ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

এপিকটার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় ‘কৃষ্টি বাই বাগডুম’

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৯
এপিকটার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় ‘কৃষ্টি বাই বাগডুম’

হা লং, ভিয়েতনাম থেকে: ভিয়েতনামের হা লং শহরে সদ্য সমাপ্ত এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যাওয়ার্ড-২০১৯-এ (এপিকটা) বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছে ৩২টি দল। এদের মধ্যে ইনক্লুষন (জেনারেল) ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল দেশীয় ই-কমার্স সাইট বাগডুম’র প্রকল্প ‘কৃষ্টি বাই বাগডুম’।

প্রথমবারের এপিকটায় অংশ নিয়ে কোনো পদক বা সনদ না পেলেও বাগডুমের ঝুলিতে জমেছে দারুণ সব অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় হস্তশিল্প খাতের উন্নয়নে অবদান রাখতে চায় বাগডুম।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) হা লং শহরেই বাংলানিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন বাগডুমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিরাজুল হক। সাক্ষাৎকার নেন বাংলানিউজের প্রতিবেদক শাওন সোলায়মান।  

এপিকটায় বাগডুমের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে জানবো, তার আগে ‘কৃষ্টি বাই বাগডুম’ নিয়ে জানতে চাই।

‘কৃষ্টি’ বাগডুমের সিগনেচার ফিচার বলতে পারেন। আমাদের দেশের আনাচেকানাচে হস্তশিল্পের দারুণ সব কাজ হয়। দক্ষ কারিগরদের বেশিরভাগই নারী, তারা পোশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করে। সেগুলোকেই আমরা ই-কমার্সে নিয়ে এসেছি। গত বছরের ডিসেম্বরে বাগডুম কৃষ্টি নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তা ও কারিগরদের জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছি আমরা। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি মার্কেটে নিয়ে এসে তাদের ক্ষমতায়নে কিছু ভূমিকা রাখার চেষ্টা করা।  

ই- কমার্সে এমন পণ্য কেন? 

সাধারণত আমাদের দেশে ই-কমার্সে ইলেকট্রনিক পণ্য বা গ্যাজেটস বেশি দেখা যায়। একসময় বাগডুমেও এগুলো পাওয়া যেত। তবে আমরা এখন আর সেসব পণ্য বিক্রি করছি না। আমরা দেখলাম হস্তশিল্পের পণ্যগুলো নিয়ে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা ও প্রস্তুতকারকদের এসব পণ্য নিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেভাবে উল্লেখযোগ্য হারে কার্যক্রম নেই। তাদের পণ্য হয়তো বিদেশে যাচ্ছে, ইউরোপ আমেরিকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরাই আবার বিদেশে গিয়ে সেগুলো চড়া মূল্যে কিনছি। কিন্তু দেশে তাদের মার্কেট সেভাবে নেই। তাই দেশেই একটি মার্কেটপ্লেস তৈরির উদ্দেশ্যে আমাদের এই উদ্যোগ।  

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, ই-কমার্সে বিক্রির জন্য আমাদের দেশে অনেকেই মানহীন পণ্য নিয়ে কাজ করছে। এমনকি বিদেশ থেকে মানহীন পণ্য এনে বিক্রি করছে। অথচ আমাদের দেশেই দারুণ সব পণ্যের সংগ্রহ আছে। সেগুলোকে আমরা তুলে ধরতে চাই। আমরা স্থানীয় ই-কমার্সগুলো নিজেদের স্থানীয় পণ্য, সংস্কৃতি, সর্বোপরি নারী উদ্যোক্তাদের সেভাবে তুলে ধরছি না। অথচ তাদের তুলে ধরলে শুধু ই-কমার্স না, সার্বিকভাবে দেশের পুরো অর্থনীতিই ভালো করবে।  

গ্রামীণ সমাজ, বিশেষ করে নারীরা কি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারছে? তারা কি আগ্রহী হচ্ছে?  

