জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সংযুক্ত অন্তত ৭০টি সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আপডেট করা হয়নি এসব ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য। ফলে বাস্তবতার সঙ্গে মিলছে না ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য।
জয়পুরহাট জেলা পুলিশের তথ্য বাতায়নে প্রবেশ করে দেখা যায়, এই সাইটটি শেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৬ মে। বর্তমান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির ২০১৯ সালের ২০ জুন যোগদান করেন আবার একই তারিখে রশীদুল হাসান বদলি হয়ে অন্য জেলায় চলে গেলেও তার নাম এখনো রয়ে গেছে। একই সাইটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বেলায়েত হোসেনের নাম ও ছবি থাকলেও তিনি ২০১৮ সালের ৩০ মে রাজশাহী রেঞ্জ অফিসে পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি হয়েছেন এবং তার পরিবর্তে ২০১৮ সালের ২৪ জুন এসেছিলেন উজ্জল কুমার রায়। সর্বশেষ তিনিও ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর বদলি হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি হিসেবে চলে যায় এবং বর্তমানে এই পদে চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) হিসেবে যোগদান করেছেন তরিকুল ইসলাম। কিন্তু এসবের কোনো কিছুই হালনাগাদ নেই জেলা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই বাতায়নে। ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সর্বসাধারণ।
বিজিবি’র ওয়েব সাইটটি শেষ কবে হালনাগাদ কবে করা হয়েছে, সেটিও উল্লেখ করা নেই সেখানে। এই সাইটের কর্মকর্তাবৃন্দের অপশনে কোনো কর্মকর্তা নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বর নেই।
জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের ওয়েব সাইটটির শেষ হাল নাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ১৪ মে। সেখানে জেলা কমান্ডেন্ট হিসেবে জানে আলম সুফিয়ানের নাম ও ছবি রয়েছে। অথচ তিনি বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পর তার পদে সঞ্জয় চৌধুরী দায়িত্ব পালন শেষে তিনিও অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। অতপর সর্বশেষ এই পদে আশরাফুজ্জামান দায়িত্ব পালন করলেও আগের সেই জানে আলমের নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বর এখনো তাদের ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর নাম র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের সাইটটিও সর্বশেষ হাল নাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর। এখানে ছবি ছাড়া শুধুমাত্র একজন কোম্পানি অধিনায়কের মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ওয়েব সাইট শেষ হাল নাগাদ ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর দেখানো হলেও কর্মকর্তাদের তালিকাটি রয়েছে এলোমেলো অবস্থায়। সেখানে প্রথমেই দেখানো হয়েছে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল কবীরের নাম, পরে দেখানো হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামানের নাম। আবার সেখানেই তৃতীয় অবস্থানে দেখানো হয়েছে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল কবিরের নাম।
সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম মাধ্যম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাইটটি শেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম সঠিকভাবেই বিন্যাস করা হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জেলা কালচারাল অফিসার মাহতাব হোসেনের ছবি ও মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করা নেই। জেলা ক্রীড়া অফিস তাদের সাইট শেষ হাল নাগাদ করেছে ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই, জেলা বিএডিসি তাদের সাইট শেষ হাল নাগাদ করেছে ২০১৮ সালের ১৪ মে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের’ ওয়েব সাইটটি শেষ হালনাগাদ দেখানো হয়েছে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর। এখানে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ডা. এফএম মুছা আল-মানছুরের নাম দেখানো হলেও অনেক আগেই এই হাসপাতালে যোগদান করেছেন ডা. আবুল হোসেন। এছাড়াও ডা. পারভীন আক্তার, ডা. সাইদুর রহমান, ডা. শহীদ হোসেনসহ অধিকাংশ ডাক্তার অবসর কিংবা বদলি জনিত কারণে অন্য হাসপাতালে যোগদান করলেও এখনো তাদের ছবি, নাম ও মোবাইল নম্বর শোভা পাচ্ছে।
জেলার সর্ব সাধারণদের তথ্য দিয়ে যে অফিসটি সব সময়ই আপডেট রাখার কথা সেটি হলো ‘তথ্য অফিস’। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ অফিসটির সাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, তারা শেষ হাল নাগাদ করেছেন ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের সাইট শেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৮ মে। বিটিসিএলের শেষ হাল নাগাদ হয়েছে ২০১৮ সালের ৭ মে, রেলওয়ের শেষ হালনাগাদ রয়েছে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর। এছাড়াও ডাক বিভাগের সাইটটিতে হাল নাগাদের কোনো তারিখই উল্লেখ নেই।
২০১৯ সালের ৭ আগস্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের শেষ হালনাগাদ দেখানো হলেও এই সাইটটিতে উপ-পরিচালক হিসেবে দেখানো হয়েছে সেলিম শাহ্কে। যিনি অনেক আগেই অন্যত্র বদলি হয়ে চাকরি করছেন। জেলা নির্বাচন অফিসের ওয়েব সাইটটি হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই। জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয়ের শেষ হালনাগাদ হয়েছে চলতি বছরের ১ অক্টোবর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের তথ্য বাতায়ন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্প হতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে একাধিক বার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এরপরও এসব অফিসের সাইটগুলো আপডেট করা হচ্ছে না। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং সহজেই তথ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জয়পুরহাটবাসী।
জেলা প্রশাসনের আইসিটি বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার মোনাববর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, জয়পুরহাটের সবকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটগুলো হালনাগাদ করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দেওয়া হবে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের হলরুমে ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক এক সেমিনারে জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র রায় ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ইশরাত ফারজানা বলেন-, এটি খুবই হতাশাজনক তথ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে বাস করেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের ওয়েব সাইটগুলো হালনাগাদ না করেন, তাহলে জনগণ প্রত্যাশা অনুযায়ী তথ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯
এনটি