তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) আওতাধীন দেশের শীর্ষস্থানীয় তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়াং বাংলা’র সহযোগিতায় এই উদ্যোগটি আয়োজিত হবে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ারে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আয়োজনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট এনজয় করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি জনগণের ৭০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। প্রায় সাড়ে চার কোটি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছে। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থান দরকার আছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই তারুণ্যের সংকট হচ্ছে। কিন্তু শুধু চাকরি দিয়ে বিপুল সংখ্যক এই তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান করা যাবে না।
স্টার্টআপ সংস্কৃতি এবং প্রতিযোগিতার সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ফলাফল আছে উল্লেখ করে পলক বলেন, আমরা আমাদের তরুণদের একদিনের জন্য আহার দিতে চাই না। আমরা আইসিটি ডিভিশন থেকে তরুণদের জন্য সারাজীবনের আহারের সংস্থান তৈরি করতে পারে এমন কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। আমরা শুধু ‘জব সিকার’ তরুণ-তরুণী চাই না বরং ‘জব গিভার’ তরুণ-তরুণী চাই। আগের আসরে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২১০০টি আবেদন পেয়েছিলাম। সেখান থেকে ৩০টি এবং সর্বশেষ ১০টি চূড়ান্ত করে তাদের সাভারে শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে বুট ক্যাম্পে আমন্ত্রণ জানাই। প্রতিটি স্টার্টাআপকে আইডিয়া ফান্ড থেকে অর্থায়ন করি, মেন্টরিং করি। তাদের স্বপ্নপূরণের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২০২১ সালের মধ্যে এক হাজার স্টার্টাআপ আইডিয়া প্রজেক্ট থেকে দেশকে উপহার দেবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমাদের দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলোই আমাদের এক একটি সম্ভাবনা। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন-২০২১, ২০৩০ ও ২০৪১ অর্জন করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ কর্মসূচির উদ্দেশ্য হল দেশের অগ্রগতি এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে যাদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা আছে এমন তরুণ উদ্যোক্তা খুঁজে বের করা। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। এছাড়া দেশের ১০০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত বুথের মাধ্যমেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’র দ্বিতীয় অধ্যায়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে এর সমাপনী আয়োজন আগামী অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ক্যাম্পেইন ভেন্যু থেকে ৭৫টি প্রকল্প বাছাই করা হবে। সেখান থেকে বিজয়ী ১০টি স্টার্টআপকে অনুদান দেওয়া হবে ১০ লাখ টাকা করে। সেসঙ্গে শীর্ষ ৩০-এ থাকা অপর ২০ স্টার্টআপও রানারআপ হিসেবে আইডিয়া প্রকল্প থেকে গ্রুমিং ও বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবে। প্রশিক্ষণ শেষে স্টার্টআপগুলো প্রস্তুত হলে তাদের জন্যও অনুদান দেবে আইডিয়া প্রকল্প। সারাদেশ থেকে ২৫টি ভেন্যু নির্বাচিত করা হয়েছে এই প্রতিযোগিতার জন্য।
‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’র দ্বিতীয় অধ্যায়ে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য ভিজিট করতে হবে- www.s2s.startupbangladesh.gov.bd এছাড়া নিবন্ধনের লিংকটি স্টার্টআপ বাংলাদেশের ওয়েবসাইটেও (www.startupbangladesh.gov.bd ) পাওয়া যাবে।
এর আগে গত মে ২০১৯- এ ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’র প্রথম অধ্যায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়। সেখানে মোট ৩০টি স্টার্টআপ আইডিয়া প্রকল্পের অফিসিয়াল ‘সিলেকশন কমিটি’র মুখোমুখি হয়। সবশেষে বিজয়ী হিসেবে সেরা ১০টি স্টার্টআপকে ১০ লাখ টাকা করে সরাসরি অনুদান দেওয়া হয়। পাশাপাশি বাকি ২০টি স্টার্টআপকে গ্রুমিংয়ের জন্য নির্বাচিত হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমির পরিচালক সৈয়দ মজিবুল হক, স্টুডেন্ট টু স্টার্টাআপের প্রধান সমন্বয়ক আশিকুর রহমান রূপক, সিআরইয়ের সহযোগী সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদসহ বিভিন্ন আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
এসএইচএস/এএটি