বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, জিপি সিঙ্গাপুরের একটি আইন সংস্থার মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ দিয়েছে আরবিট্রেশনে (সালিশ) যাওয়ার জন্য।
‘আমি মনে করি যে এটি খুব দুঃখজনক, বাংলাদেশে ব্যবসা করবে একটি প্রতিষ্ঠান, সেই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ দিয়ে তারপরে তারা আরবিট্রেশনের জন্য চাপ দেবে, এটা বোধহয় কোনোভাবে আমাদের কাছে খুব সহজে গ্রহণ করার মতো অবস্থা না’।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমরা এটা বুঝি, ব্যবসা যদি কেউ করে তাহলে ব্যবসার ক্ষেত্রে তাদের নানা ধরনের সমস্যা থাকবে। আমাদের দায়িত্ব ফ্যাসিলেটেড করার, আমরা তাদের ফ্যাসিলেটেড করব।
নোটিশের বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কী না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবহিত করা রয়েছে। সবাই বিষয়টা জানেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এ উকিল নোটিশ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এর কারণটা হচ্ছে তারা যে জায়গায় চাচ্ছে সে জায়গাটা হচ্ছে আরবিট্রেশন যেন করা হয়। আরবিট্রেশন করার জায়গায় আমরা উম্মুক্ত রয়েছি। বাংলাদেশের আদালতে মামলা করে বসে থাকে, আদালতের বাইরে আরবিট্রেশন করার সুযোগ নাই।
‘আদালত যদি হুকুম দেয় আরবিট্রেশন করার তাহলে করতে পারবো। যে দেশে বিজনেস করে সে দেশের আইন-আদালত অমান্য করে দুনিয়ার কোনো জায়গায় গিয়ে অন্য বিচার পাওয়ার সম্ভবনা নাই। আমরা সঠিক পথে রয়েছি, আদালত তার দৃষ্টিভঙ্গি চমৎকারভাবে করেছে। ’
গ্রামীণফোন আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কোনো উদ্যেগ নিচ্ছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, তারা এরকম একটি ধারণা দিয়েছে যদি আরবিট্রেশন না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবেই। তবে আমার যেটা অবজারভেশন, বাংলাদেশের আদালতে হেরে গিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে কিছু একটা করা যাবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। দিনের শেষে অংকটা সহজ, ব্যবসাটা বাংলাদেশেই করতে হবে, বাংলাদেশের আইন কানুন না মেনে আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা করে দেবে না।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমরা সহানুভুতিশীল, আলোচায় বসতে ইচ্ছুক, আমরা সমস্যার সমাধানের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর মধ্যে থেকে কেউ জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন করে আমরা সেটি আর করতে পারি না।
গ্রামীণফোনের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা মেনে চলা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রবি ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে মামলা তুলে নিতে চায়। আমরা তো মামলায় যাইনি, ওরা যদি মামলো তুলে নিলে আলোচনায় বসে তাহলে কোনো আপত্তি নেই। তবে মামলা চলাকালীন অবস্থায় আলোচনা করতে পারি না কারণ সেটি আদালত অবমাননা হয়ে যাবে। তবে জিপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারবো না, যতক্ষণ আদালতের রায় তারা না মানে।
টেলিনরের পরিচালক (কমিউনিক্যাশনস, এশিয়া) ক্যাথরিন স্ট্যাং লন্ড এক বিবৃতিতে জানান, এ প্রক্রিয়াটিতে গ্রামীণফোন কোনো পক্ষ নয়। বাংলাদেশে নিজেদের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা টেলিনর গ্রপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অডিট আপত্তির বিষয়টি স্বচ্ছভাবে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে একটি গঠনমূলক সমাধানের লক্ষে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আলোচনার আহ্বান জানাতেই এ নোটিশ দেয় টেলিনর। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি রয়েছে। টেলিনর গ্রপ বিশ্বাস করে একটি স্বচ্ছ ও গঠনমূলক সমাধান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ এবং অপারেটর একযোগে কাজ করতে সম্মত হওয়াই এ অডিট বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম পন্থা।
গ্রামীণফোনের কাছে অডিট আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। পাওনা চেয়ে গত এপ্রিল মাসে চিঠি দেয় বিটিআরসি। এরপর তারা আদালতে যায়। অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে অপারেটর দুটির সঙ্গে বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি। বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয় রবি ও গ্রামীণফোন। আদালত গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে রাষ্ট্রপতি উকিল নোটিশ দিলো গ্রামীণফোন।
অনুষ্ঠানে টিআরএনবি সভাপতি মুজিব মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার শিপুসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এমআইএইচ/এসএইচ