ঢাকা: দেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডকে (বিএসসিসিএল) অনুমতি দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বুধবার বিএসসিসিএলকে অনুমতি দেয়।
সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, এখন তাদের কাজ হবে এটি স্থাপনের জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করা।
বর্তমানে দেশের একমাত্র সাবমেরিন ক্যাবলটির দায়িত্বে রয়েছে সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। সিম-ইউ-ফোর এখন বাংলাদেশের একমাত্র সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিটি পরিচালনা করছে। এখন যেটি স্থাপন করা হচ্ছে তা হবে সিম-ইউ-ফাইভ।
মনোয়ার হোসেন জানান, একমাত্র সাবমেরিন ক্যাবলটি কাটা পড়লে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। নতুন ক্যাবলটি স্থাপন করা হলে এ ধরনের সঙ্কট দূর হওয়ার পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবা দেওয়া সহজ হবে।
টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশের বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের জন্য সাউথ-ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন-৫ (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫) সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়ামে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৪শ` কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫-এ যোগ দিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে, রাইট শেয়ার ইস্যু অথবা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ সংগ্রহ করার প্রস্তাব দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তথ্য ও প্রযুক্তির মহাসড়কে বর্তমানে একটি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে যুক্ত।
এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ নামের এ কনসোর্টিয়াম কেবলটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার এবং বিএসসিসিএল বাংলাদেশের পক্ষে এ কেবল কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিত্ব করছে।
কেবলটির মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের প্রায় ১৩টি দেশের ১৫টি ল্যান্ডিং পয়েন্টে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ লাভ করছে।
সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ভারতবর্ষ ও মধ্যপ্রাচ্য হয়ে পশ্চিম ইউরোপে সংযোগকারী অন্য একটি সাবমেরিন কেবল এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ স্থাপনের জন্য একটি কনসোর্টিয়াম গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে কনসোর্টিয়ামে সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে গত ১৪ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে একটি বৈঠক হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কনসোর্টিয়াম কেবলটি প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার পর্যন্ত সংযুক্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সংযোগের জন্য ব্রাঞ্চের দৈর্ঘ্য আগের চেয়ে অনেক কম হবে।
এ কারণে ব্রাঞ্চ খরচ কম হওয়া ছাড়াও এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা চার্জ কম হবে এবং ব্রাঞ্চের কেবল কাটা পড়ার আশঙ্কা কমে আসবে।
বৈঠকে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ এর সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে বিএসসিসিএলকে আমন্ত্রণ জানানো হলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সে বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫-এর প্রয়োজনীয়তা, কনসোর্টিয়ামের সম্ভাব্য কাঠামো, প্রকল্পের ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরের বৈঠকে প্রস্তাবিত এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ সাবমেরিন কেবলে সর্বাধুনিক ১০০জি টেকনোলজি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, কেনিয়া, ওমান, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর, ফ্রান্স ও অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে হংকং ও জাপান প্রভৃতি দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এরই মধ্যে ৬টি কোম্পানি এ কনসোর্টিয়ামে অংশগ্রহণের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১