প্রথমত তারা যেন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে তার জন্য আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেই। প্রায় ২০টি কর্মশালায় আমরা প্রায় চার হাজার নারী উদ্যোক্তা ও কারিগরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। উল্লেখ করা দরকার যে, কৃষ্টি প্রকল্পে বাগডুম কোনো নারী উদ্যোক্তার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে না। তারাই তাদের পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। এর ফলে অনলাইনে হস্তশিল্পের পণ্যগুলো তুলনামূলক কম দামে পাচ্ছে গ্রাহকরা। বেশি অর্ডার আসছে উদ্যোক্তাদের।  

অন্যদিকে বাগডুমের বেশ বড় আকারের লয়্যাল গ্রাহক শ্রেণী আছে। গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তারা বাগডুমে আসার মাধ্যমে আমাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারছেন। ধরেন, আপনি রংপুরের একটি হস্তশিল্প পণ্য ঢাকায় বসে কিনছেন অন্য কোনো বড় শো-রুমে। আপনি কিন্তু প্রকৃত উদ্যোক্তা সম্পর্কে কিছুই জানলেন না। সেই উদ্যোক্তা হয়ত রংপুর অঞ্চলের আশেপাশে বিখ্যাত। আমরা তাদেরকে বৃহৎ গ্রাহক শ্রেণীর মাঝে প্রমোট করার চেষ্টা করছি।  

কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

উদ্যোক্তা এবং গ্রাহক দুই দিক থেকেই সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে গ্রাহকরা প্রচুর অর্ডার দিচ্ছেন, কিন্তু বেশিরভাগ প্রস্তুতকারক স্টক ইস্যুর কারণে অনেক অর্ডার নিতে পারে না। তাদের বেশিরভাগই একসঙ্গে অল্প সংখ্যক পণ্য প্রস্তুতে সক্ষম। তাদের জন্য আমরা আর্থিক সহায়তার একটি প্যাকেজ নিয়ে এসেছি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে গেলে হয় চড়া সুদে কম অংকের লোন নিতে হয় ব্যাংক থেকে অথবা অল্প সুদে মোটা অংকের লোন নিতে হয়। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের থেকেও কম সুদে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকাও লোন দিচ্ছি, যেন তারা নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে পারে। তারপরও মাসে আমাদের প্রায় তিন লাখ টাকার সেল জেনারেট হয়। পোশাক ছাড়াও ইউনিক কিছু পণ্য আছে আমাদের। যেমন- রিসাইকেল শাড়ি থেকে তৈরি এক ধরনের ব্যাগ আছে, সম্পূর্ণ হাতে এক ধরনের সাবান তৈরি করেন কয়েকজন নারী। যারা স্বাভাবিক জীবনে আসার আগে তারা যৌনকর্মী ছিলেন।  

এবার এপিকটার প্রসঙ্গে আসি। এখানে পিচিং কেমন ছিল আপনাদের?

আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই প্রকল্প উপস্থাপন করেছিলাম। নারীর ক্ষমতায়ন ও ডিজিটালাইজেশন এ দুটি বিষয়কে আমরা একত্রিত করতে চাই। আমাদের সেই বিশ্বাস ও লক্ষ্যকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা পুরস্কার অর্জন করতে পারিনি। আমার বিশ্বাস খুবই অল্প ব্যবধানে আমরা মেরিট বা চ্যাম্পিয়ানশিপ মিস করেছি।  

বিচারকদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

আমাদের ক্যাটাগরিতে যারা বিচারক ছিলেন তারা খুবই অভিজ্ঞ এবং নিজেদের জায়গায় অন্যতম সেরা। তাদের প্রতিক্রিয়া খুবই ইতিবাচক। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনিও সেখানে ছিলেন। কিছুটা দেখেছেন। তারা আমাদের প্রকল্পের প্রশংসায় বলেছেন যে, হস্তশিল্পের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে নামকরা। সেই বিষয়টি আমরা তুলে এনেছি, এটা তাদের ভালো লেগেছে। তারা বলেছেন, আঞ্চলিক ও কমিউনিটি প্রেক্ষাপটে আমাদের ব্যবসার দারুণ সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে।  

তবুও পুরস্কার আসেনি। মন খারাপ লাগছে না?

কিছুটা তো লাগছেই। তবে এই ভেবেই আনন্দ বেশি পাচ্ছি যে, বাগডুম এমন একটি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের নারীদের, বিশেষ করে গ্রামীণ নারী ও তাদের সংস্কৃতি, মেধা ও সর্বোপরি তাদের ক্ষমতায়নের প্রতিনিধিত্ব করেছে। পুরস্কার না পেলেও দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে বাগডুমের। বাগডুমের সিইও হিসেবে আমার জন্যও। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশে গিয়ে আমরা দারুণ কিছু করবো বলে আশা রাখছি।

. বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৯
এসএইচএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।