওসার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ল্যাপটপ জীবনযাপনের আবশ্যিক উপকরণ। আর কর্মজীবীদের তো কথাই নেই। আমরা চাহিদা মোতাবেক ল্যাপটপ আর বিভিন্ন সঢটওঢ্যার ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ’
‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা’স্লাগান নিয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির আয়োজনে ২১ নভেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির এ বর্ণিল প্রদর্শনী ‘বিসিএসআইসিটি ওয়ার্ল্ড ২০১১’। এই প্রদর্শনী চলবে ২৫ নভেম্বর রাত পর্যন্ত।
দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও সম্প্রসারণ, তৃণমূল পর্যায়ে তা পৌঁছানো ও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এ মেলার আয়োজনে সহযোগিতা করছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সহসভাপতি ও বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ডের আহ্বায়ক কাজী আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এবারের প্রদর্শনীর সমান্তরালে একটি ওয়েব মেলার আয়োজন করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবায় বিশেষ পরিবর্তন এসেছে। বহনযোগ্য কম্পিউটার এবং এ জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে।
তিনি জানান, এবারের প্রদর্শনীতে ৫০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুট স্থানজুড়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে রয়েছে ৭০টি স্টল এবং ৩০টি প্যাভিলিয়ন। তথ্যপ্রযুক্তিকে দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। ’
মেলা আয়োজনের যাবতীয় তথ্য ওয়েবে পাওয়া যাবে। শুধু তথ্য নয়, মেলার যাবতীয় পণ্য ক্রয়েরও ব্যবস্থা থাকবে ওয়েবে।
এছাড়াও মেলা সম্পর্কে www.bcsictworld.com.bd এই সাইটে বিস্তারিত জানা যাবে।
মেলায় থাকছে উৎসবমুখর ইভেন্ট কর্নার, যাতে প্রতিদিনই থাকছে সেলিব্রেটি শো, গুণীজন সংবর্ধনা, কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রোডাক্ট শো, কৌতুক পরিবেশনা ইত্যাদি নানা আয়োজন।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এবারই এ মেলায় আয়োজন করা হচ্ছে ডিজিটাল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এসব ছাড়াও আছে সেমিনার, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ফ্রি ইন্টারনেট ও গেমিং, র্যাফেল ড্র ইত্যাদি নানা আয়োজন।
মেলা প্রতিদিন খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে ২০ টাকা। স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য মেলার প্রবেশমূল্য লাগবে না।
বাংলাদেশ সময় ১৯২০ ঘন্টা, নভেম্বর ২২, ২০১১